দেশের সময় ওয়েব ডেস্ক:

মঙ্গলবার মালদহের সভা শেষ হওয়ার পর রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, “সকালে সাড়ে নটায় যখন অমিতজি দিল্লি থেকে বিমানে উঠছিলেন, তখনই তাঁর গায়ে ১০২ জ্বর। তাঁকে বলা হয়েছিল সফর বাতিল করার জন্য। কিন্তু তিনি জানিয়ে দেন আসবেনই।” দিলীপবাবু আরও বলেন, ডাক্তারদের নিষেধ, অমিত শাহকে স্পর্শ করা যাবে না। তাই তাঁকে মালাও পরানো যায়নি এ দিন।গত সপ্তাহে সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট মেডিকেল সায়েন্সেসে ভর্তি হয়েছিলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি। কিছুটা সুস্থ হয়ে এইমস থেকে বাড়ি ফেরেন রবিবার সকালে। কিন্তু তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানাচ্ছে, এইমসের চিকিৎসকরা তাঁকে তখনই বলেছিলেন, সোয়াইন ফ্লুতে প্রধান সমস্যা হল শারীরিক দুর্বলতা। শরীরে ভাইরাসের প্রকোপ কমে গেলেও দুর্বলতা থেকে যায়। ফলে আপাতত আরও কয়েক দিন পূর্ণ বিশ্রাম ছাড়া বিকল্প নেই। কিন্তু যে হেতু বাংলায় তাঁর কর্মসূচি ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল, তাই ডাক্তারদের নিষেধ শোনেননি তিনি।

মঙ্গলবার মালদহের সভা শেষ হওয়ার পর রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, অনিবার্য কারণে সর্বভারতীয় সভাপতি বাকি সভাগুলিতে থাকতে পারবেন না। তাঁর পরিবর্তে দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও নেতারা ওই সভায় উপস্থিত থাকবেন।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার মালদহে সভা করার পর বুধবার ঝাড়গ্রাম ও সিউড়িতে সভা করার কথা ছিল অমিত শাহ-র। তার পর বৃহস্পতিবার তাঁর জনসভা হওয়ার কথা ছিল কৃষ্ণনগর ও জয়নগরে।

স্বাভাবিক ভাবেই অমিত শাহ ফিরে যাওয়ায় বিজেপি-র রাজ্য নেতারা হতাশ। দলের এক নেতার কথায়, এ যেন গ্রহ দশা লেগেছে। প্রথমে রথযাত্রায় বাধা। তার পর এখন জনসভায় বিঘ্ন! এখন প্রধানমন্ত্রীর সভাগুলি ঠিক ঠাক হলেই মঙ্গল৷

লোকসভা ভোটে বাংলায় তাঁকে নির্বাচন-কনভেনার করেছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা। তা যে কেবল স্রেফ লোক দেখানো পদ নয়, বরং প্রকৃত অর্থেই তাঁর উপর দিল্লি ভরসা করছে তা সম্প্রতি বিজেপি-র জাতীয় পরিষদের বৈঠকেও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে তৃণমূল বিরোধী আক্রমণে এখন আর কোনও আগল রাখছেন না মুকুল রায়।

মঙ্গলবার মালদহে সভা ছিল সর্বভারতীয় বিজেপি সভাপতির। ওই মঞ্চ থেকেই রাজনৈতিক আক্রমণে বাংলার শাসক দলের প্রতিরক্ষাকে এক্কেবারে ফালা ফালা করে দিতে চাইলেন একদা তৃণমূলেরই সেকেন্ড ম্যান। মুহুর্মুহূ খোঁচা দিয়ে মুকুল বলেন, আমি তো বলেছি, তৃণমূল করে পাপ করেছি। এখন প্রায়শ্চিত্ত করছি। তবে তৃণমূল বলে এখন কিছু নেই। পার্টিটাই উঠে গেছে। ব্রিগেডে দেখলেন তো মমতা ছাড়া দলের কেউ হাতে মাইক পেলেন না। কারণ, তৃণমূল এখন পিসি-ভাইপোর দল। পিসি ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ভাইপো ডিরেক্টর।

এখানেই না থেমে মুকুল বলেন, আসলে বাংলার মন্ত্রীরা সব উল্টে দেওয়া কচ্ছপ। মমতা এসে সোজা করে দিলে তবেই কথা বলবে। নইলে কারও কথা বলার অধিকার নেই।

তিনি আরও বলেন, কদিন আগে ব্রিগেডে যা হল তা একটা সার্কাস ছাড়া কিছু নয়? ১২ টা রাজনৈতিক দলের নেতাদের এনেছিলেন মমতা। কিন্তু কেউ কি বললেন, মমতা আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী? বলেননি। কারণ, প্রধানমন্ত্রী হতে গেলে সংখ্যা লাগে। গ্রহণযোগ্যাতা লাগে। গুজরাতের বাইরে দেশের যে কোনও আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার ক্ষমতা রাখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু মমতা বাংলার বাইরে কোনও রাজ্য থেকে প্রার্থী হোন দেখি! জমানত বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে।

শুধু তা নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে এ দিনের সভা থেকে মুকুল বাবু বলেন, বলে রাখছি, লোকসভা ভোটে কুড়িটির বেশি আসন পাবে না তৃণমূল। যদি পায় তা হলে রাজনীতি ছেড়ে দেব!

