দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কোভিড-১৯ মোকাবিলায় একটাই অস্ত্র– সামাজিক দূরত্ব। এটা বলছেন গোটা বিশ্বের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। গ্রাম ভারতের জন্য সেই সামজিক দূরত্বেরই নতুন নাম তৈরি করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজ্যের পঞ্চায়েত প্রধানদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। আর সেই সময়ে বারবার তিনি ‘দো গজ কি দুরি’ কথার উল্লেখ করেন। বুঝিয়ে দেন এটাই হোক আগামী ভারতের স্লোগান। একের সঙ্গে আর একের শারীরিক দূরত্ব ছ’ফুট অর্থাৎ দু গজ রাখার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক দূরত্ব রাখার ক্ষেত্রে দুই ব্যক্তির মধ্যে দু’মিটারের ব্যবধান রাখা উচিত। গ্রামীণ ভারতে ফুট, মিটারের তুলনায় গজের হিসেব বেশি চলে। এদিন সেই গ্রামীণ ভারতের ভাষাতেই নতুন স্লোগান তৈরি করে দিলেন মোদী।
বিভিন্ন পঞ্চায়েত প্রধানদের বক্তব্য শোনার পাশাপাশি নানা প্রশ্নও করেন প্রধানমন্ত্রী। জানতে চান লকডাউন সফল করতে ও গ্রামের মানুষকে সচেতন করতে কোথায় কেমন পদক্ষেপ করা হয়েছে। সেসব শুনে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি অনেকর প্রশংসাও করেন মোদী। কাশ্মীরের এক পঞ্চায়েতের প্রধান মহম্মদ ইকবাল বলেন, তাঁদের গ্রামে এখন স্লোগান হয়েছে, ‘রেসপেক্ট অল, সাসপেক্ট অল’। এটা শুনে খুব খুশি হন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, “আপনার থেকে গোটা রাজ্যের শেখা উচিত। বোঝাই যাচ্ছে আপনি মাঠে ময়দানে নেমে কাজ করেন। রমজান মাসও যেন কাশ্মীরে সমস্ত নিয়ম মেনে পালন করা হয়।” মোদীর কথায় কোভিড-১৯ এক এমন অসুখ যাকে আমন্ত্রণ না জানালে সে আসে না। আর এলে সবাইকে সংক্রমিত করে।
এদিন ছিল পঞ্চায়েতি রাজ দিবস। সেই উপলক্ষেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস দেশকে ‘স্বনির্ভরতার’ হওয়ার শিক্ষা দিয়েছে। তাঁর কথায়, “করোনাভাইরাস আমাদের সামনে প্রচুর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। জীবনের নিয়মে যখন যেমন পরিস্থিতি এসেছে তা থেকে আমাদের সব সময়ই শিখতে হয়েছে এবং হবে। এই পরিস্থিতি আমাদের শিক্ষা দিয়েছে ঠিক কী আচরণ আমরা করছি এবং কী আচরণ আমাদের করা উচিত। এই পরিস্থিতি আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে যে বেঁচে থাকার জন্যে কেবল নিজেদের উপরেই নির্ভর করতে হবে।”
শহরের মানুষদের গ্রামের থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত বলেও এদিন মন্তব্য করেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, কীভাবে নিজেদের কাজ নিজেরা করে নেওয়া যায়, সব নিয়ম মেনে চলেও কীভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায় তা শিখিয়েছেন গ্রামের মানুষজনই। এই প্রসঙ্গেই মোদী বলেন, গ্রামগুলিই আমাদের দেখিয়েছে যে দেশের মানুষের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং শিক্ষা আসলে ঘর থেকেই শুরু হয়। শহরগুলোর তুলনায় গ্রামের মানুষেরা করোনা সঙ্কটের মোকাবিলায় বেশি ভাল করে কাজ করেছেন। শহরের তুলনায় গ্রাম সামাজিক দূরত্ব মানার নিয়ম বেশি পালন করছে। “আপনাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে”, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী এদিনও ‘আরোগ্য সেতু’ অ্যাপ ব্যবহারের উপরেও জোর দেন। বলেন প্রতিটি গ্রামে সকলের মোবাইল ফোনে এই অ্যাপ যাতে থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এটাই সকলের ‘বডি গার্ড’ হিসেবে কাজ করবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যে আটকে থাকা গ্রামের শ্রমিকদের সঙ্গে পঞ্চায়েত প্রধানদের নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন। কিন্তু গ্রাম থেকে তাঁদের কাছে ফোন গেলে তাঁরা আরও নিশ্চিন্তে থাকবেন।