দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সেনা সরিয়েছে কি চিন?  দুই দেশের সেনার কোর কম্যান্ডার পর্যায়ের বৈঠকের পরে মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা পিছনো (ডিসএনগেজমেন্ট)শুরু করে দুই দেশই। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল চিনের সেনা ঠিক কতটা সরেছে। ভারতীয় সেনা সূত্র জানিয়েছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার যে জায়গায় চিন ও ভারতীয় বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছিল সেই পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৪ থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার সরেছে লাল ফৌজ। পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা তথা এলএসি বরাবর তিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এখনও ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে চিনা বাহিনী।

ঠিক কোথায় কোথায় চিনা সেনার অবস্থান ধরা পড়েছে? সেনা সূত্র জানাচ্ছে, দেপসাং সমতলভূমি, গোগরা এবং প্যাঙ্গং লেক ও তার উত্তরে পাহাড়ি ফিঙ্গার এলাকাগুলিতে চিনা বাহিনীর তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। ওই তিন এলাকায় ৪০ হাজার সেনা মোতায়েন করে রেখেছে চিন। সেই সঙ্গে রয়েছে তাদের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, সাঁজোয়া গাড়ি, বুলডোজার, ট্রাক ও প্রচুর পরিমাণে অস্ত্রশস্ত্র।

৩০ জুন লাদাখের চুসুল সীমান্তে কোর কমান্ড্যার স্তরে বৈঠকের পরে মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা পিছনো শুরু করে দুই দেশই। পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর তিন এলাকা থেকে সেনাবাহিনী সরানোর কথা ছিল চিনের। তার মধ্যে গালওয়ান উপত্যকা, গোগরা হট স্প্রিং ও প্যাঙ্গক সো থেকে সেনাবাহিনী কয়েক কদম পিছিয়েছে এমনটা ধরা পড়েছিল সাম্প্রতিক উপগ্রহ চিত্রে।  এর পরে ৫ জুলাই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ও চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র মধ্যে বৈঠকের পরে স্থির হয় দুই দেশই বাহিনী পিছোবে এবং মাঝে নিরপেক্ষ অঞ্চল বা বাফার জ়োন তৈরি হবে। 

দুই দেশের সেনা কম্যান্ডার পর্যায়ের শেষ বৈঠক হয় ১৪-১৫ জুলাই। কিন্তু তার পরেও সেনা সরানোর কোনও অভিপ্রায় দেখা যায়নি চিনের। বরং গোগরা ও হট স্প্রিং এলাকায় তাদের সামরিক পরিকাঠামো এখনও রয়েছে। গালওয়ান নদীর উপর দিয়ে যাতায়াতের জন্য যে কংক্রিটের কালভার্ট তৈরি করেছিল চিনা বাহিনী, সেই নির্মাণ এখনও রয়েছে।

গত ১৫ জুন পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৫ এর কাছে দুই দেশের বাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল। এই পেট্রোলিং পয়েন্ট হল চিহ্নিত এলাকা যেখানে সেনাবাহিনী টহল দিতে পারে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় বরাবর এমন কয়েকটি পেট্রোলিং পয়েন্টকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। তবে ভারত-পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণরেখা তথা এলওসি-র মতো এই পেট্রোলিং পয়েন্টগুলো কোনও সেনা ঘাঁটি নয়। শুধুমাত্র চিহ্নিত করে দেওয়া কিছু এলাকা। যেখানে সংযম বজায় রেখে দুই দেশের  বাহিনীই টহল দিতে পারে। এখন কোন পয়েন্টে কোন দেশের বাহিনী কতটা এলাকাজুড়ে টহল দেবে সেই নিয়ে একটা ঠাণ্ডা যুদ্ধ চলতেই থাকে। পেট্রোলিং পয়েন্ট বা পিপি ১৫ রয়েছে গালওয়ান উপত্যকা বরাবর। এই এলাকার দখল নিয়েই দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। চিন ও ভারত দুই দেশই গালওয়ানের পিপি ১৪, গোগরার পিপি ১৭, হট স্প্রিং এলাকার পিপি ১৫ থেকে এলাকা থেকে সেনা পিছনো শুরু করে।

অন্যদিকে, পিপি ১০, পিপি ১১, পিপি ১২ ও পিপি ১৩পয়েন্ট রয়েছে উত্তর লাদাখে, দেপসাং সমতলভূমি বরাবর। রাকি নালা থেকে জীবন নালা পর্যন্ত, যেটা এলএসি-র কাছাকাছি পড়ে না। এই পয়েন্টগুলো ভারতীয় সেনার নিয়ন্ত্রণাধীন। তবে গালওয়ানের সংঘর্ষের পর থেকে এই দেপসাং ভূমিতেও ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে চিনা বাহিনী। ফলে এই পেট্রোলিং পয়েন্টগুলোতে টহল দিতে পারছে না ভারতীয় সেনা।

ভারতীয় সেনা জানাচ্ছে, চিনা বাহিনীর অন্তত ১১টি হাই স্পিড ইন্টারসেপ্টর বোট এখনও ঘোরাফেরা করছে প্যাঙ্গং লেকের জলে। প্যাঙ্গং সো রেঞ্জের উত্তরে ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ ও ফিঙ্গার পয়েন্ট ৫ এর মাঝামাঝি এলাকা থেকে চিনের সেনা কিছুটা পিছিয়েছে ঠিক, তবে এলাকা পুরোপুরি ফাঁকা হয়নি। কয়েকটি তাঁবু, কিছু বুলডোজার ও সামরিক সরঞ্জাম সরানো হয়েছে মাত্র। ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪-এ এখনও চিনা সেনা ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here