দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সমীক্ষা বলছে পৃথিবীতে প্রতি দু মিনিটে একজন মহিলা সারভাইকাল ক্যান্সার বা জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই মহিলাদের মধ্যে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। তবে রাজ্যে জরায়ু ক্যান্সার নির্ধারণ করাতে অসুবিধা রয়েছে। এধরণের ক্যান্সার নির্ধারণের যন্ত্র ছিলনা কোনও সরকারি হাসপাতালে। এবার রাজ্যে প্রথম আসানসোল হাসপাতালে এই যন্ত্র নিয়ে আসা হল। এই মেশিনের নাম কলপোস্কপ।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটু সাবধানতা বজায় রাখলেই জরায়ু মুখে ক্যান্সার একশো শতাংশ প্রতিরোধযোগ্য। মূলত, এই ক্যান্সার হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টাইপ ১৬, ১৮, ৩১, ৪৫ এবং হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস টাইপ টু জরায়ুর মুখের ক্যান্সারের জন্য দায়ী। বিশেষত নিম্ন আয়ের পরিবার থেকে আসা মহিলারাই বেশি এই ধরণের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই সঠিক সময় নির্ধারণ করতে না পারা যাওয়ায় মহিলারা মৃত্যুর ঝুঁকি মধ্যে পড়ছেন।
চিকিৎসকরা আরও বলেন, ক্যান্সার নির্ধারণ করতে ‘প্যাপ স্মেয়ার’ পরীক্ষা করাতে হয়। তার পর আরও গভীরভাবে বিষয়টিকে পর্যালোচনা করার জন্য প্রয়োজন কলপোস্কপি পরীক্ষার। কলপোস্কপ যন্ত্রের সাহায্যে এই পরীক্ষা করা সম্ভব হয়।
চিকিৎসকদের দাবি, কোনও কাটা ছেঁড়া ছাড়াই এই ক্যান্সার নির্ধারণে এটি একটি যুগান্তকারী পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মধ্যমে অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে যোনিপথ, এর বাইরের অংশ জরায়ু মুখে কোষগুলি পর্যবেক্ষণ করে দেখা হয়। কারোর যদি পেপ স্মেয়ারের রিপোর্টে পজিটিভ আসে অথবা পেপ স্মেয়ার রিপোর্ট নেগেটিভ হওয়া সত্ত্বেও যদি জরায়ুর মুখে ক্যান্সার আছে বলে সন্দেহ করা হয় তাদের জন্য এ পরীক্ষাটি উপযোগী।
আসানসোন জেলা হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক তথা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ড.তপন ব্যানার্জী বলেন, এই যন্ত্র রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলির মধ্যে আসানসোলেই প্রথম বসানো হল। রাজ্যে এই যন্ত্র আগে দুটি বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে পরীক্ষা করানো খরচ সাপেক্ষ ব্যাপার। সাধারণ মানুষের পক্ষে তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই এবার কম খরচেই এই চিকিৎসা করাতে পারবেন সাধারণেরা।
জানা গিয়েছে, আগে আসানসোলের মানুষকে ঝাড়খন্ডের ধানবাদের পাটলিপুত্র মেডিক্যাল কলেজে কলপোস্কোপি পরীক্ষা করাতে যেতে হত। অবশেষে আসানসোল জেলা হাসপাতালে সোমবার কোলপোস্কপ মেসিন বসানো হওয়ায় সাধারণ মানুষ খুব খুশি। আপাতত প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ, মনোজিৎ দাস, ডাঃ তপন ব্যানার্জী এবং ডাঃ অসীম ঘোষ সন্দেহজনক মহিলাদের জরায়ু পরীক্ষা করবেন। চিকিৎসক ডাঃ তপন ব্যানার্জী জানান, মাত্রাতিরিক্ত রক্তস্রাব, মাত্রাতিরিক্ত সাদাস্রাব, অনিয়মিত ঋতুস্রাব, কষ্টকর মিলন প্রভৃতি বিভিন্ন জরায়ু সমস্যা নিয়ে প্রায়শই মহিলারা চিকিৎসা করতে আসেন। জেলা হাসপাতালে তাদের সাধারণ ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয় এবং সন্দেহজনক হওয়াতে তাদের জরায়ু বাদ দিতে হয় ফলে অনেকের ক্যান্সার আক্রান্তের ভয় না থাকলেও জরায়ু বাধ্য হয়ে বাদ দিতে হয়। তবে এই ধরণের অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে কোলপোস্কপি থেরাপির দিয়ে জরায়ু ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে পারবেন মহিলারা। আপাতত রোজ ৭-৮জনকে কোলপোস্কপি থেরাপির পরীক্ষা করা হবে সেখানে।