কোভিড-১৯ রুখতে চূড়ান্ত পর্যায়ের গবেষণা চলছে আইসিএমআরে,সবুজ সঙ্কেত প্লাজমা-থেরাপিতে

0
1331

দেশের সময়,ওয়েবডেস্কঃ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সারিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির রক্তরস বা প্লাজমাতেই রোখা যাবে মারণ ভাইরাসকে, এমন দাবি করেছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরাই। কোভিড-১৯ সারিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন যে ব্যক্তি তার প্লাজমাকে বলে ‘Convalescent Plasma’। এই প্লাজমা আক্রান্তের শরীরে প্রয়োগ করে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ানোর যে পদ্ধতি, তাকেই বলে প্লাজমা-থেরাপি বা Convalescent Plasma Therapy। মারণ ভাইরাসকে রুখতে এবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকও এই প্লাজমা-থেরাপিতেই সবুজ সঙ্কেত দিতে চলেছে। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনে আইসিএমআরের তরফে জানানো হয়েছে, প্লাজমা-থেরাপি নিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ের গবেষণা চলছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চে। এই থেরাপি এখন ড্রাগ কন্ট্রোলের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
আইসিএমআরের তরফে জানানো হয়েছে, প্লাজমা-থেরাপির গবেষণা এখনও পরীক্ষার স্তরেই রয়েছে। ফাইনাল স্টেজের পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পরেই এই এই চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া যাবে। আইসিএমআরের তরফে এও জানানো হয়েছে, এখনই সব রোগীর উপরে প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হবে না। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পরেই বলা যাবে কোন কোন রোগীর উপরে এই থেরাপি প্রয়োগ করতে পারবেন ডাক্তাররা। তবে জটিল কেসের ক্ষেত্রে এবং রোগীর সংক্রমণ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছলে তবেই এই থেরাপির প্রয়োগ করা যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে আইসিএমআরের তরফে।
প্লাজমা-থেরাপি প্রয়োগের কথা ইতিমধ্যেই ভেবেছে কেরল সরকার। জানানো হয়েছে, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের অনুমোদনেই এই প্লাজমা-থেরাপি নিয়ে ট্রায়াল শুরু করেছেন কেরলের ডাক্তার ও বিজ্ঞানীরা। সরকারি উদ্যোগে তৈরি হয়েছে বিশেষ টাস্ক ফোর্স। কেরলের ডাক্তাররা বলছেন, প্লাজমা-থেরাপির প্রয়োগ কীভাবে হতে পারে তার একটা প্রোটোকল তৈরি হয়েছে। এই থেরাপি প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনেক নিয়মও আছে। দাতা ও গ্রহীতার রক্তের গ্রুপ, রক্তের আরও কয়েকটি পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও তাঁকে ৭-১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রেখে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। সংক্রমণ সম্পূর্ণ সেরে গেছে নিশ্চিত হলেই তাঁর প্লাজমা নেওয়া হয় থেরাপির জন্য।
করোনা সংক্রামিতের উপর ‘Convalescent Plasma Therapy’ প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত অনেকদিন আগেই নিয়েছে মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) । সুস্থ ব্যক্তির রক্তরস দিয়ে আক্রান্তের চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে গবেষণা চলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন ও ব্রিটেনে। সময়সাপেক্ষ ভ্যাকসিন বা ড্রাগের বদলে এখন প্লাজমাকেই হাতিয়ার করতে চলেছেন ডাক্তার-বিজ্ঞানীরা। সেই পথে প্রথম আলো দেখিয়েছেন, ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের চিফ কোয়ালিটি অফিসার ফাহিম ইউনুস। তিনি দাবি করেছেন, এই প্লাজমা-থেরাপিতে তিনি পাঁচজন ভাইরাস আক্রান্ত মরণাপন্ন রোগীকে সারিয়ে তুলেছেন।

কী এই প্লাজমা-থেরাপি? করোনা রোগীদের উপরে কীভাবে কাজ করবে?

সুস্থ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এমন ব্যক্তির প্লাজমা বা রক্তরস নিয়ে চিকিৎসার পদ্ধতি নতুন নয়। এই প্লাজমা-থেরাপিকেই এবার সার্স-কভ-২ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কাজে লাগানো শুরু করেছেন গবেষকরা। শরীরে সংক্রামক জীবাণু ঢুকলে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এই রক্তরস। মানুষের শরীরের ৫৫% হল প্লাজমা বা রক্তরস। হালকা হলুদাভ তরল যার ৯৫% জল এবং ৬-৮% বিভিন্ন প্রোটিন (অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন, ফাইব্রিনোজেন), গ্লুকোজ, ইলেকট্রোপ্লেট, হরমোন ও আরও নানা উপাদান থাকে। এই রক্তরস অ্যান্ডিবডি তৈরি করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে ও যে কোনও সংক্রমণ আটকাতে পারে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ সারিয় সুস্থ হয়ে উঠেছেন যে ব্যক্তি তাঁর রক্তরস ভাইরাস-প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। অর্থাৎ সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেনকে আটকাতে যে ধরনের অ্যান্টিবডি দরকার সেটা তৈরি হয়েছে রক্তরসে। কাজেই সেই সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির রক্তরস যদি প্রয়োগ করা যায় (Blood Plasma Transfution) আক্রান্তের শরীরে, তাহলে সেই অ্যান্টিবডিকে হাতিয়ার করেই রোগীর দেহকোষ লড়াই চালিয়ে যাবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে। এই প্লাজমাকেই বলা হচ্ছে convalescent plasma। অর্থাৎ convalescent মানে হল সেরে ওয়া ব্যক্তির রক্তরস (Recovered) ।
বিজ্ঞানীদের আরও দাবি, দাতার রক্তরসে যদি শক্তিশালী অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তাহলে আক্রান্তের সংক্রমণ ৩-৭ দিনে সারতে পারে। একজন দাতার প্লাজমা থেকে কম করে দু’জন রোগীর চিকিৎসা হতে পারে।
জন হপকিনস ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের মলিকিউলার বাযোলজির প্রধান আরতুরো ক্যাসাডাভেল বলেছেন, প্লাজমা থেরাপিতে সংক্রমণ সারানোর উপায় আছে। সেরে ওঠা ব্যক্তিরা যদি প্লাজমা দান করতে এগিয়ে আসেন, তাহলে বাঁচানো যাবে বহু মানুষকে। নিউ উয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতাল, ইউনিভার্সিটির অব গ্লাসগোতে প্লাজমা-থেরাপির ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছে।

Previous article২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে আরও ১২ জনের সংক্রমণ , সেরে উঠেছেন ৩ জন, মোট করোনা অ্যাকটিভ ৮০: মুখ্যমন্ত্রী
Next articleএবার দ্রুত জ্বরের খবর যাবে সরকারের কাছে ‘সন্ধানে’র মাধ্যমে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here