দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পশ্চিমবঙ্গের আরও কাছে চলে এল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আমপান। এই মুহূর্তে আমপান ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে মাত্র ৪৮০ কিলোমিটার দূরে। দিঘা থেকে ৬৩০ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ৭৫০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। স্থলভাগে যখন আছড়ে পড়বে ঘূর্ণনের গতিবেগ হবে ১৫৫-৬৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। এমনকি তা ১৮০ কিলোমিটারও ছাড়িয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে হবে প্রবল জলোচ্ছ্বাস।
শক্তি বাড়িয়ে ক্রমেই ভূখণ্ডের দিকে ধেয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন আমফান। দিঘার উপকূলের দিকে যত এগিয়ে আসছে, তত বাড়ছে তার গতি। আছড়ে পড়ার আগে পর্যন্ত যদি শক্তিক্ষয় না করে সুপার সাইক্লোনটি, তবে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায়। তিন দিন ধরেই জারি রয়েছে সতর্কতা, চলছে আগাম প্রস্তুতি। প্রশাসনিক স্তরে আলাপ-আলোচনার পাশাপাশি সরানো হচ্ছে উপকূলীয় বাসিন্দাদেরও। প্রতি মুহূর্তে ঝড়ের গতি নজরে রাখছে আবহাওয়া দফতর।
আমফানের প্রস্তুতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের,আস্বাস দিলেন কেন্দ্রের সাহায্যের৷ উপকূল এলাকার প্রস্তুতি কোন পর্যায়ে রয়েছে তা নিয়েই বেশ কিছুক্ষণ কথা হয় দু’জনের। দিঘা-সহ সন্দেশখালি, সুন্দরবন, কাকদ্বীপের মতো উপকূল এলাকায় পৌঁছে গিয়েছে কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল।
১০ হাজার লোক সরানো হল দিঘা উপকূল থেকে, চূড়ান্ত তৎপরতায় চলছে দুর্বল বাঁধ মেরামতির কাজ। মেঘে ঢাকছে দিঘার আকাশও। সমুদ্রের চরিত্র যে বদলে যাচ্ছে তা ধরা পড়েছে বিশেষজ্ঞ এবং বাসিন্দাদের চোখেও। ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ডে এক থেকে তিনটি ঢেউ ওঠে। এখন ঢেউ আসছে প্রতি সেকেন্ডে। উচ্চতাও বাড়ছে সেই ঢেউয়ের। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, প্রতি দুর্যোগের আগেই সঙ্কেত দেয় সমুদ্র। এবারও দুর্যোগ যে তীব্র সেই ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। দিঘা থেকে হলদিয়া পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার উপকূল থেকে ১০ হাজার মানুষকে ইতিমধ্যেই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷ আজ সারাদিন ধরে আরও বহু মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ চলবে। এই এলাকায় রয়েছে মোট ৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। সাধারণ অবস্থায় এক একটি কেন্দ্রে তিন থেকে চার হাজার মানুষ থাকতে পারেন। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য এখন এক একটি কেন্দ্রে দু’হাজারের বেশি মানুষকে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না।
আমপান নিয়ে আবহাওয়া দফতর যা বলছেন – এক নজরে:
ফেরি সার্ভিস চালানো যাবে না
• দিঘা, মন্দারমণি, বকখালিতে কোনও পর্যটক নয়
• সব্জিচাষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে
• ২১ মে-র আগে সমুদ্রে মৎস্যজীবীদের মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে
• দোকান, বাজার বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে
• বুধবার বেলা বাড়লে হাওয়ার গতি বাড়বে
• কলকাতা হালকা থেকে ভারী বৃষ্টি হবে
• ঝড়, বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাস থেকে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে
• দুই ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে বেশি ক্ষতির আশঙ্কা। জোরাল প্রভাব পড়বে হাওড়া, হুগলিতেও।
• ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা
• গাছ, পুরনো বাড়ি নিয়ে সতর্কতা কলকাতায়
• কলকাতায় সকাল থেকে ঝড়। হাওয়ার গতি থাকবে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১৩০ কিমি
• হাওড়া-হুগলিতে হাওয়ার গতিবেগ থাকবে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১২০ কিমি
• বুধবার ঝড়ের গতি থাকবে ঘণ্টায় ১৬৫ থেকে ১৮৫ কিমি
• বুধবার উত্তর দিকে এগবে আমপান
• দিঘা থেকে ৬৩০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে আমপান
• পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, কলকাতায় ঘূর্ণনের গতিবেগ থাকবে ১১০-১৩০ কিলোমিটার।
• উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ঘূর্ণনের গতিবেগ হতে পারে ১৬৫-১৯৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।
• উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৪-৬ মিটার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। নীচু এলাকাগুলো তাতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
• আমপানের প্রভাবে বুধবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি এবং কলকাতায়।
• বৃস্পতিবার ভারী বৃষ্টি হবে উওর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু জায়গায়, নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদের কিছু অংশে।
• বুধবার হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে। বৃহস্পতিবার বৃষ্টি হবে সিকিমে।
• ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও কলকাতায়।
• ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে কাঁচা বাড়ি, পুরনো বাড়িগুলো।
• বিদ্যুতের খুঁটি, গাছ উপড়ে যেতে পারে।
• ২১ মে পর্যন্ত মত্স্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
• বেশ কিছু ট্রেনের রুট বদলের সম্ভবনা রয়েছে। প্রয়োজনে বাতিলও হতে পারে।
• যে এলাকায় ঝড়ের প্রভাব পড়বে, সেখানে বাসিন্দাদের ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নীচু এলাকাগুলো থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়েছে।
নিম্নচাপ চাপ থেকে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর আমপানের গতিমুখ ছিল উত্তর-পশ্চিম দিকে। এখন তা বাঁক নিয়ে সরাসরি এ রাজ্যের দিকে ধেয়ে আসছে। এই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথে রয়েছে দিঘা থেকে বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপ। সোমবার আমপান শক্তি বাড়িয়ে ‘সুপার সাইক্লোনে’ পরিণত হয়েছিল। আজ সামান্য কিছুটা শক্তি হারিয়েছে, তবে এখনও ‘এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোনে’র রূপ নিয়েছে। ফলে সমুদ্র থেকে যখন স্থলভাগে আমপান আছড়ে পড়বে তার গতি থাকবে প্রবল। আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে সাগরদ্বীপ এবং সুন্দরবন অঞ্চলে। যদিও এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না ঠিক কোথায় ছোবল মারবে আমপান। তবে যা গতিপথ রয়েছে তাতে মনে করা হচ্ছে সাগরদ্বীপ, কাকদ্বীপ এবং সুন্দরবন এলাকায় সবচেয়ে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
উপকূলবর্তী এলাকায় সমুদ্র এবং নদীর জল নীচু এলাকায় ঢুকে যাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমপানের মোকাবিলায় তৈরি রয়েছে রাজ্য প্রশাসন। দিঘা থেকে সুন্দরবন সমস্ত উপকূলবর্তী এলাকায় রয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা। তীরবর্তী এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সাইক্লোন সেন্টারে সরানো হয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকা ছাড়াও কলকাতাতেও ব্যাপক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে আমপানের।