অনেকটা দেরিতে হলেও “দেশের সময়” এর খবরের জেরে শেষপর্যন্ত পেট্রাপোল সীমান্তে পৌছল মেডিকেল টিম, খোলা হল করোনাভাইরাস হেল্প ডেস্ক”
দেশের সময়,পেট্রাপোল : রাতদিন ব্যস্ততা। কোনও ছুটি নেই। ২৪ ঘণ্টাই খোলা সবকটি ল্যাবোরেটরির দরজা। নাওয়া খাওয়া ভুলে রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করে যাচ্ছেন ডাক্তার-বিজ্ঞানীরা। দেশের নানা প্রান্ত থেকে কম করেও ২৪২টি স্যাম্পেল এসে জমা হয়েছে পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে (NIV) । সংক্রমণ মনে হলেই পত্রপাঠ রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে সেই রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরে। পুণের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছে মুম্বই থেকে কলকাতা, বিহার-রাজস্থান থেকে কেরল। বাদ পড়েনি বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্তের নামও।
অনেকটা দেরিতে হলেও “দেশের সময়” এর খবরের জেরে শেষপর্যন্ত পেট্রাপোল সীমান্তে পৌছল মেডিকেল টিম, খোলা হল করোনাভাইরাস হেল্প ডেস্ক”
দেখুন ভিডিও:
প্রতিটি আন্তর্জাতিক বন্দরে করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য দপ্তর।ব্যাবস্থা করতে বলা হয়েছিল মেডিকেল ক্যাম্প এর জন্য। সেই মতো উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল সীমান্তে স্থল বন্দরে বেশ কিছুদিন আগে মেডিকেল টিম পাঠানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছিল স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে, এমন টাই সূত্রের খবর। কিন্তু সেখানেও দেখা যায় গাফিলতি। “দেশের সময়”এর খবরের জেরে, দেরিতে হলেও আজ বৃহস্থপতিবার সকাল থেকে পেট্রাপোল বন্দরে পৌঁছায় কেন্দ্রীয় মেডিকেল টিম। খোলা হয়েছে করোনাভাইরাস হেল্প ডেস্ক।
বাংলাদেশ থেকে আসা প্রতিটি যাত্রীকে পরিক্ষা করে দেখা হচ্ছে কারো শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আছে কিনা এবং বিশেষ নমুনা পাঠানো হচ্ছে পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে (NIV) ।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির ডিরেক্টর ড. প্রিয়া আব্রাহাম (ডান দিন থেকে চতুর্থ) ও অন্যান্য সদস্যেরা।
দেশের একমাত্র বায়ো সেফটি লেভেলের ল্যাবোরেটরি। যাকে অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউট, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন। চিনের বায়ো সেফটি লেভেল-৪ ল্যাবোরেটরির মতো এনআইভিতেও নানা মারণ ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস আক্রান্ত রোগের গবেষণা, পরীক্ষানিরীক্ষা হয়। তবে এই এনআইভিতে রোগের প্রতিষেধক তৈরির চেষ্টা চলে, চিনের মতো রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরি নয়। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ এনআইভিকে দেশের সেরা হেলথ রিসার্চ এজেন্সির তকমা দিয়েছে।
ন্যাশনাল হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির ডিরেক্টর ড. প্রিয়া আব্রাহাম বলেছেন, গত ১৮ জানুয়ারি থেকে এনআইভির ব্যস্ততা চরমে পৌঁছেছে। নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে উঠেপড়ে লেগেছেন এখানকার বিজ্ঞানীরা। দেশের নানাপ্রান্ত থেকে আসা রোগীদের নমুনা পরীক্ষার জন্য আইসোলেশন ইউনিট তৈরি হয়েছে। শুধু এ দেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকেও ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের নমুনা এসে পৌঁছেছে এনআইভিতে। মলদ্বীপ সম্প্রতি সাতজনের রক্ত ও লালার নমুনা পাঠিয়েছে এখানে।
২০১৪-১৬ সালে ইবোলা যখন আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সঙ্কটের সীমা ছাড়িয়েছিল, তখন প্রথম নজরে আসে পুণের এই ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি। পশ্চিম আফ্রিকায় এই ভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছিল ১১,৩২৫ জনের। ইবোলার প্রতিষেধক খোঁজার জন্য বিস্তর গবেষণা হয় এনআইভিতে। ২০১৮ সালে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণে কেরলে ১৭ জনের মৃত্যু হয়। সেই সময়েও ভাইরাস রুখতে হাল ধরেছিল এনআইভি।
চিন থেকে নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বেই। চিনের বাইরে ২৬টি দেশে ছড়িয়েছে সংক্রমণ। আতঙ্ক দানা বেঁধেছে ভারতেও। উহান থেকে এয়ারলিফ্ট করে প্রথম দফায় ফিরিয়ে আনা ৩২৪ জনকে রাখা হয়েছিল মানেসরের কাছে সেনাবাহিনীর তৈরি বিশাল আইসোলেশন ইউনিটে। তাদের প্রত্যেকেরই নমুনা পরীক্ষা করা হয় এনআইভিতে। দ্বিতীয় দফায় ফিরিয়ে আনা ভারতীয় নাগরিকদের নমুনাও পাঠানোর কাজ চলছে এনআইভিতে। এনআইভির ডিরেক্টর বলেছেন, এক একটি ল্যাবোরেটরিতে ১০-১৫টি করে স্যাম্পেল পরীক্ষা চলছে। দিনে গড়ে হাজারের বেশি স্যাম্পেল পরীক্ষা করার পরিকাঠামো রয়েছে এনআইভিতে। ৫০ জন সিনিয়র ও জুনিয়র ডাক্তার-বিজ্ঞানী রয়েছেন এক একটি ল্যাবে। তাছাড়াও রয়েছেন নন-টেকনিক্যাল স্টাফরা। কাজ চলছে ২৪ ঘণ্টা। সকলেরই ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
মুম্বইয়ের কস্তুরবা হাসপাতাল ও নাগপুরের ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট-সহ দেশের নানা জায়গায় ১২টি এনআইভির ল্যাবোরেটরি আছে। পুণে এনআইভির ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ডাক্তার প্রদীপ আওয়াটে বলেছেন, যে হারে রোগীদের নমুনা এসে পৌঁছচ্ছে তাতে এনআইভিতে আরও অনেক ল্যাবের দরকার। আপাতত মুম্বই ও নাগপুরের ল্যাবোরেটরিতে বিশেষজ্ঞদের পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। জুনিয়র স্টাফদেরও এই জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।