দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ গত ১৭ এপ্রিল নবান্ন থেকে সমস্ত জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ ছিল, “আমি দেখতে চাই ১৪দিনের মধ্যে হাওড়া আর কলকাতা রেড জোন থেকে অরেঞ্জ জোনে চলে এসেছে।”
চোদ্দ পেরিয়ে একুশ দিন হয়ে গেছে। কলকাতা ও হাওড়া এখনও রেড জোনে রয়েছে বলেই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তবে নবান্ন এখন আর আলাদা করে জোনের রঙ জানাচ্ছে না। রঙ নিয়ে সেই বিতর্কে না ঢুকলেও দেখা যাচ্ছে, হাওড়া ও কলকাতায় সংক্রমণ কমেনি। বরং রাজ্যের এই দুই জেলাতেই আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তা ছাড়া এই দুই জেলাতেই কন্টেইনমেন্ট জোনের সংখ্যাও বেড়েছে। শুক্রবার সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যানেই দেখা যাচ্ছে, রাজ্যে এখন কন্টেইনমেন্ট জোন সংখ্যা ৫৫০টি। গত আট দিনে রাজ্যে ১০০-র বেশি কন্টেইনমেন্ট জোন বেড়েছে। এই অতি স্পর্শকাতর ৫৫০টি এলাকার মধ্যে ৩১৯টি কলকাতার, হাওড়ার ৭৬টি।
স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, কলকাতায় এখন মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮৪৬, হাওড়ায় ৩৬২। রাজ্যের মোট আক্রান্তের মধ্যে ৬৪ শতাংশই এই দুই জেলার বাসিন্দা। এই দুই জেলা থেকেই যে অধিকাংশ মানুষ সংক্রামিত হচ্ছেন তা জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারাও। সে ব্যাপারে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাও উদ্বেগ জানিয়েছেন কয়েকদিন আগে।
এখন প্রশ্ন, রাজ্য সরকারি কি তা হলে ব্যর্থ হয়েছে?
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, এ ক্ষেত্রে সাফল্য বা ব্যর্থতা এভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না। সংক্রামিতের সংখ্যা বাড়া মানেই রাজ্য সরকার ব্যর্থ, তা বলাও যায় না। কোনও সরকারই চায় না যে আরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হোক। তাঁর কথায়, এটা ঠিকই যে কলকাতায় ও হাওড়ায় লকডাউন আরও কঠোর ভাবে বলবৎ করার জন্য রাজ্য সরকার আরও কঠোর হতেই পারত। কিন্তু এও ঠিক যে মানুষকেও সচেতন হতে হবে। লকডাউনের মধ্যে রাস্তায় বেরোতে বারণ করেছে সরকার। সে ব্যাপারে ক্রমাগত বলাও হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও মানুষ সচেতন না হলে, বাজারে ভিড় জমালে, সোশাল ডিস্টেন্সিং না মানলে সংক্রমণ ছড়াতেই পারে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের এক অফিসার বলেন, প্রশাসনের সব সময়েই একটা লক্ষ্য থাকে। চেষ্টা থাকে তা পূরণ করার। তার একটা বাস্তবিক দিক অবশ্যই থাকে। সেই সঙ্গে একটা লক্ষ্য বেঁধে দিয়ে প্রশাসনের কর্মী ও সাধারণ মানুষকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও হয়তো জানতেন যে ১৪ দিনে অরেঞ্জ জোনে আনা সম্ভব নয়। কিন্তু সবাই যাতে সেই লক্ষ্য নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন, সে জন্য প্রশাসক হিসাবে সবাইকে উজ্জীবিত করতে চেয়েছিলেন তিনি। এই দুই জেলাতেই সরকার টেস্টিং ও নজরাদারি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, সংক্রমণ ছড়ানোর হার দ্রুত কমিয়ে ফেলা যাবে।