দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানালেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পেনসিলভেনিয়ার ফল ঘোষণার পরেই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের জয় সুনিশ্চিত হয়ে যায়। এর পরেই বাইডেনের উদ্দেশে ট্যুইট করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ দু’জনেই ভারত মার্কিন সম্পর্ক আরও দৃঢ় এবং ভাল হবে বলেই আশা প্রকাশ করেছেন।

অন্যদিকে বাইডেনের সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকার প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিসকেও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মমতা। টুইট করে তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য কমলা হ্যারিসকে শুভেচ্ছা। আশা করি ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও ভাল হবে।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে বাইডেনের এই জয়কে মোদী ‘দর্শনীয়’ হিসেবে আখ্যা দেন। অভিনন্দন জানিয়েছেন কমলা হ্যারিসকেও।

জয়ের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে মোদী লেখেন, ‘আশারাখি ভারত ও আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে একত্রে কাজ করবে।’ বাইডেনের এই জয়কে তিনি দর্শনীয় হিসেবে উল্লেখ করেন। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভারতের প্রতি বাইডেনের ইতিবাচক ভূমিকার কথাও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন। বলেন, ‘ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক শক্তিশালী করে তুলতে আপনার অবদান গুরুত্বপূর্ণ ও অমূল্য ছিল।’

এর পরেই মোদীর বার্তা, ‘ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি আরও একবার আপনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছি।’

তুমুল লড়াই আর অনেক তিক্ততার পর পেনসিলভেনিয়ায় জয়ের মধ্য দিয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন জো বাইডেন। সেইসঙ্গে সবচেয়ে বেশি বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ইতিহাসও গড়েন বাইডেন। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। বাইডেন পেয়েছেন ২৮৪টি। তাঁর এই জয়ের ফলে কামালা হ্যারিস হতে চলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট। জানুয়ারিতে তাঁরা দায়িত্ব নেবেন।

কমলা হ্যারিসকেও আলাদা করে অভিনন্দন জানান নরেন্দ্র মোদী। হ্যারিসের এই জয়কে ‘পাথব্রেকিং’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমস্ত ইন্দো-আমেরিকানের কাছে আপনার এই জয় গর্বের।’ মোদী আশা প্রকাশ করেন, কমলা হ্যারিসের সমর্থন ও নেতৃত্বে ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।

এই বাইডেন ও হ্যারিস উভয়েই কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর কাশ্মীর নীতির প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছেন। বিরোধিতা করেছেন নাগরিকত্ব আইনেরও। ফলে, নতুন পরিস্থিতি বুঝে কূটনীতির ঘুঁটি সাজাতে হবে নয়াদিল্লিকে। যদিও, এর মধ্যে বেশ কয়েক বার ভারত সম্পর্কে বাইডেন তাঁর অবস্থান বদলানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। আঞ্চলিক সংকট থেকে সীমান্ত সমস্যা, সবেতেই ভারতের পাশে থাকবেন বলে ঘোষণা করেন তিনি। বাণিজ্য ও পরিবেশ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলিও এক সঙ্গে মোকাবিলা করবে দুই দেশ। ট্রাম্প যখন ভারতের বাতাস নোংরা বলেছিলেন, তখন বাইডেন বলেন, কেউ এ ভাবে বন্ধুদের সম্পর্কে কথা বলে না, পরিবেশ পরিবর্তনের মতো সংকটেরও এ ভাবে মোকাবিলা করা যায় না।

আমেরিকায় ভোট দিয়েছেন ১৪ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ। শনিবার সকালে জানা যায়, ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেন এগিয়ে আছেন ৪১ লক্ষ ভোটে। তবে যে চারটি প্রদেশে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে, সেখানে বাইডেন এগিয়ে ছিলেন ৮৩ হাজার ৯৩৭ ভোটে। জর্জিয়াতে তিনি এগিয়েছিলেন ৩৯৬২ ভোটে। অ্যারিজোনায় বাইডেন এগিয়ে ছিলেন ২৯ হাজার ৮৬১ ভোটে। নেভাদায় তিনি এগিয়ে ছিলেন ২২ হাজার ৬৫৭ ভোটে।


ডেমোক্র্যাটরা আশা করেছিলেন, তাঁরা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। তা অবশ্য হচ্ছে না। এরপরে আগামী জানুয়ারিতে জর্জিয়ায় সেনেটের দু’টি আসনে নির্বাচন হবে। একটি আসনে রিপাবলিকান সেনেটর ডেভিড পার্দু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ডেমোক্র্যাট জন অসওফের সঙ্গে। অপর আসনে রিপাবলিকান প্রার্থী কেলি লোয়েফলারের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ডেমোক্র্যাট রাফায়েল ওয়ারনকের।


