দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আমেরিকা থেকে দ্বিতীয় বিমানটি ভারতে এসে পৌঁছল কোভিড চিকিৎসার সরঞ্জাম বোঝাই হয়ে। জানা গেছে, এয়ারক্রাফট সি ১৭ গ্লোবমাস্টার নামের ওই বিমান ভারতে সাহায্য নিয়ে এসে পৌঁছেছে। ক্যালিফোর্নিয়ার ট্রাভিস এয়ারফোর্স বেস থেকে করোনা যুদ্ধ সামগ্রী নিয়ে দিল্লিতে পৌঁছয়।
সূত্রের খবর, এই বিমানে ভারতকে অক্সিজেন সাপোর্ট, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, অক্সিজেন জেনারেশন ইউনিট, পিপিই, ভ্যাকসিন তৈরির কাঁচামাল, ব়্যাপিড ডায়গনস্টিক টেস্ট, থেরাপিউটিক্স এবং পাবলিক হেলথ অ্যাসিস্টেন্স পাঠিয়েছে আমেরিকা।
এই প্রথম নয়, মার্কিন সাহায্যের প্রথম বিমানে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের কোভিড মোকাবিলা সামগ্রী ভারতে পাঠানো হয়েছিল আগেই। সেইবার মার্কিন বিদেশ উন্নয়ন এজেন্সির তরফে জানানো হয়েছিল, ৪৪০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও রেগুলেটর ছিল, ছিল ৯ লক্ষ ৬০ হাজার র্যাপিড ডায়াগনস্টিক টেস্ট কিট। পাঠানো হয়েছিল এক লক্ষ এন-৯৫ মাস্কও। সব মিলিয়ে উপকৃত হয়েছিলেন ১০ মিলিয়ন ভারতীয়।
এবার ফের দ্বিতীয় বিমান এল ভারতে। আগামী সপ্তাহে এমন আরও কয়েকটি মার্কিন বিমান করোনার যুদ্ধ সামগ্রী নিয়ে এসে পৌঁছবে বলেও জানা গেছে। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে খবর, করোনার বিরুদ্ধে ভারতকে লড়তে সাহায্যই করছে বাইডেনের আমেরিকা। গত বছরে কোভিড ঝড়ের প্রথম দফায়য় ভারত প্রচুর হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ পাঠিয়েছিল আমেরিকাকে। এবার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারত বিপন্ন। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আমেরিকা।
The first of several emergency COVID-19 relief shipments from the United States has arrived in India! Building on over 70 years of cooperation, the United States stands with India as we fight the COVID-19 pandemic together. #USIndiaDosti pic.twitter.com/OpHn8ZMXrJ
— U.S. Embassy India (@USAndIndia) April 30, 2021
কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ঝাপটা যে এ দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে, সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে তা ঠিক কতটা, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে ভারতের ১৬ বছরের বিদেশ-নীতির সঙ্গে আপস। মানুষের প্রাণ বাঁচাতে চিকিৎসা পরিষেবা আরও পোক্ত করার জন্য একাধিক দেশের কাছে হাত পাততে হচ্ছে এবার ভারতকে। আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়ার মতো দেশ তো বটেই, সীমান্ত সংঘাত ঘিরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকা চিনের কাছ থেকেও সাহায্য নেওয়ায় আর আপত্তি নেই দিল্লির।
যদিও সাউথ ব্লকের এক আধিকারিকের যুক্তি, ‘‘ভারত কারও কাছে সাহায্য চায়নি। এগুলো সব টাকা দিয়ে কেনা হচ্ছে। তবে কোনও কোনও দেশের সরকার বা সেখানকার বেসরকারি সংস্থা যদি উপহার হিসেবে কিছু সাহায্য বা অনুদান দিতে চান, তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গেই গ্রহণ করব আমরা।’’
খবর মিলেছে, আজই ৩০০ অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পাঠাচ্ছে হংকং। আজই ইন্ডিগোর ফ্লাইটে এসে পৌঁছবে সেগুলি। দরিদ্র দেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে চিহ্নিত হয়ে যাওয়া এড়াতে, কোনও রকম বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে বিদেশে থেকে ত্রাণ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বহু আগে। সাহায্য ছাড়াই বহু বিপর্যয় পারও করেছে ভারত। কিন্তু মহামারীর দ্বিতীয় দফার প্রকোপে ১৬ বছর আগের সেই নীতি বদলাতে হল।
এমনকি পাকিস্তান থেকেও সাহায্যের প্রস্তাব এসেছে, যা এখনও বিবেচনার পর্বে রয়েছে বলে জানা গেছে।
শুধু হংকং নয়, ৭০০টি কনসেনট্রেটর পাঠিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আয়ারল্যান্ডের মতো একটা দেশও। সেখান থেকে আজই এসে পৌঁছচ্ছে ৭০০ অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ও ৩৬৫ ভেন্টিলেটর। এর পরে এল আমেরিকার সাহায্যও।
অথচ তথ্য বলছে, এ দেশে কোভিডের দ্বিতীয় ওয়েভ যখন শুরু হল, তখনও ভ্যাকসিন নির্মাণে ও চিকিৎসা পরিষেবায় বেশ এগিয়ে ভারত। এমনকি বিশ্বের একাধিক দেশকে চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ সরবরাহ করে ‘আত্মনির্ভর’ হওয়ার বার্তাও দিয়েছিল কেন্দ্র। কমপক্ষে ৮০টি দেশে সাড়ে ৬ কোটি প্রতিষেধক পাঠানো হয়েছিল।
কিন্তু এ ছবি পাল্টে গেছে নির্মম ভাবে। ভয়ঙ্কর সঙ্কট নেমে এসেছে দেশে। দেশের নানা প্রান্তে অক্সিজেনের হাহাকার, বেড নেই, ওষুধ নেই। মৃত্যুমিছিল দীর্ঘায়িত প্রতিদিন। ফলে আত্মনির্ভরতার বার্তা দেওয়ার দু’সপ্তাহের মধ্যেই মোদী সরকার সাহায্যের মুখাপেক্ষী।