দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বুধবার দু’দিনের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। হেস্টিংয়ে বিজেপি দফতরে এদিন নির্বাচন প্রকোষ্ঠের উদ্বোধন করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ৯টি দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন। সেই অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তৃতার হাইলাইটস:
বিজেপির শুরুর দিনে দু’জন সর্বভারতীয় এই বাংলারই ভূমিপুত্র ছিলেন।
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণাতেই জনসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কে ছিলেন? পাকিস্থান যদি ভারতকে ভাগ করে থাকে, তা হলে শ্যামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ছিলেন সেই ব্যক্তি যিনি পাকিস্তানকে ভেঙে দিয়েছিলেন।
যে মাটিতে আমরা দাঁড়িয়ে রয়েছি, যাকে আমরা পশ্চিমবঙ্গ বলছি, একে বাঁচানো এবং ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যে রাখার জন্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকা ছিল অসামান্য।
আমি আনন্দিত, যে মিশনের জন্য তিনি জীবন দিয়েছিলেন, ‘এক দেশে এক নিশান এক বিধান’—সেই ৩৭০ ধারা বিলোপ করে মোদী সরকার তাঁর স্বপ্নপূরণ করেছে।
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ওই কথা মনে পড়ছে যা তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজের সামনে ১৯৩৫ সালের ৭ ডিসেম্বর বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘কাল্টিভেট দি হ্যাভিট অব ডিসিপ্লিন অ্যান্ড টলারেন্স… লার্ন টু অ্যাপ্রিশিয়েট দ্য পয়েন্ট অফ ভিউ অফ অপোনেন্টস’। মতাদর্শের প্রতি নিষ্ঠার পাশাপাশি সহিষ্ণুতা রাখতে হবে। বিপক্ষের বক্তব্যকেও শুনতে হবে। সে কথা আজও সার্থক।
আমরা যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখি—যাকে বলে অসহিষ্ণুতা। তার দ্বিতীয় নামই অসহিষ্ণুতা। রাজনৈতিক দৃষ্টিতে মতের আদানপ্রদানই স্বাস্থ্যকর। পশ্চিমবঙ্গ তো মতের আদানপ্রদানের জন্যই পরিচিত। বিশ্বভারতী এখানে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে জন্মেছেন।
কিন্তু আজ এখানে দেখি অসহিষ্ণুতা কীভাবে বাড়ছে। আমি এখানে দলীয় দফতরের উদ্বোধন করতে এসেছি। আগামী দিনে ৩৮টি দফতর। বিজেপির দুরকম বৃদ্ধি হচ্ছে। সফ্টওয়ার এবং হার্ডওয়ারের।
অফিস আর পার্টি অফিসের মধ্যে ফারাক রয়েছে। অফিস সকাল দশটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে। আর পার্টি অফিস অহোরাত্র চলে।
আমাদের পার্টি অফিস থেকেই দল চলে। আর অন্য দলে বাড়ি থেকে পার্টি চলে। তাদের পরিবারই পার্টি। পরিবারেই তা সীমিত। তৃণমূল তার থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। তৃণমূলও পরিবারের পার্টি। কিন্তু বিজেপির পার্টিই হল পরিবার। কারণ আমাদের পার্টি কারও বাড়ি থেকে চলে না।
আমরা শুধু বিহারে জিতিনি, মধ্যপ্রদেশ, মণিপুর, উত্তরাখণ্ড, হায়দরাবাদে জিতেছি। বিহারে আমাদের স্ট্রাইক রেট ৬৭ শতাংশ।
রাজস্থানে পঞ্চায়েত ভোট হয়েছে। সেখানে এক তরফা সমর্থন বিজেপি পেয়েছে। জেলা পরিষদের ভোট।
কৃষকদের আশীর্বাদ বিজেপিই পেয়েছে সেখানে। ওটা শহরের ভোট ছিল না। গ্রামের ভোট ছিল।
বাংলাতেও বিজেপি দীর্ঘ লড়াই লড়েছে। ৯ বছর আগে আমাদের ভোট শতাংশ ছিল ৪ শতাংশ। ২০১৯ সালে সেই ভোট শতাংশ পৌঁছে যায় চল্লিশে। আর একুশ সালে বাংলায় দু’শর বেশি আসনে জিতবে বিজেপি।
বাংলায় এসে আমার দুঃখও হয়, লজ্জাও লাগে। যে বাংলা সোনার বাংলা ছিল, সেখানে দুর্নীতি, ভাই-ভাতিজাবাদ, রেষারেষি গ্রাস করেছে।
আমাদের ১৩০ কর্মীকে মারা হয়েছে। আমি একশো লোকের তর্পণ নিজে করেছি। বাংলা এজন্য পরিচিত? কী হচ্ছে কী? এটা মানবতার বিরুদ্ধে। এটা চরম অসহিষ্ণুতা। যে রাজ্যে মতাদর্শের লড়াই বন্ধ হয়ে যায়, হিংসা শুরু হয়ে যায়, ধরে নেওয়া যায় সেখানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে গেছে।
আধুনিক অস্ত্র দিয়ে বিজেপি কর্মী মারা হচ্ছে। সরকারের মদতপুষ্ট সন্ত্রাস চলছে। কিন্তু প্রশাসনও হুঁশিয়ার থাকুন। এই সরকার চিরকাল থাকবে না।
এখানে তুষ্টিকরণের রাজনীতি চলছে। ৩০ জুলাই ইদের ছুটি আর ৫ অগস্ট রাম মন্দিরের শিলান্যাসের দিন লকডাউন ঘোষণা করা হয় এখানে। ইদের ছুটিতে আমাদের আপত্তি নেই। আমরা চাই সবাই ইদে খুশি থাকুন। কিন্তু সবার ভাবাবেগ অক্ষুন্ন রাখতে হবে।
বাংলায় আমাদের বিকল্প উন্নয়নের মডেল রাখতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে।
রাজ্যকে তোপ নাড্ডার:
জেপি নাড্ডা বলেন, অম্বিকেশ মহাপাত্র একটা কার্টুন এঁকেছিলেন বলে তাঁকে ধরে নিয়ে এসেছিল পুলিশ। আরামবাগ টিভির এডিটর সফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, কারণ তিনি তৃণমূলের দুর্নীতি সবার সামনে এনেছিলেন।
মণীশ শুক্লার হত্যা নিয়ে নাড্ডা:
জেপি নাড্ডা বলেন, মণীশ শুক্লাকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে। আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এখনও কোনও বিচার হয়নি। এখানে আইনশৃঙ্খলা রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়।
কর্মী মৃত্যু প্রসঙ্গে নাড্ডা:
জেপি নাড্ডা বলেন, আজ সকালে আমাদের একজন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে মোট ১৩০ জন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে৷
জেপি নাড্ডাকে কালো পতাকা:
জেপি নাড্ডার সামনে কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ তৃণমূলের। সঙ্গে ছিল গো ব্যাক লেখা পোস্টারও। ধস্তাধস্তির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়