দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আজ দেশে চাক্কা জ্যাম কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন আন্দোলনরত কৃষকেরা। সিঙ্ঘু, গাজীপুর সীমান্তে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে পুলিশের পাশাপাশি রয়েছে আধা সামরিক বাহিনীও। দুপুর ১২টা থেকে ৩টে ওই কর্মসূচি পালন করা হবে।
লোনী সীমান্তে রাখা হয়েছে ড্রোন। এর সাহায্যে নজরদারি চালানো হবে।
Security tightened in Delhi-NCR in view of 'Chakka Jaam' call by farmers; visuals from Loni border (Ghaziabad) where drone is being used to monitor the situation.
— ANI (@ANI) February 6, 2021
Around 50,000 personnel of Delhi Police, Paramilitary & Reserve Forces deployed in Delhi-NCR, as per Delhi Police pic.twitter.com/wikAnHnXLy
২৬ জানুয়ারির ঘটনার পর আজ নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক পুলিশ-প্রশাসন। দিল্লির কাছে অবস্থান-বিক্ষোভ চলছে কৃষকদের। আজ দেশে তাঁদের চাক্কা জ্যাম কর্মসূচি। তাকে ঘিরে যাতে কোনও গোলমাল না হয়, সে ব্যাপারে আগেভাগে সতর্ক পুলিশ।
দিল্লি সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছে ৪০ হাজার জওয়ান। যে কোনও রকম গোলমাল থামানোর জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। রয়েছে পুলিশ। দিল্লির ১২টি মেট্রো স্টেশনে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে হিংসার পুনরাবৃত্তি হোক, তা কোনও পক্ষই চাইছে না। তবে তা সত্ত্বেও শনিবার আন্দোলনকারী কৃষকদের দেশজোড়া ‘চাক্কা জ্যাম’ কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনার পারদ চড়ছে আন্দোলনকারী এবং দিল্লি পুলিশ— দুই শিবিরেই। কৃষক ইউনিয়নের নেতাদের আশঙ্কা, তাঁদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ভণ্ডুল করার জন্য হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা করা হতে পারে। অন্য দিকে, বিশ্বের নজরে উঠে আসা এই কর্মসূচি ঘিরে যাতে কোনও রকমের হিংসা না ছড়ায়, সে দিকে লক্ষ্য রাখতে কসুর করছে না দিল্লি পুলিশ। দিল্লির উপকণ্ঠে ৫০ হাজার পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। রয়েছে পর্যাপ্ত জলকামানও৷
শনিবারের ‘চাক্কা জ্যাম’ কর্মসূচি যে শান্তিপূর্ণ করাই তাঁদের লক্ষ্য, তা শুক্রবারই বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে সংযুক্ত কিসান মোর্চা। দেশ জু়ড়ে বেলা ১২টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ভাবে সমস্ত জাতীয় এবং রাজ্য সড়কে এই অবরোধ কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছে তারা। তবে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং রাজধানী দিল্লি ও তার সংলগ্ন এলাকাগুলিতে ‘চাক্কা জ্যাম’ করা হবে না বলে জানানো হয়েছে। যদিও দিল্লিমুখী যে সব রাস্তায় মাস দুয়েক ধরে অবরোধ চলছে, সেগুলি ছাড়া বাকি রাস্তা খোলা থাকবে।
এই অবরোধ কর্মসূচির আওতা থেকে অ্যাম্বল্যান্স-সহ সব জরুরি পরিষেবাকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কী কারণে দিল্লির রাস্তা অবরোধ করা হচ্ছে না, তা জানিয়েছেন ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের সভাপতি রাকেশ টিকায়েত। তিনি বলেন, ‘‘দিল্লিতে আন্দোলনের জায়গায় ইতিমধ্যেই চাক্কা জ্যামের মতোই অবরোধ রয়েছে। ফলে সেখানে নতুন করে এই কর্মসূচি পালন করার প্রয়োজন নেই। পাশাপাশি, আলোচনার জন্য যে কোনও সময় দিল্লি থেকে ডাক আসতে পারে। তাই রাজধানীর রাস্তা খোলা রাখা হবে।’’
