হাইলাইটস
- মুম্বই হামলার চক্রান্তে জড়িত থাকার কথা স্বীকার পাকিস্তানের
- হামলায় আর্থিক সাহায্যের কথাও স্বীকার
- ১৯ জঙ্গির নাম প্রকাশ.
- ২৬ থেকে ২৯ নভেম্বর জঙ্গি হামলায় প্রাণ গিয়েছিল ১৬৪ জনের।
- এখনও সেই ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন নিহতর পরিজনেরা ও আহতরা।
- ১২ বছর পর পাকিস্তান মেনে নিল মুম্বই হামলার সঙ্গে জড়িত ১১ জন জঙ্গি তাঁদের দেশেই রয়েছে।
দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ১২ বছর আগের ঘটনা। ২০০৮ সালের নভেম্বরের অভিশপ্ত সেই রাত। পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী জঙ্গি হামলায় রক্তে ভিজে গিয়েছিল মুম্বইয়ের মাটি। ২৬ থেকে ২৯ নভেম্বর জঙ্গি হামলায় প্রাণ গিয়েছিল ১৬৪ জনের। আহত হন অন্তত ৩০৮ জন। এখনও সেই ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন নিহতর পরিজনেরা ও আহতরা। আর সেই ঘটনার ১২ বছর পর পাকিস্তান মেনে নিল মুম্বই হামলার সঙ্গে জড়িত ১১ জন জঙ্গি তাঁদের দেশেই রয়েছে।
বুধবার শীর্ষ পাক গোয়েন্দা সংস্থা FIA দেশের মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গিদের ১২১০ জনের নাম প্রকাশ করেছে। সেই তালিকায় আছে সেই ১১ জঙ্গি, যারা মুম্বই হামলার সঙ্গেও যুক্ত ছিল। ওই জঙ্গিদের সন্ধান দিলে পুরস্কারের ঘোষণাও করা হয়েছে। পাকিস্তানের তালিকায় নাম রয়েছে মুলতানের মহম্মদ আমজাদ খানের। এই মহম্মদই জঙ্গিদের মুম্বই আনার বোট কেনার সঙ্গে যুক্ত ছিল। একটি মোটর বোট ইঞ্জিন, লাইফ জ্যাকেটের কেনার দায়িত্ব ছিল তার উপরই। আবার শাহিদ গফুর ছিল বোটের চালক। এছাড়াও রয়েছে আরও ৯ জনের নাম। প্রত্যেকেই লস্কর-ই-তইবার সঙ্গে যুক্ত।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, পাকিস্তানের তরফে প্রকাশ করা জঙ্গি তালিকায় হাফিজ সঈদ, মাসুদ আজহার, দাউদ ইব্রাহিম কারও নামই নেই। এই হাফিজই ২৬/১১ হামলার মাস্টার মাইন্ড। আর মাসুদ আজহার পুলওয়ামা হামলার মূল চক্রান্তকারী। কিন্তু তাঁদের নাম রাখেনি পাকিস্তান। আর দাউদকে নিয়ে কখনই কোনও তথ্য স্বীকার করেনি পাকিস্তান। যদিও দাউদের পাকিস্তান থাকা নিয়ে কোনও সংশয়ই নেই। তবে, রাষ্ট্রসংঘের জঙ্গি তালিকায় পাকিস্তানের বাসিন্দা হিসেবে দাউদের নাম রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বই জঙ্গি হামলা ২৬/১১ নামেই পরিচিত৷ পাকিস্তান থেকে জলপথে মুম্বইয়ে ঢুকে ১০টিরও বেশি জায়গায় হামলা চালায় জঙ্গিরা। সন্ত্রাসীরা করাচি বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। তারা গভীর সাগর পর্যন্ত একই জাহাজে ছিল। সাগরে একটি ভারতীয় মাছ ধরার নৌকা ছিনতাই করে এবং মুম্বাই উপকূলে এসে তার নাবিককে হত্যা করে। দক্ষিণ মুম্বইয়ের ১০টিরও বেশি জায়গায় হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা৷ ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাস, ওবেরয় ট্রাইডেন্ট, তাজ হোটেল, লিওপোল্ড ক্যাফে, কামা হাসপাতাল, নরিম্যান হাউস, ইহুদি কমিউনিটি সেন্টার, টাইমস অফ ইন্ডিয়া ভবন ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের পিছনের একটি গলি, মাজাগাঁও ও ভিলে পার্লের একটি ট্যাক্সির মধ্যেও বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল জঙ্গিরা।
মুম্বই জঙ্গি হামলার মাসেই সেই ঘটনার পরিকল্পনায় জড়িত থাকা ও অর্থ সাহায্যের কথা স্বীকার করল পাকিস্তান । এপ্রসঙ্গে পাকিস্তানের তরফে ১৯ লস্কর ই তইবা জঙ্গির নাম পাওয়া যাচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছে, ইফতিখার আলি (ফৈসলাবাদ), মহম্মদ আমজাদ খান (মুলতান), মহম্মদ উসমান (শাহিওয়াল), আবদুল রহমান (বাহওয়ালনগর), আতিক উর রহমান (লাহোর), রিয়াজ আহমেদ (হাফিজাবাদ), শাহিদ গফুর (বাহওয়ালপুর), মহম্মদ নইম (ডেরা গাজি খান), আবদুল শকুর (শারকি করাচি ও সরগোদা), মহম্মদ মুস্তাক (গুজরানওয়ালা), শাকিল আহমেদ (রহিম ইয়ার খান), মহম্মদ সাবির সলফি (মুলতান) ও মহম্মদ উসমানের (লোধরান) মত জঙ্গিদের নাম।
২০০৮ সালে ২৬ /১১ নভেম্বর মুম্বইতে হামলা চালায় একদল লস্কর ই তইবা জঙ্গি। জলপথে এদেশে ঢুকেছিল জঙ্গিরা। মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজা টার্মিনাস, লিওপোল্ড ক্যাফে, তাজ হোটেল এবং নরিম্যান হাউসে হামলা চালায় তারা। বিস্ফোরণ ঘটানো হয় ট্যাক্সিতে। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ১৬৫ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন হেমন্ত কারকরে, অশোক কামটে, বিজয় সালাসকারের মত উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মী ও সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণণের মতো এনএসজি জওয়ানরাও। জঙ্গিদের গুলিতে আহত হন কমপক্ষে ৩০০ জন মানুষ। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ৯ জঙ্গিকে খতম করতে সমর্থ হন নিরাপত্তা কর্মীরা। জীবিত অবস্থায় ধরা পড়ে জঙ্গি আজমল কাসভ। পরে ২০১২ সালে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় তাকে।
এর আগে বিভিন্ন সময় মুম্বই হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার দাবি করেছে ভারত। তবে প্রত্যেক সময়ই ভারতের সেই দাবি খারিজ করে এসেছে পাকিস্তান। যদিও পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ একবার মুম্বই হামলায় সেদেশের তৎকালীন সরকারে জড়িত থাকার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তবে এবার সরাসরি পাকিস্তানের থেকেই উঠে এসেছে এই ১৯ জঙ্গির নাম। সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের তরফে এই নামগুলি প্রকাশ্যে আসা ভারতের দাবিতেই শিলমোহর দিল বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। এখন দেখার এই নিয়ে পরবর্তী কী পদক্ষেপ করে ভারত।