দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃধর্ষণের ঘটনার প্রায় ৩৩ ঘণ্টা পর মৃত্যু হল মুম্বইয়ের সাকিনাকা এলাকার নির্যাতিতার। চিকিৎসা চলাকালীনই ঘাটকোপারের রাজাওয়াড়ি হাসপাতালে শনিবার সকালে মৃত্যু হয় তাঁর। টুইট করে এমনই জানিয়েছে মুম্বই পুলিশ।
দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি এবার মুম্বইতে । ধর্ষণের পরে এক মহিলার ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়। রড ঢুকিয়ে ছিন্নভিন্ন করা হয়ে যোনি। শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও ছিল গভীর ক্ষত। সারা শরীরে মারধরের কালশিটে দাগ। ক্ষতবিক্ষত গোপনাঙ্গ। সঙ্কটজনক সেই নির্যাতিতা অবশেষে হার মানলেন।
শনিবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে ঘাটকোপারের রাজাওয়াড়ি হাসপাতালে। টুইট করে নির্যাতিতার মৃত্যুর খবর জানিয়েছে মুম্বই পুলিশ। মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিলীপ পাটিল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
শুক্রবার রাত ৩টে থেকে সাড়ে ৩টে নাগাদ খবর আসে পুলিশের কাছে। মুম্বই আন্ধেরি ইস্টে সড়কের ওপর একটি টেম্পোতে এক মহিলা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ দেখে, গোটা টেম্পোয় পড়ে রয়েছে চাপ চাপ রক্ত। তার মধ্যেই অচৈতন্য এক মহিলা, রক্তে ভেসে যাচ্ছে শরীর।
আন্ধেরির সাকি নাকা এলাকায় এই ভয়ঙ্কর ঘটনা নিয়ে মুম্বই পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (জ়োন ১০) মহেশ্বর রেড্ডি বলেছেন, রাত ৩টে নাগাদ পুলিশের কন্ট্রোলরুমে ফোন করে খবর দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। দেখা যায়, টেম্পোতে ওই মহিলা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। কাছেই একটি গাড়িতে আহত অবস্থায় এক ব্যক্তিকেও উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মহিলার বয়স ৩২-৩৩ বছর হবে। ঘাটকোপারের রাজাওয়াড়ি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে। মেডিক্যাল টেস্টে ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে।
একটি সিসিটিভি ফুটেজও পুলিশের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ধর্ষণের আগে মহিলাকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করছেন মোহন। তার পর তাঁকে ধর্ষণ করে যৌনাঙ্গে লোহার রড ঢুকিয়ে দেন। বার বার সেই রড দিয়ে মহিলার যৌনাঙ্গে আঘাত করতেও দেখা গিয়েছে মোহনকে।
এর পরই মহিলাকে পাশে দাঁড়ানো একটি ফাঁকা টেম্পোতে তোলেন। সেখানে গুরুতর জখম অবস্থায় ফেলে রেখে চম্পট দেন তিনি। রাত তখন আড়াইটে, তিনটে। ঘটনার মিনিট পনেরো বাদে ওই রাস্তা দিয়েই এক ব্যক্তি যাচ্ছিলেন। তখনই তিনি মহিলাকে দেখতে পান। টেম্পো থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল রাস্তায়। অচৈতন্য অবস্থায় মহিলাকে দেখতে পেয়েই পুলিশ কন্ট্রোলরুমে ফোন করেন তিনি। পুলিশ এসে সঙ্কটজনক অবস্থায় মহিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়, মহিলার অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক। তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। বেশ কয়কেটি অস্ত্রোপচারও করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা মহিলার দেহে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ার ভয় পাচ্ছিলেন। তবে শেষরক্ষা হল না। শনিবার সকালে মৃত্যু হল নির্যাতিতার৷
ঘটনায় মোহিত চৌহান নামে ৪৫ বছরের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতকে জেরা করে জানার চেষ্টা চলছে এই ঘটনার সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কি না। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করছেন তদন্তকারীরা।
২০১২ সালে দিল্লিতে এমনই একটি নৃশংস ধর্ষণের ঘটনায় শিউরে উঠেছিল দেশ। চলন্ত বাসে প্যারা মেডিক্যালের ছাত্রী নির্ভয়ার ওপরে পৈশাচিক শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছিল ছয় জন। গণধর্ষণ করে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল তাকে। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত রাম সিংহ জেলের মধ্যেই আত্মহত্যা করে। এক নাবালক তিন বছর পরে সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পায়, বাকি চার অপরাধী পবন গুপ্ত, বিনয় শর্মা, অক্ষয় ঠাকুর ও মুকেশ সিংয়ের ফাঁসি হয়।