দেশেরসময়ঃ শাসক দলের সংগঠন বেসামাল উত্তর ২৪ পরগনায়৷ লোকসভা ভোটে হাতছাড়া জেলার দু’টি আসন৷ ভাটপাড়া বিধানসভা উপনির্বাচনেও জয় পেয়েছে বিজেপি৷ গেরুয়া ঝড়ে উড়ে যেতে বসেছে বনগাঁ সহ বেশ কয়েকটি পুরসভা৷ পাপড়ি মেলেছে পদ্ম৷ তাই উত্তর ২৪ পরগনার জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীর উপর আর ভরসা রাখতে পারলেন না তৃণমূল সুপ্রিমো৷ ডানা ছাঁটা হল তাঁর৷ মহকুমা ভেদে সংগঠনের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হল জেলার চার বিধায়ক ও একজন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে৷
উত্তর ২৪ পরগনায় তৃণমূলের শক্তি নিরঙ্কুশ৷ ২০১৪’র লোকসভা বা ২০১৬’র বিধানসভাতে তা স্পষ্ট হয়৷ জেলার পাঁচ লোকসভার মধ্যে সবকটিই ছিল তৃণমূলের দখলে৷ পরে বিধানসভা ভোটেও দু-একটি বাদে সব আসনেই জয় পায় শাসক দলের প্রার্থীরা৷ কিন্তু, ২০১৯’এর লোকসভা ভোটের ফলে সব ওলোট-পালট হয়ে যায়৷ জেলার পাঁচটির মধ্যে ২টি লোকসভা আসন জিতে নেয় বিজেপি৷
ভোটের পরেও গেরুয়া দাপট অব্যাহত৷ তৃণমূল থেকে জেলার ৩ বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, শুভ্রাংশু রায় ও সুনীল সিং গিয়েছেন বিজেপিতে৷ হার হয়েছে প্রেসটিজ ফাইটেও৷ ভাটপাড়া বিধানসভাও দখল করেছেন ‘অর্জুন পুত্র’ পবন সিং৷ ভাটপাড়া, গাড়ুলিয়া সহ জেলার বেশ কয়েকটি পুরসভাও জোড়াফুলের হাতছাড়া৷ তালিকায় আরও আসতে পারে বলে প্রতিদিনই নিয়ম করে হুমকি দিচ্ছেন কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষরা৷
তৃণমূল নেত্রী তাঁর প্রিয় বালু ওরফে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে রেখেছেন জেলা সভাপদি পদে৷ তবে রদবদল করেছেন সংগঠনে৷ যেমন, দমদমের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বরানগরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী তাপস রায়কে। বারাককপুরের দায়িত্বে পানিহাটির বিধায়ক তথা বিধানসভার মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ।
বারাসত লোকসভা কেন্দ্র এ বার থেকে দেখভাল করবেন মধ্যগ্রামের বিধায়ক তথা পুরসভার চেয়ারম্যান রথীনঘোষ। বসিরহাটের পর্যবেক্ষক করা হয়েছে বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসুকে। বনগাঁর দায়িত্বে গোবিন্দ দাস। তিনি গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি৷
সিদ্ধান্ত হয়েছে তৃণমূলের সাংগঠনিকস্তরে জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক একা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না৷ তাঁকে দলের তরফে পাঁচ মহকুমার দায়িত্বে থাকা পাঁচ জনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ যা প্রয়োগ হবে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিলমোহর পেলে৷
তৃণমূল সূত্রে খবর, জেলা জুড়ে একের পর এক এই ‘ধাক্কা’য় নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। অসন্তোষ প্রকাশ করেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বও।বনগাঁ ছিল তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি,সেখানে পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্যর বিরুদ্ধে ১২জন কাউন্সিলর অনাস্থা আনার পর বিজেপিতে যোগ দেন বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস সহ ,উত্তর২৪ পরগনায় এই ঘটনায় যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল৷ শেষমেশ বড়সড় রদবদলের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
“সদ্য দল ছুট বনগাঁর বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের প্রতিক্রিয়া, মৃত্যুর পরে মুখে জল দিয়ে কি লাভ”
উত্তর২৪ পরগনা জেলার বিজেপি নেতা দেবদাস মন্ডল বলেন ডানা ছাঁটা নেতাকে অনেক আগেই বনগাঁর মানুষ মন থেকে ছেঁটে ফেলেছিলেন,এবার গোটা জেলা সহ রাজ্যের মানুষ তাঁকে মন থেকে ছেঁটে ফেলবেন৷ আগামী বিধানসভাতে সেই দৃশ্য দেখাবেন এই রাজ্যের মানুষ।