দেশের সময়: -মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে জানিয়েছেন যে তিনি,দুধ দেওয়া গরুর লাথি খেতে প্রস্তুত আছেন,ঠিক সেই কারণেই এ রাজ্যে ক্ষমতার দিকে দ্রুত হেঁটে চলা বিজেপি নেতৃত্বও কৌশল নিয়ে ফেলেছে যে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সেই দুধ দেওয়া গরুকেই(বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়কে)নানা ঘটনায় দায়ী করে বিভাজনের সীমাকে বাড়িয়ে তুলবেন।
এমনিতেই এ রাজ্যে মমতা ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষনের অভিযোগ সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে ফেলেছে।এবার বিজেপির কৌশল সেই অভিযোককে আর বেশী করে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।এবার লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এ রাজ্যে যে অভাবনিয় সাফল্য অর্জন করেছে তার পেছনে সংখ্যা লঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতি সরকারের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার কারণেই,তা বিজেপি নেতারা জানেন,এই জন্যই রাজ্যে আর বেশী করে তারা বিভাজনের বার্তা ছড়িয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
সম্প্রতি এনআরএস হাসপাতালে রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ডাক্তার নিগ্রহের যে ঘটনা ঘটেছে তার পেছনে এক বিশেষ সম্প্রদায়ের ইন্ধন আছে বলে বার বার প্রচার করছেন মুকুল রায় ও দিলীপ ঘোষরা।তাঁরা এটা নিছক বলার জন্য বলছেন না,বরং এটাকে তাঁরা কৌশল হিসেবে ধরে নিয়ে এগুতে চাইছেন।এই কৌশলের অঙ্গ হিসেবেই সন্দেশখালিতে মৃত দুই বিজেপি কর্মী বিশেষ ধর্মীয সম্প্রদাযের দ্বারা নিহত বলে তারা প্রচার করছেন{শেখ সাহাজাহান যিনি তৃণমূলের নেতা ও স্থানীয় মস্তান বলে পরিচিত তার ধর্ম পরিচয় তুলে ধরে সংখ্যা গরিষ্ট সম্প্রদায়ের কাছে বিজেপি নেতারা এই বার্তা তুলে ধরতে কৌশল নিয়েছেন যে সরকারের মদতেই এরা নানা দুষ্কর্ম করে ও পার পেয়ে যান।
ডাক্তার নিগ্রহ ও নানা দুষ্কর্মের পেছনে থাকা মানুষের ধর্মীয় পরিচয় সামনে এনে মেরুকরণের প্রয়াসটাই এখন বিজেপি নেতাদের কৌশল হবে বলে দলের অন্দরে স্থির হয়ে গেছে।এ বিষয়ে সাংবাদিকরা যখন বিজেপি নেতাদের জিজ্ঞাসা করছেন,অপরাধীর পরিচয়,বা রাজনৈতিক হিংসার বলি হওয়া মানুষজনদের কেন ধর্মীয় পরিচয়ের নিরিখে চিহ্নিত করার দরকার হচ্ছে?তখন বিজেপি নেতারা পরিষ্কার জানাচ্ছেন যেটা সত্যি তারা সেটা বলবেনই,ছদ্ম ধর্মনিরপেক্ষতায় তাঁদের নাকি কোন আগ্রহ নেই।
অথচ এ রাজ্যে কোন ঘটনায় এ ভাবে কাউকে ধর্ম পরিচয়ের নিরিখে চিহ্নিত করার রেওয়াজ ছিল না।একদিকে মমতা যেমন ভোটের স্বার্থে মুসলিমদের একটা বিশেষ অংশকে ব্যবহার করতে চাইছেন,এবং ব্যবহার করেছেন,তার ফলে সংখ্যা গরিষ্ট হিন্দুদের মধ্যে যে একটা বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছে সেটাকেই এবার ভোট রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে বিজেপি।
বিজেপির শীর্ষ নেতাদের বা্র্তা পরিষ্কার এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যদি সংখ্যা লঘু ভোট একজোট করতে ইমান ভাতা থেকে নানা পরিকল্পনা করেন তবে তার পাল্টা হিসেবে বিজেপিকেও সংখ্যা গরিষ্ট ভোট একজোট করতে লাগাতার প্রয়াস চালিয়ে যেতে হবে।সেই কারণেই প্রতিটি ক্ষেত্রে বিভিন্ন ঘটনায় সম্প্রদায় চিহ্নিত করার এই নাছোড় প্রয়াস বিজেপি নেতাদের।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি যে ভাবে বলছেন,একটা বিশেষ সম্প্রদায় যা খুশি করে পার পেযে যায়,পুলিশ তাদের ধরে না,তাদের নামে কোন কেস হয় না,তারা রাস্তা আটকে যেকোন দিন যা কিছু করতে পারে,কারণ এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এরা সবাই দুধেল গরু,এদের লাথি খেতে মুখ্যমন্ত্রী পছন্দ করেন,তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না,যে তিনি একটা বিশেষ রাজনৈতিক কৌশলের কারণেই এসব কথা বলছেন।
বিজেপি নেতারা এ রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা হিসেবে সংখ্যা গরিষ্ট ধর্মীয় সম্প্রদায়কে নিজেদের দুধেল গরু বলে চিহ্নিত করতে চান,সেই কারণেই এই কৌশল।এখন প্রশ্ন হল এ রাজ্যে এই কৌশল কী কার্যকরী হবে?কিছুটা কার্যকরী যে হয়েছে লোকসভা নির্বাচনের ফল তার প্রমাণ।
এবার বিজেপি নেতারা চাইছেন,এটাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে,এবং মেরুকরণকে একেবারে স্পষ্ট করে তুলতে।রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে বিজেপি এটাকে এ রাজ্যের জন্য নির্দিষ্ট করে ফেলেছে।এ রাজ্যে এই কৌশল দিয়েই ক্ষমতার অলিন্দ থেকে মমতাকে তারা বিদায় জানাতে চান।মমতা যে অংকে বিরোধীদের আটকাতে সংখ্যা লঘু ভোটকে একবাক্সে আনতে কৌশল সাজিয়েছিলেন,পান্টা অংকে সেই ভাবেই একটা নির্দিষ্ট ভোটকে নিজেদের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বিজেপি নেতারা।
এই কৌশল ঠিক হয়েছে বিজেপির শীর্ষ স্তর থেকে,তাই মনে রাখা দরকার এ রাজ্যে বিজেপি নেতারা যা বলছেন শীর্ষ নেতাদের কৌশল অনুসরণ করেই বলছেন,আচমকা কোন কথা তারা বলছেন না,সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ দিয়েই বিজেপি এখন এ রাজ্যে শাসক দলকে চাপে রাখার কৌশল তৈরি করে ফেলেছে।এই কৌশল আগামী দিনে এ রাজ্যে আর রক্তাক্ত রাজনীতির জন্ম দিতে পারে তা বলাই বাহুল্য।