দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আজ শুক্রবারই গঠন করা হবে আফগানিস্তানের নতুন তালিবান সরকার। সূত্রের খবর, জুম্মাবার অর্থাৎ শুক্রবারের নমাজ শেষ করেই নতুন সরকারের ঘোষণা করবে তালিবান।
১৫ অগস্ট কাবুল দখলের মাঝধ্যমে গোটা আফগানিস্তানকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসে তালিবান। ৯৬-র দশক পরে ফের একবার আফগানিস্তানের শাসনভার উঠছে তালিবানের হাতে। যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও সরকার গঠন নিয়ে ওতটাও চিন্তা করেনি তালিবান। সেই কারণেই মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে ঘন ঘন বৈঠকে বসেন শীর্ষ নেতারা। নতুন সরকারের মনোভাব কী হবে, কারা মন্ত্রিসভায় জায়গা পাবে ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনার পরই অবশেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে তালিবান।
কাবুলে এসেছেন তালিবানের সহ প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা বরাদর। অন্যদিকে, তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লাহ ওমারের ছেলে মোল্লাহ মোহাম্মদ ইয়াকুবও কাুন্দাহার থেকে রাজধানীতে উপস্থিত হয়েছেন। গত সপ্তাহেই তালিবান সূত্রে জানানো হয়, নয়া সরকারের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে আইন ব্যবস্থা, অন্তর্বর্তী সুরক্ষা, প্রতিরক্ষা, বিদেশমন্ত্রক, অর্থ, তথ্যমন্ত্রকে। এছাড়াও কাবুলকে ঘিরে একটি বিশেষ মন্ত্রক গঠনের পরিকল্পনা চলছে।
গতকালই স্থানীয় সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজের তরফে জানানো হয়, সরকার গঠনের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গিয়েছে। এক-দু’দিনের মধ্যেই নতুন সরকারের ঘোষণা করা হবে। সূত্রের খবর, আফগানিস্তানে তালিবানের নতুন সরকারের নেতৃত্ব দেবেন হিবাতুল্লাহ আখুনজাদা । তাঁর অধীনেই থাকবে নয়া আফগান প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী।
আরও জানা গিয়েছে, তালিবান সরকারের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন মোল্লা আবদুল গনি বরাদর। আফগানিস্তান দখলের পর থেকেই শীর্ষ নেতা হিসাবে তাঁর নাম উঠে এসেছিল। তবে ইরান মডেল অনুসরণ করেই দেশের সুপ্রিম লিডার হিসেবে থাকবেন তালিবান প্রধান হাবিতুল্লাহ আখুন্দজাদা।
তালিবান মুখপাত্র জানিয়েছেন, মোট ২৬ জনের মন্ত্রিসভা তৈরি হতে চলেছে। নতুন সরকারে হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজুদ্দিন হাক্কানি ও মোল্লা ওমরের ছেলে মহম্মদ ইয়াকুবকে বড় কোনও দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। তালিব যোদ্ধাদেরও সরকারি সেনায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি। ক্যাবিনেট গঠনের পরই সদস্যরা মিলে সংবিধান ও জাতীয় পতাকা চূড়ান্ত করবেন।
এদিকে, দেশের অর্থনীতি নিয়ে চিন্তায় পড়েছে তালিবানরা। যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তান এতদিন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে অনুদান ও আর্থিক সাহায্য পেয়েছে। নতুন তালিব সরকারকে যদি এই সাহায্য না করা হয়, তবে দেশ চালানো কঠিন হয়ে যাবে, এ কথা বুঝতে পেরেছে তালিবান। সমস্ত দেশের উদ্ধারকার্য শেষ হওয়ার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে কাবুলের হামিদ কারজ়াই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সেই বিমানবন্দর দ্রুত সচল করাই প্রধান লক্ষ্য তালিবানের।
কাতারের তরফে ইতিমধ্যেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সে দেশের বিদেশমন্ত্রী শেখ মহম্মদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি জানিয়েছেন, তালিবানকে যথাসম্ভব সাহায্য করা হচ্ছে এবং বিমানবন্দর সচল করতে টার্কি থেকে ইতিমধ্যেই টেকনিক্যাল সাপোর্টের টিম পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে, অর্থসঙ্কটও দেখা দিয়েছে আফগানিস্তানে। আফগা সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক বিদেশে যে প্রায় ১০০ কোটির টাকার সম্পত্তি জমা রেখেছে, তাও হাসিল করা তালিব সরকারের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তালিবানরা সমস্ত ব্যাঙ্ক খোলার নির্দেশ দিলেও টাকা কোথা থেকে জোগানো হবে, তা নিয়ে এখনও খুব একটা স্পষ্ট ধারণা নেই, এমনটাই তালিব সূত্রে খবর।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “কাবুল বিমানবন্দর চালু করার এবং স্থল সীমানা পেরিয়ে বিদেশী নাগরিক এবং আফগানদের জন্য নিরাপদ প্রবেশের সম্ভাবনাই বেশি।” তালিবানদের শীর্ষ নেতা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা নতুন গভর্নিং কাউন্সিলের চূড়ান্ত ক্ষমতা পাবেন বলেই সম্ভাবনা। তাঁর নীচে থাকবেন একজন প্রেসিডেন্ট।
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে হাজার হাজার পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। আফগানিস্তানের অর্থের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তালিবানদের নিযুক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ব্যাংকগুলিকে আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন যে তারা সম্পূর্ণরূপে কার্যকরি আর্থিক ব্যবস্থা চায়। কিন্তু কীভাবে তা এখনও ধোঁয়াশায়।