দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ শরীরের মৃত্যু হলেও দেশের জন্য শহিদ জওয়ানের আত্মবলিদানের মৃত্যু হয়নি। গর্ব এবং বীরত্ব সেখানে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে প্রতি মুহুর্তে তাঁর অস্তিত্বকে জানান দিচ্ছে। চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা হয়ে এলেও স্বামীর বীরত্বকে শেষবারের মতো ছুঁয়ে এক স্ত্রী বললেন, ‘‘আই লভ ইউ।’’ চুমু খেলেন তাঁর অস্তিত্বকে। অব্যক্ত, অস্ফুট কথাতেই নতুন করে রচিত হল প্রেমগাথা। স্ত্রীর দৃষ্টিহীন চাউনি লিখল অন্তিম মিলনের ইতিহাস। মুহুর্তে যেন হাজার ওয়াটের আলো জ্বলে উঠল শোক সভায়।
তেরঙ্গায় মুড়ে কফিন শোয়া মেজর বিভূতি শঙ্কর ধৌনদিয়ালের দেহ এসে পৌঁছেছে হরিদ্বারে তাঁর জন্মভিটেয়। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্যের আগে মেজরকে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির পদস্থ সেনাকর্তা থেকে পাড়া-প্রতিবেশীরা। আশপাশের এলাকা থেকেও এসেছেন বহু মানুষজন। শোকসভায় উপচে পড়ছে ভিড়। মেজরের পরিবারের হাহাকার ছাপিয়ে মাঝে মাঝেই গর্জে উঠছে নানা স্লোগান, ‘ভারত মাতা কি জয়,’ ‘মেজর ধৌনদিয়াল অমর রহেঁ,’ ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’ ইত্যাদি। সমবেত জনতার চোখে জ্বলছে ক্রোধ ও বিদ্বেষের ধিকিধিকি আগুন। তবু সবকিছুর মধ্যেও নির্বিকার একটা মুখ। ধীর পায়ে এগিয়ে এল কফিনের সামনে। শান্ত দু’চোখের দৃষ্টি শূন্য। চোখের জল সেখানে ভাষা হারিয়েছে। শব্দেরা নিরুদ্দেশ। নিজের অস্তিত্বের সঙ্গেই প্রতি মুহুর্তে চলছে লড়াই। তিনি মেজরের স্ত্রী নিকিতা কোল। কফিন ছুঁয়ে একটানা চেয়ে থাকলেন ফুলে মোড়া দেহটির দিকে। যেন অনুভব করতে চাইলেন তাঁর অর্ধেক জীবনকে। নিথর দেহের দিকে চুমু ছুড়ে দিয়ে কানের কাছে মুখ নামিয়ে এনে ফিসফিস করে প্রেম নিবেদন করলেন। এক লহমার জন্য চারদিকে থেমে গেল বিরোধের স্লোগান, কেঁপে উঠল সমবেত জনতার হৃদয়
এক বছর আগেই নিকিতার সঙ্গে বিয়ে হয় মেজরের। ভালোবাসার বিয়ে। বিবাহবার্ষিকীর আগাম পরিকল্পনাও করে রেখেছিলেন দু’জনে। স্বামীকে হারিয়েছেন ফোনে এই খবর শোনার পর থেকেই কথা বলা প্রায় বন্ধ করেছেন। কঠিন মুখ, চোখে জলের লেশমাত্র নেই। কাঁদতেও যেন ভুলে গেছেন নিকিতা। সোমবার গভীর রাতে মেজরের মরদেহ পুলওয়ামা থেকে এসে পৌঁছয় দেহরাদূনে। সেখান থেকে সড়ক পথে হরিদ্বারে। আজ সারাদিন দেহ রাখা ছিল সেখানেই। কফিন ঘিরে বসেছিলেন মেজরের পরিবারের লোকজন। ছিলেন নিকিতাও। একবার কফিনের দিকে তাকিয়ে স্যালুট করেন। তারপর কফিনের কাছে এগিয়ে আসেন। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অস্ফুটে মুখ থেকে বেরিয়ে আসে ‘আই লভ ইউ।’ শূন্য দৃষ্টিতে ফুটে ওঠে বিজয়ীর গর্ব।
পুলওয়ামায় জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়কের উপর লেথপোরায় আত্মঘাতী গাড়িবোমায় ৪০ জন জওয়ানের মৃত্যুর পরদিনই ফের সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষ শুরু হয় পিংলিশ গ্রামে। কয়েকজন জইশ জঙ্গির লুকিয়ে থাকার খবর পেয়ে গভীর রাতে পিংলিশ গ্রামের একটি বাড়ি ঘিরে ফেলেন জওয়ানেরা। রাত পেরিয়ে গোটা দিন ধরে চলে গুলির লড়াই। একে একে খতম হয় আত্মঘাতী হামলার মূল চক্রী আইইডি বিশেষজ্ঞ কামরান-সহ তিন জঙ্গি। শহিদ হন মেজর ধৌনদিয়াল। গুলি লেগে মৃত্যু হয় সেপাই হরি সিংহ ও অজয় কুমার, হাবিলদার শেও রাম, এবং জম্মু কাশ্মীরের হেড কনস্টেবল আবদুল রশিদ কলসেরও।