লিখছেন:
অর্পিতা দে,
কথায় আছে ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ আর তাও যদি হয় জামাই ষষ্ঠী তাহলে তো কথাই নেই; ভোজনরসিক বাঙালির যে কোনো উৎসব পার্বনে মাছ থাকবেই৷ এমনিতেই যার রসনাতৃপ্তিতে লাগে পঞ্চব্যঞ্জন সেখানে জামাই আদর মাছের একটামাত্র পদে হয় কখনও! ইলিশ, পাবদা, চিংড়ি, পমফ্রেট, তোপসে, চিতল, কৈ – জামাইয়ের পাত সাজাতে এদের জুড়ি মেলা ভার| কি ভাবছেন তো, কাকে ছেড়ে কাকে রাখবেন| সারাবছরের জামাই আদর তো লেগেই আছে কিন্তু এই দিনটা যেন একটু বেশিই ‘ইস্পিশাল’! এবারের জামাই ষষ্ঠী আবার উইকেন্ডে; প্রতি সপ্তাহান্তের ডিনার কিংবা লাঞ্চ আপনার মেয়ে জামাই কোনো না কোনো তাদের প্রিয় রেস্তোরাঁয় করেই থাকে| এই সপ্তাহের উইকেন্ড স্পেশাল নাহয় আপনার হাতের জাদুতেই থাক| আর তাই পকেটের চিন্তা এই একটা দিন না করে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে ইমেজটা বেশ পোক্ত করতে নেমেই পড়ুন, বাজারের থলি হাতে শুধু বেরিয়ে পড়লেই হলো; আর যদি হয় নতুন জামাই তাহলে আর কাল বিলম্ব নয়| তাই এবারের জামাইষষ্ঠীতে আপনার জামাইয়ের পাতের মেনু সাজাতে দেশের রান্নাঘরে রইলো শুধু মাছেরই নানান পদ যা আবার সেই গতানুগতিক সেই ভাপা, ফ্রাই, কালিয়া কিংবা মালাইকারির থেকে একটু আলাদা|
মাছের কোপ্তা –
উপকরণ: বড় মাছ ৫০০ গ্রাম, আদা ৬ গ্রাম, পিয়াঁজ ১২৫গ্রাম, কাঁচা লঙ্কা ৪–৫ টি, চলার ছাতু ২ বড় চামচ, কিসমিস ৩০গ্রাম, ছোট এলাচ ৩টি, লবঙ্গ ৫টি, দারচিনি ৩গ্রাম, জায়ফলআধখানা, বাদাম ৩০ গ্রাম, নুন সাড়ে ৩ চামচ, পোস্তদানা সাড়ে৪ চামচ, গোলমরিচ গুঁড়ো হাফচামচ, দই ২ বড় চামচ, ঘি ২৫০গ্রাম|
প্রণালী: ৮–১০ পিস্ মাছ ভালো করে ধুয়ে রাখতে হবে| ছোটএলাচ, লবঙ্গ, দারচিনি, জায়ফল গুঁড়িয়ে নিতে হবে| পিয়াঁজলম্বা কুচি করে কেটে মুচমুচে করে ভেজে নিতে হবে| এবারএই ভাজা পিয়াঁজের সাথে আদা, বাদাম, পোস্ত, কাঁচালঙ্কাএকসাথে মিহি করে পিষে নিতে হবে| অল্প ঘিয়ে মাছের টুকরোভেজে নিতে হবে| এরপর এর কাঁটা বেছে গুড়িয়ে নিতে হবে; এই মাছের সাথে গরম মশলার গুঁড়ো, গোলমরিচ গুঁড়ো, বাটামশলা, দই, নুন একসাথে মিশিয়ে মেখে নিতে হবে| এবারকড়াইতে আরো ১ চামচ ঘি দিয়ে মশলা মিশ্রিত মাছ আরোএকবার কষে নিতে হবে| নামিয়ে ঠান্ডা হলে এরসাথে ছোলারছাতু মেখে গোলাকৃতির কোপ্তা বানাতে হবে| কড়াইতে ঘি গরমকরে কোপ্তা লাল করে ভাজতে হবে|
ভেটকি কাসুন্দি –
উপকরণ : ভেটকির ফিলে ৫০০ গ্রাম, আদা ১২ গ্রাম, পিয়াঁজ৫–৬ টি, রসুন ৩–৪ কোয়া, শুকনো লঙ্কা ৩–৪ টি, কাগজি লেবু ১টা, সরষে ১ চা চামচ, রাই ১ চা চামচ, কাসুন্দি ১ বড় চামচ, নুন দেড় চামচ, গোলমরিচ হাফ চা চামচ, দই ১ বড় চামচ, ঘি১ বড় চামচ|
