আজ আর্থ ডে, বসুন্ধরা দিবস। বড় খারাপ সময়ে আবার ফিরে এল ২২শে এপ্রিল। মৃত্যু, হাহাকার, হতাশার এক আগুনের মধ্যে দিয়ে যেন যাচ্ছে আমাদের এই সবুজ গ্রহ পৃথিবী। এই আগুন লাগিয়েছি আমরাই। আমাদের লোভ আর চাহিদার আগুনেই আজ মাতা বসুন্ধরার সবুজ আঁচলে লেগেছে আগুন। করোনার থাবায় বিধ্বস্ত পৃথিবী। আগুনের স্রোত থেকে মাতা বসুন্ধরাকে রক্ষা করার দায়িত্ব মানুষকেই নিতে হবে। আমি পণ্ডিত নই, বিরাট পরিবেশবিদ বা প্রকৃতি বিজ্ঞানীও নই। চারপাশের অবস্থা দেখে যা মনে হল তার থেকেই কথাগুলি লিখলাম। আর একটা কথা শুরুতেই বলে রাখা ভাল, অনেকে পৃথিবী রসাতলে যাবে বলে চিল চিৎকার জুড়েছেন। এতে সুবিধা হচ্ছে খারাপ সময়কে যারা টাকা বানানোর কাজে লাগাতে চান তাদেরই। আমার বিশ্বাস মানুষ এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠবে, মাতা বসুন্ধরা আবার ফিরবেন স্বমহিমায়।
এমনটা ঘটার কথাই ছিল। না, একথা জ্যোতিষীরা কেউ বলেন নি। পাঁজি, পুঁথিতেও মেলেনি এই দুঃসময়ের আভাস। এই সর্বনাশের বীজ ছিল মানুষের কাজেই। আমরাই বন কেটে, জমি ধ্বংস করে, জল দূষিত করে, বায়ু কলুষিত করে এই অতিমারির প্রসারের জমি তৈরি করে দিয়েছি। আমাদের নির্বুদ্ধিতায় শক্তি সঞ্চয় করেছে করোনা ভাইরাস। এখন সেই ভাইরাস সারা পৃথিবীতে ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে। ২০১৫-১৬ সালে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন পৃথিবীতে যে কোন সময়ে আঘাত হানতে পারে মহামারি। মানুষকে নির্বিচারে প্রকৃতি লুণ্ঠন কমাতেই হবে। ধরিত্রী মাতা এমনিতেই ভঙ্গুর, আমাদের নির্বিচার লুণ্ঠন তাকে আরও ভঙ্গুর করে তুলছে। এর পরিণাম ভাল হবে না। পশুপাখির খাদ্য শৃঙ্খলা নষ্ট করলে মানুষের খাদ্য শৃঙ্খলাও ধ্বংস হবে। কারণ একটার অস্তিত্ব অন্যটার ওপর নির্ভরশীল।
পৃথিবীকে যারা নিজেদের জমিদারি মনে করেন সেই রাষ্ট্রপ্রধানরা এসব সতর্কতাকে পণ্ডিতি প্রলাপ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এখন তার পরিণাম ভোগ করছে গোটা পৃথিবীর মানুষ। এই লেখার সময় অবধি তাদের খুব একটা আক্কেল হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। এই আক্কেল না ফিরলে মানে শুভবুদ্ধির উদয় নাহলে বড় বড় ঘোষণার কোন অর্থ থাকবে না। পৃথিবীর অবস্থা আরও খারাপ হবে, মানুষের অবস্থা যা হবে তার নমুনা তো আপনারা চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছেন।
কাজের জন্য আমাকে রোজই বেরোতে হয়, চষে ফেলতে হয় শহর থেকে শহরতলী। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই দেখতে পাচ্ছি পথে যানবাহন কমায় দূষণ কমেছে। বায়ুদূষণ কমায় বাতাস এখন অনেক নির্মল, প্রকৃতি এখন অনেক সবুজ। বাড়িতে থেকেই দেখা পাচ্ছি বুলবুল, বেনেবউ, কোকিলের। স্তব্ধ শহরে আরও অনেক নিচে নেমে আসছে সোনালী ডানার চিল। চোখে পড়ার মত পরিবর্তন। এ ক’দিনে যদি এটা সম্ভব হয়, তাহলে আমরা যদি একটু নিয়ম মেনে চলি তাহলে বায়ু ও জলদূষণ যে কমবে তা বুঝতে পরিবেশ বিজ্ঞানী হতে হয় না। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা তো বলেই দিয়েছেন, লকডাউনের পর পৃথিবীর সব দেশেই পরিবেশের পক্ষে বিপজ্জনক কার্বন মনোক্সাইড এবং কার্বন ডাই অক্সাইড দুটোই কমেছে। প্রশ্ন হল, আমরা এই অবস্থা বজায় রাখবো না করোনা অতিমারির থেকে শিক্ষা নিয়ে মাতা বসুন্ধরাকে রক্ষা করার শপথ নেবো?
সময় বড় কম, পরীক্ষা শেষ হওয়ার ঘন্টা বাজতে আর বেশি দেরি নেই। শুধু কাগজে কলমে উত্তর দেওয়াই নয়, মাতা বসুন্ধরাকে আরও সবুজ ও উর্বর করে তুলতে তার ওপর নির্মম বাণিজ্যিক দখলদারি কমাতে হবেই। এজন্য সারা পৃথিবীর মানুষকে একসঙ্গে কাজ শুরু করতে হবে, তবেই পৃথিবী বাঁচবে। রক্ষা পাবে মানুষ ও প্রাণীজগতের খাদ্য শৃঙ্খলা। মৃত্যুর হাহাকারের মধ্যে দিয়ে হাজির হয়ে এবারের আর্থ ডে এই সরল সত্যটাই আমাদের মনে করিয়ে দিল।