দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যেই মেদিনীপুরে প্রথম জনসভা ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। স্বাভাবিকভাবেই গোটা রাজ্যের নজর ছিল, তৃণমূল নেত্রী কী বার্তা দেন, সে দিকেই। তবে জনসভায় অধিকারী পরিবারের নামই তোলেননি নেত্রী। তবে দল যে কারও অপেক্ষা করে বসে নেই, সেটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।
সোমবার মমতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছেন, ‘সিপিএম–কংগ্রেস–বিজেপি ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছো। ভাবছো এভাবেই চলবে? শুধু গালাগালি দিয়ে বেড়াচ্ছো। অনেক টাকা ছড়াচ্ছো। দাঙ্গা লাগাচ্ছো, মিথ্যে কথা বলছো, কুৎসা করছো,সরকার ভাঙছো, দল ভাঙছো, ঘর ভাঙছো, মানুষের ভালবাসা ভাঙছো, জেনে রেখে দিও, ভারতের মাটি থেকে তোমাদের উৎখাত হওয়ার সময় চলে এসেছে। আগে নিজেদের বাঁচাও।’
এ দিন শুভেন্দু অধিকারীর নাম মুখেও আনেননি নেত্রী। তবে তাঁর বার্তা, ‘তৃণমূল কংগ্রেস অত দুর্বল নয়। যদি কেউ মনে করে তৃণমূল কংগ্রেসকে ব্ল্যাকমেলিং করবো, বার্গেনিং করবো, তৃণমূল কংগ্রেসকে নির্বাচনের সময় দুর্বল করবো। সেই বিজেপি দল ও বিজেপি দলের যারা বন্ধু, তাদের কাছে পরিষ্কার করে বলবো, আগুন নিয়ে খেলবেন না। আর যাকে পারেন জব্দ করতে পারেন করুন, তৃণমূল কংগ্রেসকে পারবেন না। কারণ, তৃণমূল কংগ্রেস মানুষকে আলিঙ্গন করে বেঁচে আছে। তৃণমূল কংগ্রেস জন্মলগ্ন থেকে লড়াই করে বেঁচে আছে।
সোমবার মেদিনীপুরের মাঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতায় দু’বার ‘অধিকারী’ শব্দটি এসেছে।
একবার তিনি যখন বোঝাতে চাইছিলেন, সমাজের সব শ্রেণি—সংখ্যালঘু, তফসিলি জাতি, উপজাতি, বাগদি, বাউড়ি, অধিকারীদের জন্য তিনি কী করেছেন এবং দ্বিতীয়বার যখন তিনি বোঝাতে চাইছিলেন যে, বিজেপি কীভাবে সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে বিভাজন তৈরি করছে ও ঝগড়া লাগিয়ে দিচ্ছে। তাঁর কথায়, হিন্দু-মুসলমান ভাগ করে দাও….. অধিকারী-চ্যাটার্জী ভাগ করে দাও।
হয়তো অধিকারীদের কথা তাঁর মাথায় ঘুরছিল।
কারণ, সোমবার মেদিনীপুর কলেজ মাঠ তো মাইলফলক হয়ে থাকল। তৃণমূলের বাইশ বছরের যাত্রায় এ এক সন্ধিক্ষণও বটে। মেদিনীপুর সদরে জনসভা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কিন্তু সেই মঞ্চে অধিকারীরা নেই। চার অধিকারীর কেউ না!
পূর্ব মেদিনীপুরের অবিসংবাদিত নেতা শুভেন্দু অধিকারী কদিন আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, এক সঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়। তাঁর বাবা তথা কাঁথির সাংসদ ও জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারী দলকে জানিয়েছেন, তাঁর পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে, খুব ব্যথা। বাড়ি থেকে বেরোতে পারছেন না।
তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী সম্ভবত ব্যক্তিগত কাজে জেলায় ছিলেন না। কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন্দু অধিকারীকেও দেখা যায়নি।
তাহলে কি দল ভাঙছে। তেমন কোনও অশনিসংকেত। অনেকে বলছেন, দেওয়াল লিখন দিব্যি পড়া যাচ্ছে।
তৃণমূল কংগ্রেস জন্মানোর পর সম্ভবত এই প্রথম এত বড় অভ্যন্তরীণ সংকট দেখেই হয়তো এদিন চড়া গলায় হুঁশিয়ারি দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তৃতায় দু’বার ‘অধিকারী’ শব্দটি এলেও শুভেন্দুর নাম অবশ্য করেননি তিনি। কিন্তু বলেছেন—
“যদি কেউ মনে করে তৃণমূলকে ব্ল্যাকমেল করব, দর কষাকষি করব, ভোটের সময় তৃণমূল কংগ্রেসকে দুর্বল করে দেব, তা হলে সেই বিজেপি ও তাদের যারা বন্ধু, তাদের বলব আগুন নিয়ে খেলবেন না”।
“বিজেপি করা ফ্যাশন হয়ে যাচ্ছে, যাদের টাকা হয়েছে, অনেক টাকা, তাদের সেই টাকা বাঁচানোর জন্য বিজেপি করছে। লুঠেরার দল সব। লুঠেরাদের আশ্রয় দিচ্ছে বিজেপি।”
“তৃণমূল কংগ্রেস যখন ছোট ছিল, অনেকে বলতেন ছাগলে মুড়িয়ে খাবে। তৃণমূল এখন মহীরুহ, খাবলা মারা যাবে না”।
“আপনারা, ছাত্র যুবরা শপথ নিন, বলুন যতই চেষ্টা করুক সরকারকে ভাঙা যাবে না। ২০২১ আমাদের। ২০২১ বাংলার।”
“স্লোগান তুলুন, লাঠি খাই গুলি খাই তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়ছি না ছাড়ব না।”
এরই পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেদিনীপুরের কর্মীদের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক অটুট রাখতে বলেছেন, এই জেলায় প্রথম দিন থেকে যাঁরা তৃণমূল কংগ্রেস করতেন তাঁরা তৃণমূলের সঙ্গেই রয়েছেন। আবার জেলার উন্নয়ন ও যুব সমাজকে বার্তা দিতে গিয়ে বলেছেন, তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর হবে। তাতে ১৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে। প্রচুর ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থান হবে। তা ছাড়া খড়্গপুরেও একটা অফিস হবে। তাতেও কাজ পাবেন অনেকে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই অধিকারীরা এদিন কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি। অনেকে মনে করছেন, সেটাও হতে পারে কৌশলগত। শুভেন্দু এখনও দল ছাড়েননি। বিধানসভা থেকে ইস্তফা দেননি। দল বা সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে একটি কথাও বলেননি। তাই হয়তো সরাসরি তাঁদের আক্রমণ করা যাচ্ছে না।
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এদিনের সভার পর শুভেন্দুর ইস্তফা এখন সময়ের অপেক্ষা। মনে করা হচ্ছে, যে কোনও দিন দল ছাড়তে পারেন শুভেন্দু। তার পর আর এক তরফা কথা হবে না, কথার পিঠে কথা হবে।