দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সুমেরুকে লজ্জা দিয়ে বরফে ঢাকা মহাদেশের থেকেও কম তাপমাত্রার কবলে পড়ে গেল মার্কিন মুলুকের অঙ্গ শিকাগো৷ হিমাঙ্কের ৩০ ডিগ্রি সেলশিয়াসের নিচে চলে যাচ্ছে এখানকার তাপ৷ কিছু এলাকায় তারও কম৷ সুমেরুকে লজ্জায় ফেলে তুষার যুগে ঢুকে পড়তে শুরু করেছে শিকাগো৷

বিবিসি জানাচ্ছে, তাপমাত্রার নিম্নমুখী গতি যেরকম তাতে নজির ভাঙার অপেক্ষামাত্র৷ সেইসঙ্গে শুরু হয়েছে মৃত্যু৷ ইতিমধ্যে প্রবল শীতে জমে গিয়ে ৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন৷ আরও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন৷

আন্টার্কটিকার থেকেও কম তাপমাত্রার কবলে পড়ে গেল মার্কিন শহরটি৷ শিকাগোর সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড ছিল মাইনাস ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৮৫ সালের ২০ জানুয়ারির সেই রেকর্ড এবার ভাঙতে চলল৷

এ যেন এক অদৃশ্য প্রকৃতি দানবের লাফালাফি৷ সে রেগে গিয়ে সুমেরু থেকে ঝাঁট দিয়ে বরফ উড়িয়ে দিচ্ছে৷ আর সেই বরফের হাওয়ায় মার্কিন মুলুকের শিকাগো ঢেকে পড়ছে৷ এতেই চমকে যাচ্ছেন আবহবিদ ও প্রকৃতি বিশেষজ্ঞরা৷ তাঁদের ধারণা, এভাবে চলতে থাকলে সুমেরুর মুখে ঝামা ঘসে দিয়ে সর্বাধিক তুষারপাতের রেকর্ড হাতিয়ে নেবে মার্কিন মুলুকের শহরটি

মার্কিন আবহাওয়া বিভাগ জানাচ্ছে, শিকাগোর উইন্ডি শহরের তাপমাত্রা নামবে -৩০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ বুধবার রাতে এবং বৃহস্পতিবার সকালে শিকাগোর সর্বত্র তাপমাত্রা -২৫ ডিগ্রির নিচেও নেমে যেতে পারে৷ বৃহস্পতিবার সকালে উত্তর মেরুর থেকেও ঠাণ্ডা হবে শিকাগো। মধ্য পশ্চিমাঞ্চল ও নিউ ইংল্যান্ডের প্রায় ৯ কোটি বাসিন্দাকে শূন্য ডিগ্রি কিংবা তার নিচের তাপমাত্রার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

মার্কিন আবহাওয়া বিভাগ জারি করেছে বিশেষ বার্তা৷ তাতে বলা হয়েছে- শিকাগো এবং সংলগ্ন এলাকায় যে ভয়াবহ হতে চলেছে তার জেরে মাত্র আড়াই মিনিটে যে কাউ ফ্রস্টবাইট বা তুষার ক্ষতে আক্রান্ত হতে পারেন৷ এই এলাকার আড়াই কোটি বাসিন্দাকে মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রার সঙ্গে যুঝতে হবে৷

গত কয়েক দিন ধরেই তীব্র শৈত্যপ্রবাহ চলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। মিনেসোটায় তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে। প্রবল শীতে কাঁপছে কানাডাও। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের প্রায় ২০ ডিগ্রি নীচে। সাদা বরফে ঢেকেছে উইসকনসিনের মিলউইকি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে।

বুধবার সকালে ম্যাডিসনের রাস্তায় টহল দিতে বেরিয়েছিলেন পুলিশ কর্তারা। ‘‘শুধু ঠাণ্ডা নয়, যাকে বলে ঐতিহাসিক ঠাণ্ডা। বিগত কয়েক বছরে এমন হাড়হিম করা ঠাণ্ডা দেখেনি উইসকনসিন,’’এক পুলিশ কর্তার কথায়, মঙ্গলবার রাত থেকেই দফায় দফায় তুষারপাত হচ্ছে ম্যাডিসনে। ঝুড়ো বরফে ঢেকে গিয়েছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট। প্রবল ঠাণ্ডায় ঝাঁপ ফেলেছে স্কুল-কলেজও। তাপমাত্রা মাইনাস ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে রাত হলেই তাপমাত্রা নেমে যাচ্ছে মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে।

শতাব্দীর এটাই সেরা ঠাণ্ডা। এমনটাই জানিয়েছে মিনেসোটার আবহাওয়া দফতর। দিনেই তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে। রাত বাড়লে সেটা পৌঁছচ্ছে কখনও মাইনাস ৪০, আবার কখনও মাইনাস ৫০ ডিগ্রিতে। ইতিমধ্যেই ঠাণ্ডার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন এক ব্যক্তি। বাতিল হয়েছে হাজারের বেশি উড়ান। মিনেসোটা ও উইসকনসিন ইউনিউভার্সিটি বন্ধ হয়ে গেছে অনির্দিষ্ট কালের জন্য। জাতীয় আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, মিডওয়েস্ট ও নিউ ইংল্যান্ডে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ রয়েছেন হিমাঙ্কের ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নীচে।

ডাকাটোস ও উত্তর মিনেসোটায় মঙ্গলবার সকাল থেকে তাপমাত্রা মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাস্তাঘাট পুরোপুরি বন্ধ। শৈত্যপ্রবাহের কারণে বহু মানুষ গৃহবন্দি। কোথাও কোথাও জারি হয়েছে রেড অ্যালার্টও। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, উত্তর গ্রেট লেকস এলাকায় তাপমাত্রার পারদ নামতে পার মাইনাস ৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

১৯৮৫ সালে শিকাগোতে এমন জমাটি শীত পড়েছিল বলে জানিয়েছেন সেখানকারই এক বাসিন্দা। সে বছর তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এত বছর পরে ফের এমন শীত দেখল শিকাগো। সপ্তাহভর তাপমাত্রা রয়েছে মাইনাস ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওয়াশিংটনে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ৪ ডিগ্রি নীচে। নায়াগ্রা, ওরলিয়ান্স কাউন্টি ও বাফালো, টরন্টোতে তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস ১৪ ডিগ্রি।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ঠাণ্ডা পড়বে। এই ঠাণ্ডা ছাড়িয়ে যাবে বরফের মহাদেশ বা অ্যান্টার্কটিকাকে৷ হুড়হুড় করে নামছে তাপমাত্রা৷ এমনিতেই মার্কিন দেশের আলাস্কা এবং উত্তর মেরুর কাছাকাছি অংশের তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের অনেক নিচে৷ এবার সব নজির ম্লান করে দেবে শিকাগো।

সংগৃহীত-ছবি/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here