দেশের সময় ওযেবডেস্কঃ মুকুল রায়ের দলত্যাগের দিনেই চিঠি দিয়ে বিজেপি ছাড়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন ‘মুকুল ঘনিষ্ঠ’ বনগাঁ জেলার বিজেপি সহ-সভাপতি তপন সিনহা। দলত্যাগের কারণ হিসেবে চিঠিতে নিজের শারীরিক অসুস্থতার কথাই উল্লেখ করেছেন তপনবাবু। কিন্তু বিজেপি ছেড়ে তিনি তৃণমূলে আসছেন কিনা সেটা স্পষ্ট ভাবে বলেননি। ‘ভবিষ্যতে দেখা যাবে’ বলে জল্পনা জিইয়ে রেখেছেন।
এদিকে মুকুল রায়ের বিজেপি ত্যাগের পরের দিনই ‘বেসুরো’ বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। শুক্রবার বনগাঁয় বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ডাকা বৈঠকে দলের যে তিন বিধায়ক গরহাজির ছিলেন তার অন্যতম বিশ্বজিৎ দাস। শুক্রবারের বৈঠকে অনুপস্থিতি নিয়ে তাঁর সাফাই, যে ব্যক্তির বাড়িতে ওই বৈঠক ডাকা হয়েছিল তিনি বিভিন্ন ধরনের অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। মুকুল ঘনিষ্ঠ বিশ্বজিতের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যথেষ্ঠ ভাল। মুকুলের তৃণমূলে যোগদানের পর পরই বিশ্বজিতের এ হেন মন্তব্য যথেষ্ঠ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মুকুল রায় বিজেপি ছাড়তেই দলের অন্দরে কার্যত তোলপাড় পড়ে গেছে। একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছেন নেতা-নেত্রীরা। শুক্রবার বিকেল ৪টে নাগাদ তৃণমূল ভবনে মুকুল রায়ের ঘরওয়াপসির পরেই কার্যত দলত্যাগের কথা ঘোষণা করেছেন বনগাঁর বিজেপি সহ-সভাপতি তপন সিনহা। ঘরে বসেই ভিডিও বার্তায় তপনবাবু বলেছেন, “আমার বয়স হয়েছে। অনেকদিন ধরেই অসুস্থ। তাছাড়া দলের হয়ে কাজ করতে পারছিলাম না। সে কারণেই পদত্যাগ করলাম।”
তপনবাবুর বক্তব্য, একেই বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। তাছাড়া দলের অনুশাসন ও নিয়মনীতি মেনে সবক্ষেত্রে কাজ করা সম্ভব হচ্ছিল না তাঁর পক্ষে। তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সাল থেকে মুকুল রায়ের সঙ্গেই বিজেপিতে ছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচী সবসময় তাঁদের জানানো হত না। এর পরেও ভাল কাজ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শরীরের কারণে আর সম্ভব হচ্ছে না। ভবিষ্যতের কথা পরে ভাবা যাবে বলে জানিয়েছেন তপনবাবু।
শুক্রবার বনগাঁ দলীয় নেতা জ্ঞান ঘোষের বাড়িতে বৈঠক করেন দিলীপ। ওই বৈঠকে ছিলেন না বাগদার বিধায়ক। গরহাজির ছিলেন গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর এবং বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া। ছিলেন না বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরও। এ নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে ওঠে।
একেই ভোটে ভরাডুবি। তার ওপর মুকুল রায়ের দলত্যাগের পরে সামনে চলে এসেছে দলের অন্দরের ফাটল। তাৎপর্যপূর্ণ হল, মুকুলবাবুর দলত্যাগের দিনে বনগাঁয় দলের সাংগঠনিক বৈঠক করেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কিন্তু সেই বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন বনগাঁ লোকসভার বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর, গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর,বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস ও বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া।
শুক্রবার মুকুল যখন পদ্মশিবির ছেড়ে জোড়াফুল শিবিরে যোগ দিতে তৃণমূল ভবনে পৌঁছেছেন তখন বনগাঁয় বিজেপি-র সাংগঠনিক জেলার বৈঠকে হাজির হন দিলীপ। কিন্তু ওই বৈঠকে ছিলেন না বাগদার বিজেপি বিধায়ক। অনুপস্থিতির কারণ নিয়ে বিশ্বজিৎ বলছেন, আমি ব্যক্তিগত কাজে বাইরে ছিলাম। এক জন কী ব্যবসা করেন জানি না, তিনি নিজের স্বার্থের জন্য তাঁর বাড়িতে রাজ্য সভাপতিকে নিয়ে এসেছেন। তিনিও জানেন না কোথায় এসেছেন। যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে রাজনীতি করছেন তাঁরা যে কোনও জায়গায় যেতে পারেন না। ওই জায়গায় যাওয়া আমাদের মতো মানুষের পক্ষে উচিত নয়। আমার সঙ্গে দিলীপদার কথা হয়নি। এমন একটা বাড়িতে বৈঠক হয়েছে যার মালিক নানা রকম অবৈধ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত বলে শোনা যায়।’’
দিলীপের ওই বৈঠকে ছিলেন না বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোকও। তিনি দেশের সময়কে বলেন, ‘‘আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। আমার ডায়াবেটিস আছে এদিন ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম।’’ তবে মুকুলকে নিয়ে ভিন্ন সুর তাঁর গলায়। অশোকের কথায়, ‘‘মুকুল রায় নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে এসেছিলেন। স্বার্থ চরিতার্থ করতে পারেননি, তাই ফিরে গিয়েছেন , বনগাঁর মানুষ আমাকে সম্মান দিয়েছে ভোটে জিতিয়েছে, আমি দলবদলুদের মত নই বিজেপিতে সম্মানের সাথে থেকে বনগাঁর মানুষের জন্য কাজ করে যাব।’’
বস্তুত, বিধানসভা ভোটে বনগাঁতে ভাল ফল করেছে বিজেপি। বনগাঁ লোকসভার ৭টি আসনের মধ্যে ৬টি আসনে জয়লাভ করেছে গেরুয়া শিবির। তার পরেও কেন দলে এ রকম ভাঙন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।