দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অসমে এনআরসি নিয়েই মূলত কথা হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে। বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমে জানালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অসমে জাতীয় নাগরিক পঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর দেখা গিয়েছে, ওই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ১৯ লক্ষ মানুষ।
নাগরিক পঞ্জির প্রক্রিয়া অনেক ভুল আছে, একথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘অসমে জাতীয় নাগরিক পঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। আমি জানিয়েছি, এই গোটা প্রক্রিয়ায় বাদ পড়েছে প্রচুর বাঙালি, হিন্দিভাষী এবং গোর্খারা। তাঁদের যেন পুনরায় নাগরিকত্ব প্রমাণের সুযোগ করে দেওয়া হয়, সেবিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে।’
তবে বাংলায় এনআরসি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলায় এনআরসি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। বাংলায় এনআরসির কোনও প্রয়োজন নেই। পশ্চিমবঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। সীমান্তগুলিকে কীভাবে সুরক্ষিত রাখা যাবে, এই বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাসও দিয়েছেন যে তিনি বিষয়টি নিয়ে ভাবনা–চিন্তা করবেন।’
বীরভূমের দেউচা পাঁচামিতে তৈরি হতে যাচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা ব্লক। কিন্তু কয়লা খাদানের কাজ শুরু করার আগে ওই অঞ্চলের আদি বাসিন্দাদের স্থানান্তর করতে হবে। তাঁদের জন্য সুরক্ষিত জায়গার ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার, অমিত শাহকে জানিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘সমস্ত নিয়ম মেনে সেখানকার বাসিন্দার আস্থা অর্জন করেই সমস্ত কাজ করা হবে।’
গত বৃহস্পতিবার এই ইস্যুতে সিঁথির মোড় থেকে শ্যামবাজার পদযাত্রা করেছিলেন মমতা। তোপ দেগেছিলেন দিদি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, এনআরসির মাধ্যমে বাংলা থেকে দু’কোটি মানুষকে তাড়ানো হবে। এর জবাবে মমতা পাল্টা হুঁশিয়ারিতে বলেন, দু’কোটি তো পরের কথা, আগে বাংলার দু’জন মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখাক!
গত বছর এনআরসি-র শুরুর সময়েই প্রতিনিধি দলকে অসমে পাঠিয়েছিলেন মমতা। তাঁদের ঢুকতে না দেওয়ায় দিল্লি গিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এর কাছে। কিন্তু কাল মমতার ‘ওটা তো অসমের ব্যাপার’ মন্তব্যে অনেকেই নরম মনোভাব দেখেছিলেন। দলের ভিতরেও অনেকে বলতে শুরু করেছিলেন, এই রকম একটা স্পর্শকাতর ইস্যুতে দুম করে অবস্থান বদল করলে মুশকিল।
কারণ বাংলার উদ্বাস্তু কলোনিগুলিতে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে এনআরসি আতঙ্ক। পর্যবেক্ষকদের মতে, মমতা বুঝতে পেরেই কালকের এনআরসি ক্ষততে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, কর্মীদের কাছে দলগত অবস্থান পরিষ্কার থাকবে তো?
সব শেষে সাংবাদিকরা রাজীব কুমারের ব্যাপারে মমতাকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কোনও কথা হয়নি। এই বলে পিছন ফিরে হাঁটা দেন মুখ্যমন্ত্রী।
বুধবার অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকের খবর জানাজানি হতেই টিপ্পনি কাটতে শুরু করেন বিরোধীরা। তাঁদের কটাক্ষের নিশানায় ছিলেন রাজীব কুমার। লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুর্নীতি মামলা নিয়ে ‘সেটিং’ করতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু যেহেতু এই বিষয় প্রধানমন্ত্রী নন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেখেন, তাই মোদীজি সেই কেস অমিত শাহ-র কাছে ‘রেফার’ করে দিয়েছেন। একই ভাবে কটাক্ষ করেছেন বামেরাও।
তবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এটা হল একটা সরকারের সঙ্গে আরেকটা সরকারের বৈঠক। এর মধ্যে কোনও রাজনীতি খোঁজা ঠিক হবে না। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় প্রধানমন্ত্রী-কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করবেন, সেই সমন্বয়টাই দস্তুর। বৈঠক সেরে বেরিয়েও সেই কথা শোনা গেল মমতার মুখে। রাজীব কুমারকে নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি বলেই জানিয়েছেন তিনি।
এই সাক্ষাৎ চলাকালীন অবশ্য কলকাতায় রাজীব কুমারকে নিয়ে নিজেদের তৎপরতা আরও বাড়িয়েছে সিবিআই। রাজীব কুমারের ফোন বন্ধ থাকায় ডিজিকে মেল করে সিবিআই-এর তরফে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, রাজীব কুমারের বর্তমান চালু নম্বরটি কী?
কোন নম্বরে ফোন করলে পাওয়া যাবে কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারকে? মেল-এ উল্লেখ করা হয়েছে, আদালতের নির্দেশের পর থেকে তদন্তের স্বার্থে রাজীব কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন। তাই যেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাজীব কুমারের ফোন নম্বর জানিয়ে এই মেল-এর উত্তর দেওয়া হয়।
মমতা-অমিত শাহ সাক্ষাৎ নিয়ে অবশ্য রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, বৈঠকে ঠিক কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, তার সবটা কি সাংবাদিকদের সামনে সবাই বলেন।
যদি সত্যিই রাজীব কুমারের ব্যাপারে অমিত শাহের সঙ্গে মমতার কোনও কথা হয়, তাহলে কি তিনি সেটা সাংবাদিকদের সামনে বলবেন। এটা অনেকটা ‘হাতির দাঁতের’ মতো। তবে বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী রাজীব কুমারের ব্যাপারে কোনও আলোচনা হয়নি অমিত শাহের সঙ্গে।