কৃষক নেতাদের পাশাপাশি এই কর্মসূচি ঘিরে সাজসাজ রব দিল্লি পুলিশ মহলেও। শুক্রবার দিল্লির পুলিশ কমিশনার এস এন শ্রীবাস্তব প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সমস্ত ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দিল্লিতে ১২টি মেট্রো স্টেশনে জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দিল্লি পুলিশের প্রায় ৫০ হাজার কর্মীর পাশাপাশি থাকছে আধাসামরিক বাহিনীও। গাজিপুর সীমানায় ইতিমধ্যেই কাঁটাতারের বেড়া, কংক্রিটের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। দিল্লি-হরিয়ানা সীমানা তথা দিল্লি-এনসিআর এলাকায় পুলিশকর্মীদেরও মোতায়েন করা হয়েছে। সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে লালকেল্লাতেও।
আন্দোলন ঘিরে সরকার ও কৃষকদের ‘চূড়ান্ত সংযম’ পালনের বার্তা রাষ্ট্রসংঘের:
দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বর্তমানে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হল ভারতের কৃষক আন্দোলন। ব্রিটেন থেকে শুরু করে আমেরিকা, বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেদের মত জানিয়েছে তারা। এমনকি রিহানা, গ্রেটা থুনবার্গদের টুইট ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। ভারতের তরফে সরকার থেকে শুরু করে সেলিব্রিটিদের একাংশ এই বিষয়কে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, এই বিষয়ে বাইরের কারও মতামতের কোনও প্রয়োজন নেই। কিন্তু এই ঘটনার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ও কৃষকদের উভয়কেই চূড়ান্ত সংযম পালনের বার্তা দিল রাষ্ট্রসংঘ।
অফিস অফ দ্য ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস বা ওএইচসিএইচআর-এর তরফে টুইট করে বলা হয়েছে, “আমরা সরকার ও বিক্ষোভকারীদের চূড়ান্ত সংযম পালন করার কথা জানাচ্ছি। শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের বক্তব্য প্রকাশ করতে কোনও সমস্যা নেই। মানবাধিকার বজায় রেখে একটি সমাধানে আসা খুবই জরুরি।”
দু’মাসের বেশি সময় ধরে দিল্লি সীমান্তে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন কৃষকরা। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার কয়েক মাস আগেই তিনটি কৃষি আইন পাশ করেছে। এই আইনগুলিকে কৃষকবিরোধী আখ্যা দিয়ে শুরু হয়েছে এই আন্দোলন। তাঁদের দাবি, এই আইনগুলি প্রত্যাহার করতে হবে সরকারকে।
ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের সঙ্গে ১০ বারের বেশি বৈঠক করেছে ৪০টি কৃষক সংগঠন। কিন্তু তারপরেও কোনও সমাধান সূত্র বের হয়নি। কেন্দ্রের বক্তব্য, কৃষকদের উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই এই আইন নিয়ে আসা হয়েছে। বিরোধীরা তাদের ভুল বোঝাচ্ছে। অবশ্য বিক্ষোভের মধ্যে আইনে কিছু পরিবর্তনেও রাজি হয়েছে সরকার। কিন্তু আইন প্রত্যাহার করার নিজেদের দাবি থেকে সরে আসতে নারাজ কৃষকরা।
কেন্দ্রের এই আইনের উপরে অবশ্য স্থগিতাদেশ জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। তারা একটি কমিটি গড়ে দিয়েছে। কৃষক ও সরকারের সঙ্গে কথা বলে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা এই কমিটির। কিন্তু সেই কমিটির সঙ্গে কথা বলতেও অস্বীকার করেছেন কৃষকরা।
প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন দিল্লিতে কৃষকদের ট্র্যাক্টর র্যালি উপলক্ষ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। তাতে একজন কৃষকের প্রাণহানি ও অনেকে আহত হয়েছেন। ৩০০-র বেশি পুলিশকর্মীও আহত হয়েছেন। সেই ঘটনার রেষ কাটতে না কাটতেই ‘চাক্কা জ্যাম’ কর্মসূচি নিয়েছিল কৃষকরা। কিন্তু তা বাতিল করা হয়েছে।
কৃষকদের এই বিক্ষোভ ঘিরে মার্কিন পপ তারকা রিহানা ও জলবায়ু রক্ষা নিয়ে আন্দোলনকারী কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গের টুইটের পরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। কঙ্গনা রানাওয়াত তো বটেই শচীন তেণ্ডুলকর থেকে শুরু করে অক্ষয় কুমার, সবাই একই সুরে টুইট করেছেন। তাঁদের বক্তব্য ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের কারও মন্তব্য করার কোনও প্রয়োজন নেই। কিন্তু রাষ্ট্রসংঘ মন্তব্য করল। দু’পক্ষকেই সংযম পালনের বার্তা দিল তারা।