দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনা আবহে কালীপুজো এবং দেওয়ালিতে বাজি পোড়ানো থেকে বিরত থাকার জন্য বলল রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করেন।
মুখ্য সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় পরে সাংবাদিকদের জানান, ‘অতিমারীর পরিস্থিতিতে বায়ুদূষণ করোনা সংক্রমিত রোগীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। বিশেষ করে যাঁদের শ্বাসকষ্ট আছে তাঁদের কথা ভেবে মানবিকতার খাতিরে এ বছর বাজি না পোড়ানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে রাজ্যবাসীর কাছে।
অনেক রোগী কোভিড হাসপাতালে ভর্তি, অনেকে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। মানবিক দিক থেকে বিচার করে আমাদের সবারই খেয়াল রাখা উচিত এই সময়ে বায়ুদূষণ যেন না বাড়ে। সুপ্রিম কোর্ট–সহ বিভিন্ন এজেন্সি যে সমস্ত বাজি পোড়ানো নিষিদ্ধ করেছে সেগুলো একেবারেই ব্যবহার করা যাবে না। শব্দদূষণ ঘটায় এমন বাজিও পোড়ানো যাবে না। মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত শারদোৎসবের মতোই কালীপুজো এবং দেওয়ালিতে সবার সহযোগিতা নিয়ে শান্ত, সংযত ও সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হবে।’
মুখ্য সচিব বলেন, ‘পুজো বন্ধ হোক এটা আমরা কেউই চাই না। শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব যেন উৎসবের মতোই পালন করা হয়। এবারেও মণ্ডপে মাতৃপ্রতিমার মাথার ওপর আচ্ছাদন থাকবে, কিন্তু চারপাশ খোলাই রাখতে হবে। সমস্ত রকম স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পুজো করতে হবে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। দুর্গাপুজো যেভাবে পুজো কমিটি, ক্লাব স্থানীয় পুলিশ–প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করে সুন্দরভাবে উদযাপন করেছিল, এবারেও একইভাবে বাজি এড়িয়ে সুষ্ঠুভাবে এই দুই উৎসব পালন করা হবে বলে আশা করছে প্রশাসন।
দুর্গাপুজোয় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কালীপুজোর বিসর্জনের ক্ষেত্রেও শোভাযাত্রা হবে না। ক্লাব, পুজো কমিটি যেন স্থানীয় পুলিশ–প্রশাসনের সঙ্গে পরিকল্পনা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিসর্জনের ব্যবস্থা করে। এদিন বৈঠকে মুখ্য সচিব ছাড়াও ছিলেন স্বরাষ্ট্র সচিব এইচ কে দ্বিবেদী, তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব শান্তনু বসু, রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র, এডিজি আইনশৃঙ্খলা জ্ঞানবন্ত সিং ও কলকাতা পুলিশের নগরপাল অনুজ শর্মা।
দুর্গাপুজোর ধাঁচে রাজ্যে কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজোতেও ভিড় এড়াতে নো এন্ট্রির দাবি তুলে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হল কলকাতা হাইকোর্টে। অজয় দে নামে এক ব্যক্তি এই মামলা করেছেন। অপর দিকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে কালীপুজোয় যে কোনও ধরনের বাজি উৎপাদন ও বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে পৃথক একটি মামলা করলেন অনুসূয়া চক্রবর্তী নামে এক মহিলা।মামলাকারীর বক্তব্য, চিকিৎসকরা ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন বাজির দূষণ থেকে ফুসফুসজনিত রোগ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যে দূষণ করোনা আক্রান্তদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আদালত যে কোনও ধরনের বাজি উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করুক। অন্যদিকে অজয় দে–র বক্তব্য, দুর্গাপুজোয় অযথা ভিড় থেকে করোনা সংক্রমণ যাতে না বাড়ে তার জন্য একগুচ্ছ নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। মণ্ডপ চত্বরে নো এন্ট্রি জোন ঘোষণা করা হয়েছিল। একইভাবে কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো, কার্তিক পুজোতেও একই নির্দেশিকা জারি করা হোক।
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ এবং আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ স্মারক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা কমিটির পক্ষ থেকে বায়ুদূষণ রুখতে রাজ্যবাসীর কাছে দীপাবলি ও ছটপুজোয় বাজি না পোড়ানোর আবেদন জানানো হয়েছে। ‘বাজি ধরব না’— এই স্লোগানকে সামনে রেখে তারা সচেতনতা কর্মসূচি নিয়েছে।
অন্যদিকে, হাইকোর্টে দায়ের হওয়া মামলা নিয়ে সারা বাংলা আতশবাজি উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান বাবলা রায় এদিন সাংবাদিক বৈঠক করেন। তিনি জানিয়েছেন, আতশবাজি বন্ধ করার চেষ্টার পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। আতশবাজির সঙ্গে ৩১ লক্ষ মানুষ জড়িত। তবে হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে আগামী দিনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।