দেশের সময় : – বিজেপি এ রাজ্যে আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না।অন্তত এনআরসি নিয়ে এরকম প্রতিবাদ প্রতিরোধ চলতে থাকলে এ রাজ্য যে ২০২১ এ বিজেপির ক্ষমতায় আসার স্বপ্নে যে জল ঢেলে দেবে তা নিয়ে মোটামুটি নিশ্চিত বিজেপির বেশ কিছু রাজ্য নেতা।
প্রকাশ্যে মুখ খোলার সাহস দেখাতে না পারলেও তারা একান্তে মেনে নিচ্ছেন এনআরসি নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে একেবারে সাজানো বাগান তাদের হাতছাড়া হতে চলেছে।তবে কী বিজেপির রাজ্য নেতারা মেনে নিচ্ছেন যে তারা আর এ রাজ্যের ক্ষমতা দখলের লড়াইতে নেই?এ প্রশ্নের উত্তরে সরাসরি কোন জবাব দিতে না চাইলেও বিজেপির একাধিক রাজ্য নেতা মেনে নিচ্ছেন তাদের পক্ষে এখন আর ২০২১ এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টেক্কা দেওয়া সহজ নয়।
এনআরসি, সিএএ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে তাঁর নির্বাচনি কৌশল সাজাতে চলেছেন তার পূর্বাভাস দেশের সময়ের প্রতিবেদনে আগেই দেওয়া হয়েছিল।সেই প্রতিবেদনে আমরা উল্লেখ করেছিলাম যে এনআরসি বিরোধিতাকেই প্রচারে তরুপের তাস করতে যাচ্ছেন মমতা।সেসময়ও আমরা কথা বলেছিলাম বিজেপির রাজ্য নেতাদের সঙ্গে তখন তাঁরা বিষয়টিকে ততটা গুরুত্ব দেন নি,ভেবেছিলেন এর ফলে হিন্দু ভোট একত্রিত হয়ে তাদের ফায়দা হবে।
তবে কয়েক মাসের মধ্যে ব্যাপারটা সামনে আসতে বোঝা যাচ্ছে এনআরসি শুধু মুসলিমদের নয়,আতঙ্কিত করে তুলেছে হিন্দু ভোটারদের একটা বড় অংশকেও।আসমের অভিজ্ঞা তাদের বিজেপি বিরোধী অবস্থানে ঠেনে দিয়েছে।গোটা দেশের সঙ্গে এ রাজ্যেও প্রতিদিন লাগাতার প্রতিবাদ মিছিল ও অবস্থান হয়ে চলেছে এনআরসির বিরুদ্ধে।গোটা রাজ্যের মানুষই যে ভাবে এই মিছিল ও প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছে তাতে বিজেপির পায়ের তলার মাটি যে সরে যাচ্ছে তা পরিষ্কার।
সবচেয়ে বড় কথা নাগরিক সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের প্রতিবাদ আলাদা করে নজরে পড়ছে ,এই প্রতিবাদের মাত্রা এতটাই চড়া যে বিজেপির ভেদাভেদ বা বিভাজনের রাজনীতি ক্রমশ পিছু হটতে শুরু করেছে।কলেজের হিন্দু-মুসলমান ছাত্ররা যেভাবে হাতে হাত মিলিয়ে প্রতিবাদের রাস্তায় সামিল হচ্ছে তাতে তাদের পরিবারও আর হিন্দু ও মুসলমান বিভেদ রেখা মানতে পারছেন না।সবারই একটাই দাবি আমরা এদেশের নাগরিক নতুন করে কেন আবার নাগরিকতার প্রমাণ দিতে যাবো!!
পরিস্থিতি যে এমন হবে তা বুঝতে পারেননি বিজেপি নেতারাও,তারা ভেবেছিলেন হিন্দুদের মধ্যে একটা মুসলিম বিরোধী মনোভাব আছে সেটাকে কাজে লাগিয়ে এ রাজ্যে হিন্দুদের নিরাপত্তার কথা বলে হিন্দু ভোটকে একজায়গায় নিয়ে এসে ভোট যুদ্ধে কেল্লা ফতে করবেন।কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো,হিন্দুরাও প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন তারা নাগরিক থেকে কেন আচমকাই শরণার্থী হতে যাবেন?
যে হিন্দুরা বাংলাদেশ বা পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্থান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে এখানে আসছেন তাদের সঙ্গে কেন একসারিতে বসতে যাবেন এ দেশে দীর্ঘদিন বসবাস করা হিন্দুরা?এ দেশে যে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ স্বাধীনতার পরে’ ‘বাই চয়েস’এদেশের নাগরিকতা বেছে নিয়েছেন তাদের কেন দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে গন্য করা হবে?
বলা বাহুল্য এসব প্রশ্নের কোন যুতসই উত্তর বিজেপি নেতাদের কাছে নেই।তারা যে শুধু মাত্র ভোটের অংক কষেই এই পরিকল্পনা করেছিলেন তা পরিষ্কার।কিন্তু একটা পরিকল্পনার ্অভিঘাত কী হতে পারে তা নিয়ে তাদের কোন ভাবনা ছিল না।তাই এই পরিকল্পনা এখন তাদের দিকেই বুমেরাং হয়ে ফিরে যেতে শুরু করেছে।
বিজেপির রাজ্য নেতারাও এটা েখন বুঝে গেছেন।একে তো এ রাজ্যে পাতে দেওয়ার মত কোন নেতা নেই বিজেপির,দিলীপ ঘোষের মত একটা অশিক্ষিত ভাঁড়কে এ রাজ্যের দায়িত্বে রেখে বিজেপি আসলে মমতাকেই স্বস্তি দিতে চাইছে বলে বিজেপির রাজ্য নেতাদের মধ্যেই অনেকের মত।এক নেতার কথায় মনে হয়েছিল যে দিলীপ ঘোষকে সামনে রেখে দিয়ে এ রাজ্যটা মমতাকেই উপহার দিতে চাইছেন মোদী শাহরা,কিন্তু এখন আর মনে হওয়া নয় আমি নিশ্চিত এ রাজ্য দখলের কোন ইচ্ছা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নেই।
এনআরসি যে এ রাজ্যে বিজেপির সম্ভাবনার কফিনে শেষ পেরেকটা পুঁতে দিল তা নিয়েও কোন সংশয় নেই রাজ্য বিজেপির এই নেতার।একই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন তাঁর নামটা এখনই প্রকাশ্যে আনা যাবে না তবে তাঁর ভবিষ্যতবাণী মিলে যাওয়ার পর তিনি নিজেই তাঁর নাম প্রকাশ্যে আনবেন।ঐ নেতার কথায় বুঝে অসুবিধা হচ্ছে না যে এনআরসি শুধু বাইরে নয় রাজ্য বিজেপির ঘরেও আগুন লাগিয়েছে।সেই ধিক ধিক করে জ্বলতে থাকা আগুন কবে ভয়াবহ আকার নেয় সেটাই এখন দেখার ্অপেক্ষা।