চিনের গোপন নথি ফাঁস করে চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট: করোনা নিয়ে জৈব মারণাস্ত্র বানানোর ছক ছিল ২০১৫ সালেই, দাবি উইকেন্ড অস্ট্রেলিয়ার

0
1394

দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ করোনাভাইরাসের সংক্রামক প্রজাতিদের নিয়ে জৈব মারণাস্ত্র বানানোর ছক কষেছিল চিন? উইকেন্ড অস্ট্রেলিয়ান সাপ্তাহিক পত্রিকার একটি রিপোর্টে তেমনটাই দাবি করা হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সাল থেকেই ভাইরাস নিয়ে জৈব মারণাস্ত্র বানানোর পরিকল্পনা করেছিলেন চিনের সামরিক বিজ্ঞানীরা। চিনা সরকারের পূর্ণ সমর্থনেই এই মারণাস্ত্র বানানোর প্রক্রিয়া চলছিল। সেই গোপন নথিই চলে আসে অস্ট্রেলিয়ার সাপ্তাহিক পত্রিকা উইকেন্ড অস্ট্রেলিয়ার হাতে। সেই তথ্য সামনে এনেই এই চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট সামনে আনা হয়েছে।

উইকেন্ড অস্ট্রেলিয়ানের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সার্স-কভ-২ আসলে একপ্রকার জৈব অস্ত্র। যাকে মারণ ভাইরাসের চেহারা দিয়েছে চিনা বিজ্ঞানীরা। রিপোর্টে আরও দাবি, যে সার্স-কভ-২ ভাইরাস অতিমহামারী ঘটিয়েছে সেটির উৎস প্রকৃতি নয়। কৃত্রিমভাবে তৈরি করা ‘ম্যান মেড ভাইরাস’। অস্ট্রেলিয়ার সাপ্তাহিক পত্রিকা জানাচ্ছে, চিনের যে নথি তাদের হাতে আসে তার নাম ‘দ্য আনন্যাচারাল অরিজিন অব সার্স অ্যান্ড নিউ স্পিসিস অব ম্যান-মেড ভাইরাসেস অ্যাজ জেনেটিক বায়োওয়েপন’। এই নথিতেই স্পষ্ট উল্লেখ আছে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্যই এই মারণাস্ত্র তৈরি করছিল চিন। এবার যদি বিশ্বযুদ্ধ হয় তাহলে জৈব মারণাস্ত্র ও মহাকাশ-যুদ্ধই হবে চিনের প্রধান লক্ষ্য। আর জৈব অস্ত্রের জন্যই ভাইরাস নিয়ে চিনের ল্যাবরেটরিতে গবেষণা শুরু হয়েছিল পাঁচ বছর আগেই।

চিনা নথির সত্যতা যাচাই করেছে অস্ট্রেলিয়ার স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট (এএসপিআই)-এর একজিকিউটিভ ডিরেক্টর, সাইবার বিশেষজ্ঞ পিটার জেনিংসও। তিনি বলেছেন, চিনের যে নথি ফাঁস হয়েছে তার প্রতিটা কথাই তুলে ধরেছে অস্ট্রেলিয়ার সাপ্তাহিক পত্রিকা। সেই নথির প্রতিটি পাতায় লেখা আছে কীভাবে জৈব রাসায়নিক অস্ত্রর তৈরির চেষ্টা করছিল সামরিক বিজ্ঞানীরা। তার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল করোনাভাইরাসের সংক্রামক কিছু প্রজাতিকে। মানুষের শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে মহামারী তৈরি করতে পারে এমন ভাইরাস প্রজাতি নিয়ে মারণাস্ত্র বানাচ্ছিল চিনা বিজ্ঞানীরা। রবার্ট আরও দাবি করেছেন, চিনের খোলা বাজার থেকেই যদি করোনার সংক্রমণ ছড়ানোর দাবি করা হয়, তাহলে সেটাও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। চিনা বিজ্ঞানীরা পরিকল্পনা করেই সেটা করেছিল।

উহানের লেভেল-৪ বায়োসেফটি ল্যাবরেটরিতে মারণাস্ত্র হিসেবেই যে করোনার উৎপত্তি হয়েছিল সে খবর বার বার সামনে এসেছে। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা এমন দাবি আগেও করেছিলেন। এমনকি চিনের কয়েকজন সাংবাদিক, ভাইরোলজিস্টও এমন বিস্ফোরক তথ্য সামনে এনেছিলেন। ২০১৫ সালে রেডিও ফ্রি এশিয়ার একটি রিপোর্টে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। তাদের দাবি ছিল উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে ভয়ঙ্কর, প্রাণঘাতী সব ভাইরাস নিয়ে কাজ করছেন গবেষকরা। এর অর্থ জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্রের দিকে ক্রমশ ঝুঁকছে বেজিং। পরবর্তীকালে ইজরায়েলি সেনা গোয়েন্দা দফতরের প্রাক্তন প্রধান লেফটেন্যান্ট ড্যানি শোহাম বলেছিলেন, বায়ো-ওয়ারফেয়ারের জন্য তৈরি হচ্ছে চিন। জিনের কারসাজিতে এমন ভাইরাস তৈরি করা হচ্ছে যার প্রভাব হবে সাঙ্ঘাতিক। প্রতিরোধের আগেই মহামারীর চেহারা নেবে এইসব ভাইরাসের সংক্রমণ। যে দেশের উপর আঘাত হানা হবে, সেখানে মৃত্যুমিছিল শুরু হয়ে যাবে।

১৯৭০ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য-সহ গোটা বিশ্বেই রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৯৯৩ সালে উহানকে দ্বিতীয় জৈবঅস্ত্র গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করে বেজিং। এমনও অভিযোগ উঠেছিল যে সার্স, এইচ৫এন১ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, জাপানি এনকেফ্যালাইটিস, ডেঙ্গির মতো রোগ ছড়ানোর পিছনেও উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিই দায়ী।

উহানের ল্যাবের এক বিজ্ঞানী দাবি করেছিলেন, ২০১৩ সালে করোনাভাইরাসের মতোই সংক্রামক ভাইরাল স্ট্রেন নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছিল তাদের ল্যাবরেটরিতে। দক্ষিণপশ্চিম চিনের একটি পরিত্যক্ত খনিতে বাদুড়ের মলমূত্র, মৃত বাদুড়ের ছড়িয়ে ছটিয়ে থাকা দেহ পরিষ্কার করতে গিয়ে ছ’জন খনি শ্রমিক অজানা সংক্রমণে আক্রান্ত হন। তাঁদেরও নিউমোনিয়ার মতো উপসর্গ দেখা গিয়েছিল। ওই ছ’জনের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয় সংক্রমণে। ওই খনি থেকেই পরে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া হয় উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে। সেখানে গবেষকরা করোনার মতোই ভাইরাল স্ট্রেনের খোঁজ পান ও সেই নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেন। যদিও এই গবেষণার খবর অস্বীকার করেছে উহান ইনস্টিটিউট, জৈব মারণাস্ত্রের তথ্যকেও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছে।

Previous articlePHOTO FIGHT ফোটো ফাইট:
Next articleপাঁচ মিনিটেই শপথ নিলেন মমতা-মন্ত্রিসভার ৪৩ সদস্য, দুপুরে দফতর বন্টনের সম্ভাবনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here