প্রণালী: আদা, পিয়াঁজ, রসুন, সরষে, শুকনো লঙ্কা মিহি করেপিষে একটা পাত্রে রাখতে হবে, এরমধ্যে রাই, গোলমরিচগুঁড়ো, নুন, লেবুর রস, দই, ঘি, কাসুন্দি সব একসাথে মিশিয়েনিতে হবে| মাছের ফিলে ভালো করে ধুয়ে এরমধ্যে ওই মশলামাখিয়ে কলা পাতা কিংবা কুমড়োপাতা তে জড়িয়ে সুতো দিয়েবেঁধে নিতে হবে| তাওয়া অথবা গ্রিল বেশ গরম করে তারমধ্যেএকেকটা কলাপাতায় মোড়া মশলা মাখানো মাছ রাখতে হবে| কলাপাতার একপিঠ শুকিয়ে গেলে আবার উল্টে দিতে হবে| এইভাবে কলাপাতা যখন পুড়ে কালো হয়ে আসবে তখনবুঝতে হবে মাছ সিদ্ধ হয়ে গেছে| এটি ডাল ও ভাতের সঙ্গেখেলে ভালো লাগে|
ইলিশ মাছের ট্রামফ্রেডু –
উপকরণ: ইলিশ মাছ ৫০০ গ্রাম, নুন ১ চা চামচ, কাগজী লেবু১টা, নারকেল ১টা, ঘি ১ বড় চামচ, দেড় কাপ জল, আদা ১ইঞ্চি, শুকনো লঙ্কা ২ টো, মাঝারি সাইজের পিয়াঁজ ৬টি, ছোটপিয়াঁজ ১০টি, কাঁচা লঙ্কা ৪টি, দারচিনি ৩ গ্রাম, ছোট এলাচ১টা, লবঙ্গ ৯টি, জৈত্রি ১ শিষ|
প্রণালী: ইলিশ মাছ ফালা ফালা করে কাটতে হবে| কাগজীলেবুর রস বের করে নিতে হবে| নারকেল কুরে দেড় কাপ গরমজলে ভিজিয়ে দুধ বানিয়ে নিতে হবে| মাঝারি সাইজের ৬টিপিয়াঁজ, আদা, শুকনো লঙ্কা বেটে নিতে হবে| বাকি ছোটসাইজের পিয়াঁজগুলো লম্বা কুচি করে কাটতে হবে| এইকুচানো পিয়াঁজ আর কাঁচা লঙ্কা একসাথে রাখতে হবে|
কড়ায় ঘি গরম করে গরমমশলা, কুচো পিয়াঁজ ও কাঁচা লঙ্কা দিতে হবে| অল্প লাল হয়ে এলে নুন দিতে হবে, এরপর সব বাটা মশলা দিয়ে নাড়তে হবে| প্রায় সাত আট মিনিট কষে, অল্প অল্প নারকেলের দুধ দিয়ে কষ্টে হবে, মশলা লাল হয়ে এলে নারকেলের বাকি দুধ ঢেলে এরমধ্যে মাছ দিতে হবে| মাছ ভাপা হয়ে গেলেই লেবুর রস দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে|
রুই মাছের ঝাল ফ্রেজি –
উপকরণ: রুই মাছ ১ কিলো, পিয়াঁজ বাটা ১ বড় চামচ, আদাবাটা ২চা চামচ, পাতিলেবু ২ টো, ভাজা গুঁড়ো সাজিরা ১চাচামচ, ভাজা গুঁড়ো সামরিচ হাফ চা চামচ, গুঁড়ো গরমমশলাহাফ চা চামচ, হলুদ ১চা চামচ, শুকনো লঙ্কা হাফ চা চামচ, ঘি২ বড় চামচ, চিনি ১ চা চামচ|
প্রণালী: কড়াইতে ঘি গরম করে পিয়াঁজ ভাজতে হবে, লালহলে আদাবাটা, হলুদ, লঙ্কা ও চিনি দিয়ে কষে নিতে হবে| এবার আগে থেকে সিদ্ধ করা মাছ ওই মশলায় দিয়ে কষেনিতে হবে| বেশ ভাজা হলে নুন, লেবুর রস, সাজিরা, সামরিচ, লঙ্কাগুঁড়ো, গরমমশলা গুঁড়ো, দিয়ে নেড়ে নিতে হবে| নামিয়েভাজা পিয়াঁজ কুচি মাছের উপর থেকে ছড়াতে হবে|
