নাগরিকত্ব আইন-এর জের! ভারত ছেড়ে বাংলাদেশে ফেরা শুরু,গ্রেফতার ৩০০, আবার ভারতে ফিরতে চায় অনেকে

0
986

রমন ভৌমিক,দিল্লি,দেশের সময় : এনআরসি ও সিএএ বিতর্কে গোটা দেশ উত্তপ্ত হলেও ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি করছেন বিএসএফ ও বিজিবি দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আধিকারিকেরা। যদিও ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢোকার পরে কিছু মানুষকে সম্প্রতি আটক করেছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা। বিজিবি সূত্রের খবর, এই প্রবণতা আগে কখনও দেখা যায়নি। গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে চারদিন ধরে দিল্লিতে দুই বাহিনীর বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে দিল্লিতে দুই বাহিনীর বৈঠকের শেষে বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর ডিজি সাফিনুল ইসলাম জানান, ‘‘ভারত থেকে অবৈধ ভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের পরে গত এক বছরে প্রায় ৩০০ জনকে আটক করা হয়েছে।

বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না-পারলেও এদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা গিয়েছে, এরা সকলেই বাংলাদেশের নাগরিক। জীবিকার সন্ধানে বা অন্য কারণে এরা বৈধ কাগজ ছাড়া ভারতে গিয়েছিলেন।’’ সূত্রের দাবি, ৩০০ জন ধরা পড়লেও কাগজপত্র ছাড়া ভারতে যাওয়া বহু মানুষ বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামে ফিরে এসেছেন বলে খবর মিলেছে।
এনআরসি বা সিএএ-র ফলে সীমান্তে অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত সমস্যা বাড়তে পারে কি না, সে বিষয়ে সাফিনুল জানান, এনআরসি ও সিএএ একেবারেই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সীমান্তে অনুপ্রবেশ রোধের প্রশ্নে দু’দেশের বাহিনী সমন্বয় রেখে কাজ করে যাচ্ছে।
অসমে এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ ও তার পরেই সংসদে সিএএ পাশ হওয়ায় প্রতিবাদ-আন্দোলন শুরু হয়েছে গোটা দেশ জুড়ে। বিরোধীদের অভিযোগ ওই আইন এনে নিশানা বানানো হচ্ছে মুসলিমদের।

রাজ্য বিজেপির দাবি, সরকারের ওই পদক্ষেপ দেখে বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীরা ভারত ছাড়তে শুরু করেছেন। অনেকেই চেষ্টা করছেন পশ্চিমবঙ্গ বা উত্তর-পূর্বের সীমান্ত দিয়ে নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার। যদিও সীমান্তে সে ধাঁচের কোনও প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়নি বলে দাবি করেন বিজিবি-র ডিজি। পুশব্যাকও হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

সোমবার পেট্রাপোল সীমান্তে গিয়ে দেখা গেল বৈধ কাগজপত্র (ভিসা- পাশপোর্ট) নিয়ে দু-পারের মানুষ যাতায়াত করছেন ৷ দেখে বোঝার উপায় নেই এদের মধ্যে কতজন ওপার বাংলায় থেকে যাবেন আবার এপার বাংলায় চলে আসছেন একেবারে, কারণ এই পথে শুধু মাত্র বৈধ যাত্রীদেরই যাতায়াত স্বীকৃত৷

তবে বাংলাদেশ থেকে আসা এক যাত্রী অনিমা রানি বিশ্বাস জানান তাঁর বাপের বাড়ি ভারতে তিনি বাংলাদেশ থেকে এবারে এসেছেন যদি ভারতে নাগরিকত্ব পান তাহলে আর বাংলাদেশে ফিরবেন না৷

এমনই কথা শোনা গেল অন্তত: ১০ জনের মুখে। আবার অন্য দিকে সইদুল রিপণ ইসলামের কথায় ভারতে অনেক আত্মীয় রয়েছেন তাদের কাছেই ছিলাম অনেক দিন এবার ফিরে যাচ্ছি কারণ আমি বাংলাদেশী,ভারতে থাকার কোন প্রশ্ন নেই৷

তবে স্থানীয় সূত্রের খবর, এনআরসি ও সিএএ বিতর্কে গোটা দেশ উত্তপ্ত হওয়ার সাথে সাথেই শ’য়ে -শ’য়ে বাংলাদেশীরা সুযোগ বুঝে দিনে ও রাতের অন্ধকারে দালালদের মাধ্যমে কাঁটা -তাঁর পেরিয়ে চলে যাচ্ছেন ওপার বাংলায়৷ যদিও অনুপ্রবেশ রুখতে দু-পারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তীক্ষ্ম নজর রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে।

বিএসএফের ডিরেক্টর জেনারেল বিবেক জোহরি বলেছেন, ‘‘আমরা প্রতিনিয়ত সীমান্তে কড়া নজর রাখছি। ওপারে আটক এই লোকজনেরা হয় ভারতে তাদের কোনও আত্মীয়ের কাছে এসেছিলেন, অথবা কর্মসূত্রে। এমনও অনেকে আছেন যারা কোনও উদ্দেশ্য ছাড়াই সীমান্ত পেরিয়ে দেশে ঢুকেছিলেন।’’

বিএসএফের ডিজির কথায়, দুই দেশের সীমান্তরক্ষীবাহিনীর তৎপরতায় সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মাদক ও জাল নোটের কারবারে লাগাম টানা হয়েছে। জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে দেশজুড়ে অশান্তির আবহে সীমান্তে নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। এই ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য কথা বলা হয়েছে বিজিবির ১১টি দলের সঙ্গে।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে আসা সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি, খ্রিস্টান শরণার্থীরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন। যার অর্থ ওই তিন দেশ থেকে আসা মুসলিম শরণার্থীরা নাগরিকত্ব পাবেন না। তার কারণ হিসাবে মোদী সরকারের বক্তব্য, ওই তিনটি দেশের মধ্যে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান হল মুসলিম রাষ্ট্র। আর বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও মুসলিমরাই সেখানে সংখ্যাগুরু।

ফলে ধর্মীয় কারণে সেখানে মুসলিমদের উপর কোনও নিগ্রহ হয় না। কিন্তু সেখানে সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও পার্সিদের বছরের পর বছর ধরে নিগ্রহ করা হচ্ছে। সুতরাং, তাঁরাই পাবেন ভারতের নাগরিকত্ব।

সিএএ ও এনআরসি নিয়ে অসন্তুষ্ট এ দেশের সংখ্যালঘুরা। কারণ, তাঁদের আশঙ্কা যাঁরা বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তান থেকে শরণার্থী হিসাবে এদেশে এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেবে সরকার। তাঁদের আর ভোটাধিকার থাকবে না। সরকারি চাকরি থেকে শুরু করে কোনও সুবিধা তাঁরা পাবেন না।

যদিও এই আশঙ্কা অমূলক বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর টুইটার বার্তায় বলেছেন, ‘‘নাগরিকত্ব আইনের জন্য কোনও নাগরিকের কোনও ক্ষতি হবে না। তা তিনি যে ধর্মেরই হোন না কেন। এই আইন নিয়ে দেশের কোনও নাগরিকের কোনও উদ্বেগের কারণ নেই। দেশের বাইরে বছরের পর বছর ধরে যে মানুষগুলো নিগৃহীত হয়েছেন, যাঁদের ভারত ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, তাঁদের জন্যই এই আইন।’’

Previous articleপৌষমেলায় শ্লীলতাহানি’! বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের তির
Next articleপ্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আগুন, চাঞ্চল্য

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here