ডেমোক্র্যাটরা যদি দু’টি আসনে জিততে পারেন, তাহলে ১০০ সদস্যবিশিষ্ট সেনেটে ৫০ টি আসন থাকবে ডেমোক্র্যাটদের। সেনেটে কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভোটাভুটি হলে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ভোটেই নির্ধারিত হবে জয়-পরাজয়। সেক্ষেত্রে পরিবেশ দূষণ বা জনস্বাস্থ্য নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বাইডেনের অসুবিধা হবে না।

বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদীর সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল। মার্কিন বিদেশনীতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের তেমন সুযোগ নেই মেনে নিলেও হোয়াইট হাউসে পরিবর্তন হওয়ার আগাম ইঙ্গিত পেয়েই নয়াদিল্লি প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। আমেরিকায় কর্মরত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত তরণজিৎ সিং সাঁধু ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করছেন। কিছু বৈঠকের কথা প্রকাশ্যে এসেছে, কিছু রয়েছে গোপনে।

ভারত এই মুহূর্তে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে বারাক ওবামা আমলে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ থাকা ২ ভারতীয় বংশোদ্ভূতকে। এঁরা হলেন বিবেক এইচ মূর্তি এবং রাজ শাহ। ২০১৪-য় বিবেক ওবামার তরুণতম সার্জন জেনারেল ছিলেন, বাইডেনের প্রচারেও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ভূমিকা নেন, সম্ভবত মন্ত্রিসভায় থাকছেন তিনি। মনে করা হচ্ছে, রাজীব ওরফে রাজ শাহ বাইডেন প্রশাসনের ভারত কেন্দ্রিক পদক্ষেপগুলিতে বড় ভূমিকা নেবেন।

ওবামা আমলে তিনি ছিলেন আন্ডার সেক্রেটারি ফর রিসার্চ, এডুকেশন অ্যান্ড ইকোনমিক্স এবং মার্কিন কৃষি বিভাগের প্রধান গবেষক। এ ছাড়া সাঁধু যোগাযোগ রেখেছেন কংগ্রেসনাল ব্ল্যাক ককাস গোষ্ঠীর সঙ্গে। আফ্রিকান-আমেরিকান কংগ্রেস সদস্যদের এই গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছেন কমলা হ্যারিসও।

কমলা হ্যারিসকে সঙ্গে নিয়েই এ বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য এ প্রান্ত ও প্রান্ত ছুটে বেড়িয়েছেন ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন। ডোমোক্র্যাটের জয়ের সঙ্গেই এদিন কমলার ভাইস প্রেসিডেন্ট পদও নিশ্চিত হয়ে যায়।

ভারতে বিগত কয়েক দিন ধরেই কমলা হ্যারিসকে নিয়ে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। নেটদুনিয়ায় তার আভাসও মিলেছে। ইতিমধ্যে হোয়াটস অ্যাপে ঘুরছে হোয়াইট হাউসের ছবি। আর যেখানে লাল অক্ষরে লেখা রয়েছে ‘কমলা ভিলাস’। যার অর্থ কমলার বাড়ি।

যদিও কমলা হ্যারিস হোয়াইট হাউসে থাকবে না। মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউস। তাই প্রথা মেনে জো বিডেন তাঁর পরিবার নিয়ে সেখানে থাকবে। কমলা হ্যারিস থাকবেন হোয়াইট হাউস থেকে কয়েক মাইল দূরে, এক নম্বর অরজারভেটরি সার্কেলে। ১৮৯৩ সালে ১২ একর জায়গা নিয়ে তৈরি হয়েছিল আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্টের ভবন।

হ্যারিসকে নিয়ে ভারতীয়দের মধ্যে উদ্দীপনার কারণ, তামিলনাড়ুর প্রত্যন্ত গ্রাম থেলুসেন্দ্রপুরমের বাসিন্দা ছিলেন তাঁর মা। পড়াশুনার জন্য তিনি চলে গিয়েছিলেন আমেরিকা। কিন্তু তার পরেও এই গ্রামের বাসিন্দারা কমলা হ্যারিসকে নিজের আত্মীয়ই মনে করেন। তাঁর দাদামশাই ভোটে তাঁর জয়ের প্রার্থনা করে পুজোর ব্যবস্থা করেছিলেন। গোটা গ্রাম জুড়ে হ্যারিসের সমর্থনে পড়েছে পোস্টার। গ্রামের মহিলারা হ্যারিসের জন্য প্রার্থনা করে রঙ্গোলিও তৈরি করেছিলেন৷

প্রসঙ্গত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস। আমেরিকার প্রায় আড়াইশো বছরের ইতিহাসে প্রথম কোনও কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এর আগে আরও দু’জন মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে লড়েছেন। ২০০৮ সালে রিপাবলিকান পার্টির হয়ে সারা পলিন, ১৯৮৪ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জেরালডিন ফেরারো। তাঁদের কেউই কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচিত হতে পারেননি। আবার বাইডেন যদি তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ক্ষমতা ছেড়ে দেন, সে ক্ষেত্রে প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট পাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here