কিন্তু এত প্রত্যয় কী ভাবে দেখাচ্ছেন মুকুলবাবু? তিনি কি ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা?

এর জবাব এ দিন নিজেই দেন মুকুল। বলেন,মমতার সঙ্গে থেকে রাজনীতি করেছি। রাজনৈতিক পরীক্ষাটা কম দিইনি। রাজনীতিটা আমি কম বুঝি না। ২০০৮ দেখেছি, ২০০৯ দেখেছি, ২০১১ দেখেছি। বাংলার মানুষের চেহারার মধ্যে, কথা বার্তার মাধ্যমে যে আওয়াজ উঠছে তা হল বাংলায় পরিবর্তন চাই

মুকুলের এ সব খোঁচা এ দিন শলার মতোই ফুটেছে শাসক দলের অনেকের গায়ে। পাল্টা মন্তব্য করে তাঁরা বলেছেন, বাংলার বাইরে যেতে হবে না। মুকুল রায় কাঁচরাপাড়ায় জিতে দেখাক।

মঙ্গলবার অমিতের প্রথম সভা হয় মালদহে।রাজনীতিতে পোড় খাওয়া নেতা। কোন রোগের কী ওষুধ তাঁর ভালই জানা! মহার্ঘ ভাতা ও পে কমিশন নিয়ে বাংলায় রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে যখন তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তখন তাতে যেন ঘি-এর ছিটে দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। সেই সঙ্গে দিলেন আশ্বাসও। জানিয়ে দিলেন, বাংলায় যেদিনই ক্ষমতায় আসবে বিজেপি, সে দিনই রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য সপ্তম বেতন ঘোষণা করে দেওয়া হবে।

রাজ্য সরকারের আপত্তি শুনে বিজেপি-র রথযাত্রার প্রস্তাবে সায় দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। পরিবর্তে বাংলায় জুড়ে অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদী বেশ কিছু জনসভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজেপি নেতারা।

বাংলার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন বিজেপি সভাপতি। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বার্তা দিয়ে বলেন, গোটা দেশে সব রাজ্যে সপ্তম পে কমিশন তৈরি হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রে তো হয়েছেই। কিন্তু বাংলায় পঞ্চম পে কমিশনের পর আর কিছু হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং অন্য রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা যা মহার্ঘ ভাতা পান তার অর্ধেকও পান না বাংলার কর্মচারীরা। হিসাব মতো কেন্দ্রের মহার্ঘ ভাতার তুলনায় বাংলার কর্মচারীদের ডিএ মাত্র ৪৯ শতাংশ। কিন্তু বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, বাংলায় ক্ষমতায় এলে শপথ গ্রহণের দিনই সপ্তম পে কমিশনের ঘোষণা হবে।

মাঝে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের কী হবে, সেটা অবশ্য জানাননি বিজেপি সভাপতি।

তবে বেতন বাড়া বা এ ধরনের আশ্বাসের কথা শুনলে কে না খুশি হয়! এ দিনের সভায় অমিত শাহ-র এই ঘোষণা শুনে প্রবল হাততালি পড়ে।

বস্তুত, অর্থনৈতিক সংস্কারের কথা ভুলে দলমত নির্বিশেষ সব রাজনৈতিক দলই এখন পপুলিজমের পথে হাঁটতে শুরু করে দিয়েছে। সম্প্রতি হিন্দিবলয়ের তিন রাজ্যের ভোট ফলাফলে দেখা গিয়েছে, এ ধরনের ঘোষণা ইতিবাচক প্রভাবও ফেলছে। যেমন, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তীসগড়ের ভোটে কংগ্রেস তথা রাহুল গান্ধী প্রচারের সময় বলেছিলেন, জিতলেই কৃষিঋণ মকুব করবে কংগ্রেস সরকার। কথা মতো কাজ। শপথ গ্রহণের দিনই কৃষি ঋণ মকুব করে দেন মধ্যপ্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথ। একই পথে হাঁটে রাজস্থান ও ছত্তীসগড়ও। সন্দেহ নেই, বাংলাতেও সেই মডেলই অনুসরণ করতে চাইছেন অমিত শাহরা।

পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সংখ্যা বিপুল। বিজেপি তাঁদের আস্থা অর্জন করতে চাইছে। কারণ, অমিত শাহরা জানেন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহণ ইত্যাদি ক্ষেত্রের রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা ভোটে মানুষকে প্রভাবিতও করতে পারেন।

তবে অমিত শাহকে পাল্টা সমালোচনা করতে ছাড়েনি তৃণমূল। বাংলায় দলের মুখপাত্ররা বলেন, গাছে কাঁঠাল, গোঁফে তেল। বাংলায় লোকসভা ভোটে আগে একটা আসন জিতে দেখাক বিজেপি। তার পর সরকার গড়ার স্বপ্ন দেখবে। এখন দেখার আগামী দিনের প্রধান মন্ত্রীর ৩টি সভা করে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে রাজ্য রাজনীতিতে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here