দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ হিমাচল প্রদেশের বড়শিগ্রি হিমবাহে ট্রেকিং করতে গিয়ে মৃত দুই বাঙালি অভিযাত্রীর দেহ ১৮ হাজার ফিট উচ্চতা থেকে উদ্ধার করে, নিজেদের কাঁধে বয়ে, ২৭ কিলোমিটার দুর্গম পথ হেঁটে নামলেন আইটিবিপি-র উদ্ধারকারী সেনারা। আটকে পড়া ১৫ জন অভিযাত্রীকেও একই সঙ্গে উদ্ধার করে এনেছেন তাঁরা। আজ কাজা শহরে পৌঁছে প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হয় দেহ দুটি। বাকিদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের ১১ তারিখে একটি অভিযাত্রী দলের সঙ্গে হিমাচল প্রদেশে ট্রেকিং করতে গিয়েছিলেন সন্দীপ কুমার ঠাকুরতা এবং ভাস্করদেব মুখোপাধ্যায়। ব্যারাকপুর আনন্দপুরী মিডল রোডের সানরাইজ আবাসনের বাসিন্দা, ৬১ বছরের ভাস্করদেব অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মী ছিলেন। আর এক মৃত অভিযাত্রী, ৪৮ বছরের সন্দীপ কুমার ঠাকুরতা বেলঘরিয়ার রাইফেল রেঞ্জ রোডের বাসিন্দা, তিনি বারুইপুর হাইস্কুলের শিক্ষক ছিলেন।
মঙ্গলবার রাত তিনটের সময় স্পিতি উপত্যকার কাজা থেকে উদ্ধারকাজ শুরু করতে রওনা দিয়েছিল বিশেষ উদ্ধারকারী টিম। অবশেষে গতকাল বিকেলের পরে খোঁজ মেলে বিপন্ন অভিযাত্রীদের। আইটিবিপি-র তরফে জানা যায়, প্রায় ১৮ হাজার ফিট উচ্চতায় পাওয়া গেছে তাঁদের। সন্দীপ কুমার ঠাকুরতা এবং ভাস্করদেব মুখার্জী নামের দুই মৃত বাঙালি অভিযাত্রীর দেহ দু’টিও পাওয়া গিয়েছে ওই উচ্চতাতেই। দেহ দুটি নামিয়ে আনার কাজ শুরু হয় আজ ভোর থেকে।
১৭ জনের গোটা দলটিই বিপদের মুখে পড়ে খারাপ আবহাওয়ার কারণে। সেই সঙ্গে উচ্চতাজনিত সমস্যা, অক্সিজেনের অভাব– সবকিছুর সঙ্গে আর যুঝতে পারেননি ওই দুই বাঙালি ট্রেকার। ওই দলের অন্য দুই সদস্য কোনওক্রমে প্রাণে বেঁচে নীচে নেমে এসে দুর্ঘটনার খবর জানান৷ ২৭ তারিখ সকালে তাঁদের মৃত্যু সংবাদ এসে পৌঁছয় কলকাতায়।খবর পাওয়ামাত্র হিমাচল প্রদেশের প্রশাসনের উদ্যোগে বিশেষ উদ্ধারকারী দল গঠন করা হয় ৬ জন আইটিবিপি জওয়ান, ১০ জন প্রশিক্ষিত ডোগরা স্কাউট এবং ১০ জন পোর্টারকে নিয়ে৷ কিন্তু দুর্গম পথে পৌঁছোনো সহজ ছিল না। তার উপর খারাপ আবহাওয়ার কারণে হেলিকপ্টারে উদ্ধারকাজ চালানোও সম্ভব হয়নি৷
পাহাড়ের বেশি উচ্চতায় নানারকম বিপদে উদ্ধারকাজ চালানোর জন্য আইটিবিপি-র নাম প্রথম সারিতেই আসে। ২০১৯ সালে নন্দাদেবী শৃঙ্গ অভিযানে চার জন ব্রিটিশ অভিযাত্রীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে সাড়া ফেলে দিয়েছিল তারা। ওই অভিযানেই মৃত অবস্থায় উদ্ধার হয় আরও ৭ জন অভিযাত্রীর দেহ, যাঁদের মধ্যে ৬ জন বিদেশি ছিলেন। ২০ হাজার ফুট উচ্চতার এই কঠিন উদ্ধার অভিযান পরিচিত হয় ‘অপারেশন ডেয়ারডেভিলস’ নামে।
শেষমেশ গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত লাগাতার চেষ্টার পরে, দুর্গম পথ ও ছন্নছাড়া আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করে কার্যত অসাধ্য সাধন করলেন উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা।