দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বৃহস্পতিবার বিকেলে জম্মু কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফের কনভয়ের উপর ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনার পরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে বলেছিলেন, জওয়ানদের বলিদান বিফলে যাবে না। তার পরই শুক্রবার সকালে দশটায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠক ডেকে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। যা কিনা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির ওই বৈঠকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, বিদেশ মন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, ছাড়াও তিন বাহিনীর প্রধান ও গোয়েন্দা কর্তারাও থাকবেন প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে জম্মু কাশ্মীরে উরিতে সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছিল। জইশ ই মহম্মদের চার জন সশস্ত্র সন্ত্রাসবাদীর হামলায় সে বার প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৭ জন ভারতীয় সেনা জওয়ান। বৃহস্পতিবার পুলওয়ামার ঘটনা তার থেকে অনেক বড়। মৃতের সংখ্যাও অনেক বেশি। উরির ঘটনার ১১ দিনের মাথায় ভারত-পাক নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে সীমান্তের ওপারে জঙ্গি ঘাঁটিতে আক্রমণ চালিয়েছিল ভারতীয় সেনা। যে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে পরবর্তী কালে অনেক বিতর্ক হয়েছিল। প্রশ্ন হল, এ বার তা হলে,কী ভাবে জবাব দিতে চাইবেন মোদী?

কাশ্মীরের অবন্তীপুরায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় শহিদের সংখ্যা ৪২। সিআরপিএফ কনভয়ে হামলায় ৪২ জন সিআরপিএফ জওয়ান নিহত হয়েছেন বলে খবর। বৃহস্পতিবার দুপুরে এই হামলার পর থেকে ক্রমশ বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যা। সন্ধেয় জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের তরফে শহিদের সংখ্যা ৪২ বলে জানানো হয়েছে। ভয়ঙ্কর এই হামলার ঘটনায় গর্জে উঠেছে গোটা দেশ। ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাজনাথ সিং সহ দেশের সমস্ত রাজনেতারা।

এক নজরে কে কি বললেন-

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়- পুলওয়ামায় সিআরপিএফ জওয়ানদের শহিদ হওয়ার খবরে অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের সাহসী জওয়ানদের কুর্নিশ জানাই। তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা। তাঁদের পাশে আছি আমরা। যাঁরা আহত হয়েছেন প্রার্থনা করছি তাঁরা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।’‌

পিডিপি সুপ্রিমো মেহবুবা মুফতি- প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর টুইটারে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে জঙ্গিদের পাগল বলে তুলনা করেছেন তিনি। মুফতি জানিয়েছেন, সন্ত্রাসের নিন্দা করার কোনও ভাষা নেই। আর কতগুলি প্রাণ গেলে এই পাগলামির শেষ হবে।’‌

জম্মু–কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক; উপত্যকার বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। জৈশের দায় স্বীকারেই প্রমাণিত সীমান্তপারের মদত রয়েছে এতে।

পাশাপাশি এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা সহ একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। এই দুঃসময়ে বিরোধিতা ভুলে সবাইকে একজোট হওয়ার আবেদন করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

পুলওয়ামার নাশকতার তীব্র নিন্দা করে শহিদ জওয়ানদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা দলের তরফে হামলার তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, ‘‌শহিদ জওয়ানদের পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা। তবে মোদী সরকারের গত পাঁচ বছরে এটা ১৮তম বড় হামলা। ৫৬ ইঞ্চির ছাতি আর কবে জবাব দেবেন।’‌

পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজনৈতিক শিবিরের অনেকেরই ধারণা ছিল উনিশের লোকসভা ভোটের আগে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধাতে পারে মোদী সরকার। যাতে জাতীয়তাবাদের পরিবেশ তৈরি হয় দেশ জুড়ে। এবং তার ফায়দা বিজেপি পায়। বৃহস্পতিবার যে রকম ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে পুলওয়ামায়, তেমনই ২০০৯ সালের ভোটের আগে মুম্বই সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছিল। মনমোহন সরকার অবশ্য তখন যুদ্ধের পথে যায়নি। তবে বিদেশ মন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক স্তরে কূটনৈতিক চালে পাকিস্তানের উপর চাপ তৈরি করতে সফল হয়েছিল ফলে শুক্রবার সকালে সরকার সবদিক ভেবে কী সিদ্ধান্ত নেয় এখন সেদিকেই নজর সকলের৷

পুলওয়ামার হামলায় শহিদের তালিকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here