দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর থেকেই চিনের ভূমিকা নিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষের মনে নেতিবাচক ধারনা তৈরি হয়েছিল। লাদাখে চিনা আগ্রাসন তাতে ঘি ঢেলেছে। বেজিংয়ের বিরুদ্ধে শঠে শাঠ্যং অবস্থান নেওয়ার জন্য ঘরোয়া চাপ যে ক্রমশ বাড়ছে তা আন্দাজ করতে পারছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। শুক্রবার তাঁর ডাকা সর্বদল বৈঠকে কৌশলেই তাই ভারতের সমর প্রস্তুতির কথা জানালেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিন সর্বদল বৈঠকে তিনি বলেন, “এতদিন সীমান্তে যাদের কেউ আটকাত না, কেউ কিছু বলত না, আমাদের সেনা এখন তাদের আটকাচ্ছে। সেই কারণেই সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ছে। যেখানে আগে কোনও নজরই দেওয়া হত না, সেখানে এখন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে, মোক্ষম জবাবও দেওয়া হচ্ছে”। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত এখন এতটাই শক্তিধর যে ভারতের ১ ইঞ্চি জমির দিকে চোখ তুলে তাকানোরও কারও সাহস নেই।
সর্বদল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জানান, পরিস্থিতি অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার এক্তিয়ার সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। দেশের সীমান্ত সুরক্ষিত রাখতে সেনাবাহিনী চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখবে না। তা ছাড়া নৌসেনা ও বায়ুসেনাও সজাগ রয়েছে। ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতি এখন এমনই যে আমাদের সেনাবাহিনী বিভিন্ন সেক্টরে একই সঙ্গে মুভ করতে পারে।
কৌশলগত বিশেষজ্ঞরা আগে থেকেই জানাচ্ছিলেন, লাদাখে ভারত পরিকাঠামো বাড়ানোর কারণেই চিন ফনা তুলছে। পূর্ব লাদাখে গালওয়ান নদীর উপরে সেতু তৈরি করেছে ভারত। ৬০ মিটার দীর্ঘ সেই সেতু রয়েছে গালওয়ান ও শাইওক নদীর মোহনার পূর্ব দিকে। এই সেতু নির্মাণের ফলে শাইওক এবং দৌলত বেগ ওলদির মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সুগম হয়ে গিয়েছে। যা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা অঞ্চলে দ্রুত সেনা মোতায়েনে সাহায্য করবে।
ওই সেতুর কথা মুখে না আনলেও প্রধানমন্ত্রী এদিনের বৈঠকে বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য যে ধরনের পরিকাঠামো নির্মাণ করতে হবে তা এরকম দ্রুত গতিতেই করা হবে। পরিকাঠামো পোক্ত হলে সেনাবাহিনীর সুবিধা হবে। সেখানে সেনা মোতায়েন, সমরাস্ত্র পৌঁছে দেওয়াও সহজ হবে। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেন, “নতুন পরিকাঠামোর জন্য প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা অঞ্চলে আমাদের পেট্রলিংয়ের ক্ষমতা এখন বেড়ে গিয়েছে।
পেট্রলিং বাড়ার জন্য সতর্কতাও বেড়েছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা অঞ্চলে কী ঘটছে তা সঙ্গে সঙ্গে জানা যাচ্ছে।”চিনের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বহর বিপুল—৬২ মিলিয়ন ডলার। এই পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হওয়া বুদ্ধিমত্তা নয় বলেই অনেকের মত। তাৎপর্যপূর্ণ হল, চিনের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার দাবি কিন্তু এদিনের সর্বদল বৈঠকে কেউ করেননি। সনিয়া গান্ধী থেকে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবাই আলোচনার মাধ্যমেই বিরোধ নিষ্পত্তির কথা বলেছেন।
সেই সঙ্গে বলেছেন, ভারতের স্বার্থকে অটুট রেখেই সেই মীমাংসার পথ খুঁজতে হবে।তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব কূটনৈতিক বাস্তবতার কথা যতটা বোঝেন, সাধারণ মানুষের অনেকেই তা সহজ ভাবে জানেন না। বরং প্রত্যাঘাতের জেদ দেখতে চায় অনেকেই। আবার এও ঠিক যে প্রতিবেশী রাষ্ট্রকেও বার্তা দেওয়া জরুরি।
সম্ভবত সেই কারণেই শুক্রবার সকাল থেকেই লাদাখে বায়ুসেনা প্রধান পৌঁছে যান। লাদাখের আকাশে বায়ুসেনার অ্যাটাক হেলিকপ্টার অ্যাপাশে ও শিনুক উড়তে দেখা যায়। সেই সঙ্গে লড়াকু বিমান মিগ ২৯-কেও উড়ান নিতে দেখা যায়। তার পরই প্রধানমন্ত্রী এদিন সর্বদল বৈঠকে বলেন, আমাদের ২০ জন সৈনিক শহিদ হয়েছেন ঠিকই। কিন্তু ভারত মাতার বিরুদ্ধে যারা চোখ তুলে তাকিয়েছিল তাদের মোক্ষম সবক শিখিয়ে তাঁরা মৃত্যুবরণ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, বাণিজ্য হোক বা যোগাযোগ ব্যবস্থা কিংবা সন্ত্রাস দমন, ভারত কখনও বাইরের চাপের কাছে নতি স্বীকার করেনি। এবারও সেই প্রশ্ন নেই। এটা ঠিক, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভারত বন্ধু সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে চায়। কিন্তু এও ঠিক যে, দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রশ্নে কোনও আপস করা হবে না। তাই একদিকে যেমন ভারত সেনাবাহিনীকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে, তেমনই কূটনৈতিক স্তরে বেজিংকেও ভারতের অবস্থান স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।