নমনীয় কেন্দ্র তবু বরফ গলল না শনিবারও, কৃষকদের সঙ্গে সরকারের ফের বৈঠক বুধবার

0
317

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ‘ইয়েস অর নো’! কৃষি আইন প্রত্যাহার করা হবে কি হবে না? শনিবার সরকারের সঙ্গে বৈঠক চলার সময় এমনই প্ল্যাকার্ড তুলে ধরলেন কৃষকদের প্রতিনিধিরা। একসময় অধৈর্য হয়ে তাঁরা বলেছিলেন, মিটিং-এর মাঝপথে ওয়াক আউট করবেন। সরকার এদিন তাঁদের লিখিত প্রস্তাব দেয়। একটি সূত্রে শোনা যায়, সরকার কৃষি আইন সংশোধন করতে তৈরি। কিন্তু কৃষক প্রতিনিধিরা তাতে রাজি হননি। তখন সরকারের তরফে দুই প্রতিনিধি, কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর ও রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল তাঁদের আশ্বাস দেন, নতুন আর একটি প্রস্তাব দেওয়া হবে। তবে তার আগে মন্ত্রীরা নিজেদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চান। আগামী বুধবার তাঁরা ফের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান। কৃষক নেতারা তাতে রাজি হয়ে যান।


এই নিয়ে চলতি সপ্তাহে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত কৃষকদের সঙ্গে তৃতীয়বার বৈঠকে বসল কেন্দ্রীয় সরকার। সব মিলিয়ে মোট পাঁচবার কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে সরকারের বৈঠক হল। শনিবার কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর।

এদিন বৈঠকের আগেই দোয়াবা কিষাণ সংঘর্ষ কমিটির নেতা হরসুলিন্দর সিং বলেন, “আমরা চাই বিতর্কিত আইনগুলি নাকচ করা হোক। আইন সংশোধনের প্রস্তাব আমরা মানব না।” কৃষি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কৈলাস চৌধুরি বলেন, “নতুন আইন নিয়ে কৃষকদের বোঝানো হবে। তাহলে তাঁদের সন্দেহ ঘুচবে। তাঁরা আন্দোলন থামিয়ে দেবেন।”

আগামী মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর সারা ভারত বন্ধের ডাক দিয়েছেন কৃষকরা। সেদিন দিল্লিগামী সব রাস্তা অবরোধ করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
গত সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে কৃষক আন্দোলন। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে দিল্লি আসার পথে বারবার বাধা পেতে হয়েছে কৃষকদের। অনেক জায়গায় ব্যারিকেড করে আটকানো হয়েছে তাঁদের। কোথাও লাঠিচার্জ, কোথাও জলকামানের সামনে পড়তে হয়েছে তাঁদের। কিন্তু তাতেও থামেনি মিছিল। ট্রাকে করে, পায়ে হেঁটে কয়েক লাখ কৃষক জড়ো হয়েছেন দিল্লি সীমান্তে। সেখানেই অবস্থান করছেন তাঁরা। এই আন্দোলনে তাঁরা অনেক সেলিব্রিটি থেকে শুরু করে একাধিক বিরোধী রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে পেয়েছেন।

শনিবার কৃষক আন্দোলন নিয়ে মুখ খিলেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুয়েত্রেসের এক মুখপাত্র এদিন বলেছেন, মানুষের শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ দেখানোর অধিকার আছে। সরকারের বিক্ষোভ দেখাতে অনুমতি দেওয়া উচিত।
দিল্লির কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফানি জারিক বলেন, “ভারতের সম্পর্কে আমি একটা কথাই বলব। মানুষের শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ দেখানোর অধিকার আছে। সরকারের বিক্ষোভ দেখাতে অনুমতি দেওয়া উচিত।”

উল্লেখ্য,কৃষিক্ষেত্রে বড় সংস্কার হিসেবে উল্লেখে করে গত সেপ্টেম্বের তিনটি নতুন কৃষি বিল আনে সরকার। ‘মিডলম্যান’ তুলে দিয়ে বলা হয়, দেশের সর্বত্র কৃষকরা তাঁদের উত্‍‌পাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। আন্দোলনকারী কৃষকদের বক্তব্য, নয়া আইনে কৃষকদের সুরক্ষার দিকটি নিশ্চিত করা হয়নি। উত্‍‌পাদিত পণ্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ও মান্ডি ব্যবস্থা তুলে দিয়ে সবটাই বড় কর্পোরেটদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। যার জেরে এই আইন পাস হওয়ার পর থেকেই কৃষক বিক্ষোভ দানা বেঁধেছে। পঞ্জাব, হরিয়ানা সহ একাধিক রাজ্যের কৃষকরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। শনিবার ১০ দিনে পা রাখে এই আন্দোলন। কৃষক বিক্ষোভের জেরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে রাজধানী শহর। জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রেও ব্যাঘাত ঘটছে।

এদিন কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগে মোদী-শাহ-রাজনাথ বৈঠকে বসেছিলেন। ছিলেন কৃষি ও রেলমন্ত্রীও। কৃষক নেতাদের সামনে সরকার সুনির্দিষ্ট কী প্রস্তাব পেশ করতে চলছে, মূলত তা নিয়েই আলোচনা হয়েছিল।

Previous articleশুভেন্দুর পর এ বার তৃণমূলের নতুন ‘অস্বস্তি’ হয়ে উঠলেন মন্ত্রী রাজীবও! কেন? জানুন
Next articleউনি দীর্ঘজীবী হোন, কীভাবে দলের পতন ঘটছে দেখতে হবে তো: অধীর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here