দেশের সময়, ওয়েবডেস্কঃ ডায়মন্ড হারবারের শিরাকোলে বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনা নিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রকে দিল্লিতে ডেকে পাঠাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সূত্রের খবর আগামী ১৪ ডিসেম্বর দিল্লি যেতে বলা হয়েছে মুখ্যসচিব এবং ডিজিকে।
হাইলাইটস
- বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনায় ৭ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
- এ দিকে, এই ঘটনায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের রিপোর্ট গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
- মন্ত্রকের তরফে রাজ্যের মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবকে তলব করা হয়েছে।
যদিও এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমের-তরফে ডিজি এবং মুখ্যসচিব এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা কোনও জবাব দেননি। পরে তাঁরা কিছু জানালে তা এই প্রতিবেদনে আপডেট করা হবে।
উস্তির শিরাকোল ও ফলতার দোস্তিপুরে নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনার ৭জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উস্তি থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে ৪ জনকে। ফলতা থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে ৩ জনকে। ধৃতদের শুক্রবার দুপুরে ডায়মন্ড হারবার এসিজেএম আদালতে তোলা হয়।
বুধবার ভবানীপুরে গৃহসম্পর্ক যাত্রায় গিয়েছিলেন নাড্ডা। সেখানেও তাঁর কনভয়ের মধ্যে কিছু লোক ঢুকে পড়ে বিক্ষোভ দেখানোর চেষ্টা করে। তা নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লেখেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তারপর জানা গিয়েছিল, নিরাপত্তার ঢিলেঢালা ভাব নিয়ে রাজ্যের কাছে কৈফিয়ৎ চাওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন অমিত শাহ। কয়েক ঘণ্টা পরই ডায়মন্ড হারবারে হামলার ঘটনা ঘটে।
জানা গিয়েছে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারে ভেঙে পড়েছে বলে শুক্রবার সাত সকালে দিল্লিতে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। তারপরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তলব করল ডিজি এবং মুখ্যসচিবকে।
এর আগেও অনেক ঘটনায় রাজ্যের জবাবদিহি চেয়ে পাঠিয়েছিল কেন্দ্র। তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বিস্তর চাপানউতোরও হয়েছে। তবে এবার সরাসরি মুখ্যসচিব ও ডিজিকে দিল্লি তলবকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকে।
গত দেড় বছরে অনেকবার রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যপাল অভিযোগ করেছেন, তিনি রিপোর্ট চাইলে সরকার তা দেয় না। অফিসারদের ডাকলে যান না। পাল্টা সরকারের তরফে বলা হয়েছে, সমস্ত রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো একবার বলেছিলেন, “সারাক্ষণ রিপোর্ট পাঠাব না কাজ করব?” তবে এখন দেখার ১৪ ডিসেম্বর দিল্লির ডাকে সাড়া দিয়ে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বীরেন্দ্র যান কি না!
এ দিকে, এ দিনই বিকাল ৩ টেয় বারুইপুরে বিজেপির দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা পূর্ব জেলা কমিটির অফিসে দলের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করতে যাচ্ছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয়-সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। পরে চম্পাহাটিতে ডায়মন্ড হারবার যাওয়ার পথে আক্রান্ত এক দলীয় নেতাকে দেখতে তাঁর বাড়িতে যাওয়ার কথা রয়েছে তাঁদের। চলতি মাসেই পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। সূত্রের খবর, ১৯ ও ২০ ডিসেম্বর হতে পারে এই সফর।
ডায়মন্ড হারবারের সুলতানপুরে লাইট হাউসের মাঠে নাড্ডার দলীয় বৈঠক ঘিরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই উত্তেজনার পারদ চড়ছিল। বেলা বাড়তেই কেন্দ্রীয় কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দিকে দিকে তৃণমূলের বিক্ষোভ মিছিলের জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ডায়মন্ড হারবার শহর, সরিষাহাট, উস্তির শিরাকোল ও কুলপির হটুগঞ্জ এলাকা। হাজার হাজার মানুষের ভিড়ের চাপে বেসামাল হয়ে পড়ে পুলিশ। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ১১৭ জাতীয় সড়ক। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ শিরাকোল মোড়ে জনতার ক্ষোভের মুখে পড়ে নাড্ডার কনভয়। কনভয়ের গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়লে ইট-পাটকেল ছুড়ে একাধিক গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। ইটের আঘাতে আহত হন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, কৈলাস বিজয়বর্গীয়-সহ একাধিক কর্মী-সমর্থক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগে পুলিশ উত্তেজিত জনতার উপর লাঠিচার্জ করে কনভয় পার করে দেয়। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের বাধা উপেক্ষা করে নাড্ডার কনভয় ফের দুপুর ১টা নাগাদ সরিষাহাটেও একইরকম পরিস্থিতির মুখে পড়ে। প্রত্যেক জায়গাতেই তৃণমূলের বিক্ষোভ মিছিল থেকে কনভয়ের গাড়ি লক্ষ করে ইট ছোড়া হয় বলে বিজেপির অভিযোগ।
লাইট হাউস মাঠে পৌঁছে নাড্ডা বলেন, ‘মা দুর্গার কৃপায় এখানে এসে পৌঁছতে পেরেছি।’ সেখানেই দিলীপ ঘোষ বলে, ‘গতকাল থেকেই বলছি, আমাদের উপর আক্রমণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জায়গায় জায়গায় লোক জুটিয়ে রাস্তা বন্ধ করে গণহত্যার চক্রান্ত করা হয়েছিল।’ আর এক নেতা রাহুল সিনহার অভিযোগ, বাইক, বাস ও বিভিন্ন গাড়ি মিলিয়ে অন্তত ৫০টা গাড়ি ভাঙা হয়েছে। হামলায় আহত কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘আমার গাড়ি লক্ষ করে ইট ছোড়া হয়েছে। আমার হাতে আঘাত লেগেছে, মুকুলদারও লেগেছে। নাড্ডাজির গাড়ি বুলেটপ্রুফ ছিল বলে উনি কোনও রকমে রক্ষা পেয়েছেন।’ ঘটনার পরে রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে টুইট করে বলা হয়, ‘বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা ডায়মন্ড হারবারে সভাস্থলে নিরাপদে পৌঁছেছেন। তাঁর কনভয়ে কিছু হয়নি। ফলতার দেবীপুরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু মানুষ বিক্ষিপ্তভাবে তাঁর কনভয়ের অনেক পিছনে থাকা গাড়িতে ইট ছোড়ে। প্রত্যেকে নিরাপদেই আছেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। ঠিক কী হয়েছিল, জানতে তদন্ত চলছে।’