শশা ও নারকেলের দুধ দিয়ে চিংড়ি
উপকরণ: বাগদা চিংড়ি ১০–১২ পিস্, শশা আধখানা, কচিপটল ৬টি, নারকেল ১টি, পিয়াঁজ ৯০গ্রাম, জল দেড় কাপ, আদা ৬গ্রাম, রসুন ২কোয়া, ঘি ১ বড় চামচ, কাঁচালঙ্কা ৪টি, শুকনো লঙ্কা ১টি, নুন ১ চা চামচ, দারচিনি ৩গ্রাম, লবঙ্গ ৩–৪টি, ছোট এলাচ ১টি|
প্রণালী: মাছ ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে| শসার খোসাছাড়িয়ে বরফির আকারে কেটে বীজ বের করে নিতে হবে| পটোলের খোসা ছাড়িয়ে তেরছাভাবে ৪ টুকরো করে কাটতেহবে| নারকেলের দুধ বানিয়ে নিতে হবে|
৬০ গ্রাম পিয়াঁজ কুচি করে কাটতে হবে| বাকি ৩০ গ্রাম পিয়াঁজ, আদা, রসুন, শুকনো লঙ্কা একসাথে বেটে রাখতে হবে| এবার কড়াইতে ঘি দিয়ে কুচানো পিয়াঁজ ভেজে নিতে হবে| রং ধরলে বাকি বাটা মশলা এরমধ্যে দিয়ে কষতে হবে হবে| একটু কষা হলে চিংড়ি ও নুন দিতে হবে| জলের ছিটে দিয়ে আরো কিছুক্ষন কষে মাছ বেশ ভাজা ভাজা হলে শশা ও পটল দিতে হবে| মিনিট তিনেক পরে ২ বড় চামচ জল দিতে হবে| জল শুকিয়ে এলে নারকেলের দুধ ঢেলে একবার ফুটিয়ে নামিয়ে নিতে হবে|
গলদা চিংড়ির মালাই পোলাও –
উপকরণ: ঘি ওয়ালা গলদা চিংড়ি 5০০ গ্রাম, সরু চাল ৫০০গ্রাম, পিয়াঁজ ১২৫ গ্রাম, আদা ৬ গ্রাম, শুকনো লঙ্কা ৩টি, তেজপাতা ২টো, টকদই ১২৫ গ্রাম, নুন দেড় চামচ, ছোটএলাচ ৪টে, লবঙ্গ ৬টা, দারচিনি ৬গ্রাম, সাজিরা ৩ গ্রাম, জায়ফল আধখানা, বড় নারকেল ১টা, ঘি ২৫০ গ্রাম, জল ৯কাপ|
প্রণালী: চিংড়ি মাছ বেছে ধুয়ে নিতে হবে| মাছের মুড়োরখোলা যেন থাকে| নাহলে মাছের ঘি বেরিয়ে যাবে|
৬০গ্রাম পিয়াঁজ, আদা, শুকনো লঙ্কা একসাথে পিষে নিতে হবে, চিংড়ি মাছে এই পেশা মশলা, হাফচামচ নুন, দই মাখিয়ে নিতে হবে| বাকি পিয়াঁজ লম্বা কুচি করে কাটতে হবে| জায়ফল গুঁড়িয়ে নিতে হবে| চাল ধুয়ে একটি থালায় ছড়িয়ে রাখতে হবে| নারকেল কুরে দুধ বানিয়ে রাখতে হবে|
কড়াইতে ৩ মাঝারি চামচ ঘি গরম করে ২টো ছোট এলাচ, লবঙ্গ ২-৩ টি, দারচিনি ১ টুকরো দিয়ে ফোড়ন দিয়ে হবে, এরপর মশলা মাখা চিংড়ি মাছ বেশ লাল করে কষে নামিয়ে নিতে হবে|
এরপর কড়াইতে বাকি ১২৫ গ্রাম ঘি গরম করে পিয়াঁজ কুচো মুচমুচে লাল করে ভেজে তুলে নিতে হবে| ওই ঘিয়ে বাকি গোটা গরম মশলা, সাজিরে দিয়ে ফাটতে শুরু করলে চাল দিয়ে দিয়ে হবে| চাল একটু ভাজা হলে নারকেলের দুধ ঢেলে দিয়ে নুন দিতে হবে| আধ ঘন্টা পর চাল সিদ্ধ হয়ে এলে বাকি নারকেলের দুধ, কষা চিংড়ি মাছ, চালের মধ্যে ঢেলে চাপা দিয়ে দমে রাখতে হবে| পরিবেশনের আগে উপর থেকে পিয়াঁজকুচি ছড়িয়ে দিতে হবে|
(শেষ)