করোনা-যুদ্ধে ছয় কম্যান্ড, দেশজুড়ে ১৬ হাজার আইসোলেশনের ব্যবস্থা,সাহায্যপ্রতিবেশী দেশগুলিকেও

0
1040

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আরও বেশি আইসোলেশন ইউনিট, অনেক বেশি সংখ্যক কোয়ারেন্টাইট বেড, দেশজুড়ে অন্তত ১৬ হাজার মানুষের জন্য আইসোলেশনের বিশেষ ব্যবস্থা করছে ভারতীয় বাহিনী। সংক্রমণ ধরা পড়লে চিকিৎসার জন্য আইসোলেশনের ঘাটতি রয়েছে। হাসপাতাল-নার্সিংহোমগুলিতে ইতিমধ্যেই ভিড় বাড়ছে। এমন সঙ্কটের পরিস্থিতিতে হাল ধরতে চলেছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছয় কম্যান্ড।


করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে দেশে। শুক্রবার সকাল ৯টা অবধি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে করোনা আক্রান্তের মোট সংখ্যা ছিল ২৩০১। মৃত ৫৬, আইসোলেশনে রয়েছে ২০৮৮। এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া থেকে আটকাতে দেশজুড়ে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কোভিড-১৯ টেস্টের জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। বেশকিছু করোনাভাইরাস হটস্পটও চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের আইসোলেশনে রেখে ফাস্ট-ট্র্যাক কিটের সাহায্যে কোভিড-১৯ টেস্ট করা হবে। এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে আইসোলেশনে রাখার জন্য যে ব্যবস্থার দরকার সেটাই করতে চলেছে সেনাবাহিনী।

সেনা স্কুল-হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট, ভাইরাল-টেস্টের ব্যবস্থা

সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, দেশের নানা প্রান্তের সেনা স্কুল, কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়গুলিকে আইসোলেশন ইউনিট বানানো হবে। সেনা ক্যাম্পগুলিকেও কাজে লাগানো হবে। চিকিৎসার পরিকাঠামো গড়ে তুলতে ইতিমধ্যেই ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। খুব কম সময়ের মধ্যেই আইসোলেশনের সব ব্যবস্থা পাকা করে ফেলা হবে। প্রাথমিকভাবে ১৫,৭০০ জন সংক্রামিত রোগী বা সংক্রমণ সন্দেহে আসা লোকজনকে রাখার ব্যবস্থা থাকবে সেইসব আইসোলেশন ইউনিটে।
হরিয়ানার মানেসরের কাছে সেনাবাহিনীর তৈরি ৪০০ বেডের আইসোলেশন ইউনিট রয়েছেই। চিন ও বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আসা ভারতীয় নাগরিক ও পর্যটকদের সেখানেই কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া আইটিবিপি-র সেনা ছাউনিতেও বড়সড় আইসোলেশন ক্যাম্প বানানো হয়েছে। সেখানেও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়তে থাকার সময়েই মুম্বইতে ছ’টি কোয়ারেন্টাইন ইউনিট বানিয়েছিল নৌসেনা ও বায়ুসেনার আধিকারিকরা। তাছাড়াও জয়সলমীর, জোধপুর, হিন্ডন এয়ার বেস ও চেন্নাইতে সেনাবাহিনীর তৈরি আইসোলেশন ইউনিটে এখনও পর্যবেক্ষণে রয়েছেন অন্তত ১,৭৩৭ জন। আপৎকালীন অবস্থার জন্য আরও ১৫টি আইসোলেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে সেনা সূত্রে খবর।

সেনা সূত্রে খবর, দেশের ৫১ টি সেনা হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বেড তৈরি রাখা হয়েছে। কলকাতা, বিশাখাপত্তনম, কোচি, হায়দরাবাদের কাছে ডান্ডিগাল, কানপুর, জয়সলমীর, জোরহাট ও গোরক্ষপুরের সমস্ত সেনা হাসপাতালে এই সুবিধা রয়েছে।
আইসিএমআরের সহযোগিতায় সেনা হাসপাতাল ও কলেজগুলিতে কোভিড-১৯ টেস্টের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। দিল্লির সেনা হাসপাতাল, বেঙ্গালুরুর এয়ার ফোর্স কম্যান্ড হাসপাতাল, পুণের আর্মড ফোর্স মেডিক্যাল কলেজ, লখনৌয়ের কম্যান্ড হাসপাতাল (সেন্ট্রাল কম্যান্ড) ও উধমপুরের (নর্দার্ন কম্যান্ড)কম্যান্ড হাসপাতালে ভাইরাল-টেস্টের ব্যবস্থা করেছে সেনাবাহিনী। ফাস্ট-ট্র্যাক টেস্টের জন্য আরও ছ’টি হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে সেনার তরফে।

প্রতিবেশী দেশকে সাহায্য ভারতীয় বাহিনীর

নিজের দেশ শুধু নয় করোনা-আক্রান্ত প্রতিবেশী দেশগুলির দিকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।

চিনে ইতিমধ্যেই ১৫ টন চিকিৎসার সরঞ্জাম পাঠিয়েছে বায়ুসেনার সি-১৭ গ্লোবমাস্টার বিমান। চিনে আটকে থাকা আরও ১২৫ জন ভারতীয়ও প্রতিবেশী দেশের কয়েকজন নাগরিককেও উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে পাঁচ শিশুও।

সি-১৭ গ্লোবমাস্টারে চাপিয়েই ইরান থেকে ৩১ জন মহিলা ও দুটি শিশু-সহ মোট ৫৮ জনকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তেহরানে পাঠানো হয়েছে ৫২৯টি কোভিড-১৯ টেস্টিং কিট।


মোট ৬.২ টন চিকিৎসার সরঞ্জাম ও অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগ-সহ জীবনদায়ী ওষুধপত্র মলদ্বীপে নিয়ে গেছে বায়ুসেনার বিমান সি-১৩০জে সুপার হারকিউলিস এয়ারক্রাফ্ট। পাঁচজন সেনা ডাক্তার, দু’জন নার্স-সহ সাতজন প্যারামেডিক্সের টিমও পৌঁছেছে মলদ্বীপে।
দেশের নানা প্রান্তে ইতিমধ্যেই ৬০ টনের বেশি খাদ্য, ওষুধপত্র, চিকিৎসার সরঞ্জাম-সহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দিচ্ছে বায়ুসেনার এয়ারক্রাফ্ট। প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে রসদ পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে ২১টি হেলিকপ্টার। জরুরি অবস্থার জন্য বিশাখাপত্তনমে তৈরি আছে ছ’টি নৌসেনার জাহাজ। শ্রীলঙ্কা, মলদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, আফগানিস্তানে সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার জন্যও তৈরি নৌসেনা ও বায়ুসেনা।

Previous articleকরোনা মোকাবিলায় ১১ হাজার ৯২ কোটি টাকা, সব রাজ্যের জন্য বরাদ্দ ঘোষণা কেন্দ্রের
Next article১০ সিআইএসএফ জওয়ান করোনায় আক্রান্ত,ছিলেন মুম্বই বিমানবন্দরের দায়িত্বে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here