দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পুজো কমিটিগুলিকে আয়কর দফতরের নোটিস দেওয়ার বিরুদ্ধে এ বার রাস্তায় নামছে তৃণমূল। রবিবার দুপুরে তিন তিনটি টুইট করে পুজো কিমিটিগুলির উপর আয়কর বিভাগের নজরদারির বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই তিনি জানিয়েছেন, আগামী মঙ্গলবার অর্থাৎ ১৩ অগস্ট কলকাতার সুবোধ মল্লিক স্কোয়্যারে অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হবে তৃণমূলের বঙ্গ জননী ব্রিগেড।
ওই টুইটে তৃণমূলনেত্রী লিখেছেন, “এই উৎসব সবার উৎসব। আমরা চাই না এটা করের আওতায় আসুক। তাহলে উদ্যোক্তাদের নানান বাধার মুখে পড়তে হবে।” তিনি আরবও বলেন, “আগে গঙ্গাসাগর মেলায় রাজ্যসরকার কর আদায় করত। কিন্তু আমরা তা বন্ধ করে দিয়েছি।” ‘করমুক্ত’ দুর্গাপুজোর দাবি জানিয়েছেন মমতা।
গত জানুয়ারি মাসেই কলকাতার প্রায় ৪০টি পুজো কমিটিকে ডেকে আয়কর কর্তারা বলে দেন, এ বছরের পুজো থেকে তিরিশ হাজার টাকার উর্ধ্বে সমস্ত রকম পাওনা মেটানোর ক্ষেত্রে টিডিএস কেটে নিতে হবে। এবং তা আয়কর দফতরে জমা দিতে হবে। জানুয়ারি মাসে যে দিন পুজো কমিটিগুলিকে ডেকে এ কথা বলছে ইনকাকম ট্যাক্স, সে দিনই বারাসতে যাত্রা উৎসবের উদ্বোধনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “পুজো কমিটির থেকে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন চাওয়া হচ্ছে। একটা ক্লাবের গায়ে হাত লাগলেও ছেড়ে কথা বলব না। আমি সব ক্লাবকে বলে দেব, ডাকলে একদম যাবেন না।”
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, কলকাতা ও শহরতলির অধিকাংশ পুজোর মাথাই তৃণমূলের নেতামন্ত্রীরা। সুরুচি সঙ্ঘ থেকে নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ, ত্রিধারা সম্মিলনী থেকে শ্রীভূমি স্পোর্টিং—সব পুজোই তৃণমূল নেতাদের পুজো বলেই জনমানসে পরিচিত। তাই তাঁদের পাশে দাঁড়াতেই দলকে নামাচ্ছেন নেত্রী। এমনিতে দুর্গাপুজোয় বাংলায় কয়েক হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। কিন্তু তাতে সরকারের কোষাগারে ঢোকেনা কিছুই। কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্য সমস্ত লেনদেনকে করের আওতাভুক্ত করা। তাছাড়া কলকাতার বহু পুজোতে একটা সময়ে চিটফাণ্ডের টাকা ঢুকত। অনেকের মতে সেগুলিকেও আতস কাচের নীচে রাখতে চাইছে আয়কর দফতর।
লোকসভা ভোটের পর প্রথম সাংবাদিক বৈঠকেই দিদি জানিয়েছিলেন, আরএসএস মোকাবিলায় এ বার যুবদের নিয়ে তৈরি হবে আজাদহিন্দ ব্রিগেড এবং মহিলাদের নিয়ে তৈরি হবে বঙ্গ জননী বাহিনী। আর বঙ্গ জননীদের হাতে থাকবে শান্তিনিকেতনি ডান্ডা। এ বার পুজোকে আয়কর বিভাগের হাত থেকে রক্ষা করতে তাঁদেরকেই রাস্তায় নামাচ্ছেন দিদি।
বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু বলেন, “আসলে এটা একটা আর্থিক শৃঙ্খলার প্রশ্ন। যাঁরা তিরিশ হাজারের উপর টাকা নিচ্ছেন পুজো কমিটির কাছ থেকে, তাঁদের কর দেওয়ারও ক্ষমতা আছে।” তিনি আরও বলেন, “তেমন হলে তো আয়কর বিভাগ থেকে কেটে নেওয়া টাকা ফেরতও পাওয়া যায়।” তাঁর কথায়, “আসলে বাংলায় সরকারের কোষাগার থেকে টাকা লুঠ হয়। যে পুজো কমিটি লক্ষ লক্ষ টাকা বাজেট করে পুজো করে। তাদেরও সরকার ১০ হাজার টাকা দেয়।”
এক নজরে:
বাংলা সরকার গঙ্গাসাগর মেলার ওপর থেকে ট্যাক্স সরিয়ে নিয়েছে। আমাদের দাবি, দুর্গা পুজো ও কমিটিগুলির ওপর কোন রকম ট্যাক্স বসানো চলবে না।
আগামী ১৩ই আগস্ট মঙ্গলবার সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে হিন্দ সিনেমার বিপরীতে তৃণমূল কংগ্রেসের ‘বঙ্গ জননী’ শাখা ধর্নায় বসবে (সকাল ১০ টা – সন্ধ্যে ৬ টা)। কর্মকর্তারা, অংশগ্রহণকারীরা সহ সকলে, যারা বাংলাকে ভালোবাসেন, আসুন এবং যোগদান করুন।’
উল্লেখ্য, গত ২২ জুলাই জেলা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক শেষে মমতা পুজো কমিটিগুলিকে আয়করের নোটিস সম্পর্কে বিজেপিকে একহাত নিয়ে বলেছিলেন, পুজো একটা সামাজিক অনুষ্ঠান। এটা মানুষের অনুদানের টাকায় হয়। সেটাকে আয়করের আওতায় আনলে তা পুজোর অপমান।