দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃএবার বিনয় মিশ্রর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করল সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত। গরু পাচার কাণ্ডে অভিযুক্ত ছিলেন তিনি, চলছিল জেরা। এর পরে গতকাল, মঙ্গলবার সিবিআই তদন্তকারীদের একটি দল বিনয়ের খোঁজে তাঁর বাড়িতে যায়, সেখানে ছিলেন না তিনি। এর পরেই জারি হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা।
কয়লা ও গরু পাচারের তদন্তে যুব তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক বিনয় মিশ্র ও তাঁর ভাই বিকাশ মিশ্রকে দিন কয়েক আগেই আতস কাচের নীচে ধরে ফেলেছিল সিবিআই। বিকাশকে জেরা করা হলেও, তাতে সন্তুষ্ট নয় সিবিআই। অন্যদিকে বিনয়ের বাড়ি, অফিসে এর মধ্যে একাধিকবার তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই। সিল করে দেওয়া হয়েছে কৈখালির ফ্ল্যাট। কিন্তু তাঁর টিকি পাওয়া যায়নি।
গত কয়েক দিন ধরে কয়লা পাচার ও গরু পাচারের তদন্তে বারবারই সামনে এসেছে এই বিনয় মিশ্রর নাম। জানা গেছে, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে পাচারকারীদের টাকা পাঠানোর সেতু ছিলেন এই বিনয়। কয়লা পাচার কাণ্ডের অন্যতম চাঁই অনুপ মাজি ওরফে লালা এবং গরু পাচারের পাণ্ডা এনামূল হক– এই দুই ক্ষেত্রেই ‘কমন ফ্যাক্টর’ থেকে গেছেন এই বিনয় মিশ্র।
খাতায় কলমে বিনয় মিশ্র তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক। গত ২৩ জুলাই তাকে এই পদে নিয়োগ করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছোট থেকেই বিনয় ছিলেন অঙ্কে চোস্ত। অঙ্ক অনার্স নিয়েই পড়াশোনা। মেধাবী, ঝকঝকে ছাত্র বলতে যা বোঝায় তাই। নামের মতোই স্বভাবেও নাকি ছোট থেকেই বিনয়ী। কিন্তু পাচারের পাণ্ডা হিসেবে তাঁকে সিবিআই ধরতে আসবে, তাতে বেশ হতবাক পড়শিরা।
কলেজে পড়তেই পড়তেই ছাত্র পরিষদ করতে শুরু করেন বিনয়। তারপর টিএমসিপি। সেই সূত্রেই দক্ষিণ কলকাতার নেতাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। এরপর বিনয় প্রাইভেট টিউশানি শুরু করেন। অঙ্কের টিউশানি।
ছাত্রছাত্রী কারা? দক্ষিণ কলকাতার তাবড় ব্যবসায়ীর ছেলেমেয়েরা। বড় ব্যবসায়ীদের বাড়িতে সেই যাতায়াত শুরু। জানা যাচ্ছে, সেই থেকেই এক ব্যবসায়ীর সূত্র ধরে পুরুলিয়ার লালার সঙ্গে যোগ তৈরি হয় তাঁর। অন্যদিকে এও খবর, বিনয়ের এক আত্মীয় পুলিশের বড় কর্তা। কোলিয়ারি এলাকায় কর্তব্যরত। অভিযোগ, বিনয় ঢাল করেন তাঁকে।
পাচারকারীদের অভয় দেন, কারবার চলতে পারে, সমস্যা হবে না। কিন্তু তাঁকেও দেখতে হবে। তাঁকে দেখলে তিনিও দেখবেন। গিভ অ্যান্ড টেক।
এরপর পরিধি বাড়তে থাকে বিনয়ের। অভিযোগ, কয়লা থেকে গরু, বালি পাচারের মাথাদের সঙ্গেও তৈরি হয় ‘নেক্সাস।’ অন্যদিকে ক্রমশ শাসকদলের সর্বোচ্চ সারির সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে অঙ্কের মাস্টারের। তৃণমূল ভবন থেকে কালীঘাট—অবাধ বিচরণ ছিল বিনয়ের।
গত নভেম্বর মাসে আয়কর দফতরের হাত থেকে কয়লা পাচার তদন্তের দায়িত্ব নেয় সিবিআই। তারপর থেকে একের পর এক তল্লাশি অভিযান চলেছে রাজ্যে। পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান, কলকাতায় চিরুনি তল্লাশি চালিয়েছেন গোয়েন্দারা। এর পরে কোন্নগর এবং হাওড়ার সালকিয়ায় তল্লাশি চালায় সিবিআই। সিবিআই সূত্রে এও বলা হচ্ছে, যে সংগঠিত কায়দায় কয়লা ও গরু পাচার চলত তাতে এটা স্পষ্ট বড় মাথা এর পিছনে রয়েছে। প্রশাসনিক আশ্রয় না থাকলে এই জিনিস সম্ভব নয় বলেও মত গোয়েন্দাদের। হয়তো সেই মাথার সন্ধানেই তদন্ত এগোচ্ছে সিবিআই।