উদ্বাস্তুরাও নাগরিক:মমতা

0
578

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ‌ মঙ্গলবার কালিয়াগঞ্জ কলেজ মাঠে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দেন উদ্বাস্তুরাও নাগরিক। উদ্বাস্তু কলোনির সবাইকে পাট্টা দেওয়া হয়েছে। দেওয়া হয়েছে স্বীকৃতিও। আরও উদ্বাস্তু কলোনিকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।‌ উদ্বাস্তুদের আশ্বস্ত করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়েক হাজার মানুষের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‌উদ্বাস্তুদের পাট্টা পাওয়া নিয়ে কেউ লড়াই করেনি। উদ্বাস্তু ভাইয়েরা জানবেন ইতিমধ্যে আমরা ৯৪টি উদ্বাস্তু কলোনিকে স্বীকৃতি দিয়েছি।

নতুন করে আরও ১১৯টি কলোনিকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। আগেই উদ্বাস্তু কলোনির সবাইকে পাট্টা দেওয়া হয়েছে। মনে রাখবেন উদ্বাস্তুরাও নাগরিক।’‌


এদিন মুখ্যমন্ত্রী সবাইকে অভয় দিয়ে বলেন, ‘‌নাগরিকত্ব নিয়ে চিন্তা করবেন না। যাঁর ভোটার কার্ড আছে, তিনিই নাগরিক। ভোটার কার্ডই যথেষ্ট। সবার নাগরিক অধিকার আছে বলেই তো ভোট দিতে পারেন।’

দিল্লির সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনার কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‌দিল্লিতে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে! এতে আমি লজ্জিত। মর্মাহত। দিল্লিতে যা হয়, বাংলায় তা হয় না। আমরা দাঙ্গা চাই না, ভাত চাই, চাই কর্মসংস্থান।’‌ দাঙ্গা রুখতে মেয়েদের এগিয়ে আসার ডাক দিয়ে তিনি বলেন, ‘‌নাগরিকত্ব নিয়ে একদম চিন্তা করবেন না। কোনও ভয় নেই। দাঙ্গা করতে দেবেন না কাউকে। আমি সবসময় আপনাদের পাশে আছি।

কাশ্মীরের গন্ডগোলে এ রাজ্যের ১৩০ জন বাঙালি বিপদে পড়েছিলেন। তাঁরা মুর্শিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের মানুষ। তঁাদের ৬টি পরিবারকে কাজ দেওয়া হয়েছে।’‌
এরপরই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে লক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‌তোমরা ভারত মাতার কথা বলে মানুষ খুন করো, ধ্বংস করো। আর বাংলা মাকে দেখো। আমরা আম্মা, মা, মাদার বলি।

বাংলায় একবিন্দু রক্ত ঝরতে দেব না। দখল নিতে দেব না বাংলার। আমরা দাঙ্গা চাই না। শান্তি চাই, মৃত্যু নয়। আপনারা লক্ষ রাখবেন, যাতে কেউ দাঙ্গা বাধাতে না পারে। সবসময় আপনাদের পাশে চাই। আশীর্বাদ দিন।’‌ ‌


এদিন কালিয়াগঞ্জের কলেজ মাঠে আয়োজিত সভায় একগুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন, শিলান্যাস–সহ উপভোক্তাদের নানা পরিষেবা প্রদান করেন মুখ্যমন্ত্রী। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের বাড়ি তৈরির জন্য ‘‌স্নেহালয়’‌ প্রকল্পের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‌স্নেহালয়‌’‌ রাজ্য সরকারের একটি নতুন প্রকল্প। এই প্রকল্প আজ থেকে চালু হয়ে গেল। এই প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে উপভোক্তাদের।

আরেকটি নয়া পেনশন প্রকল্পের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই পেনশন প্রকল্পের নাম ‘‌জয় বাংলা’‌। ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক তফসিলি জাতির মানুষ এই প্রকল্পে ১০০০ টাকা করে পেনশন পাবেন। আদিবাসীদের জন্যও চালু হয়েছে ‘‌জয় জোহর’‌ পেনশন প্রকল্প। এতে আদিবাসীরাও ১০০০ টাকা করে পাবেন। এ ছাড়াও রাজ্যে যাঁরা বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা পেয়ে থাকেন, সেই ভাতার পরিমাণও বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করা হল। ‘‌দিদিকে বলো’‌ কর্মসূচির উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই কর্মসূচির মাধ্যমে অনেকেই পেনশনের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। তাঁদের কথা মাথায় রেখে রাজ্যের সাড়ে ৫ লক্ষ মানুষকে পেনশনের আওতায় আনা হয়েছে।’‌

চা–শ্রমিকদের জন্য ‘‌চা–সুন্দরী’‌ গৃহনির্মাণ প্রকল্পের কথা জানান তিনি। বলেন চা–শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্য নয়া প্রকল্পের কথাও। কৃষকদের শস্যবিমা প্রকল্পের কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‌অন্য রাজ্যে রাজ্য সরকার এই প্রকল্পে টাকা দেয় না। আমরা দিচ্ছি। তার সুযোগ নিন কৃষকেরা।’‌ তিনি মনে করিয়ে দেন, এই রাজ্যে আগেই কৃষিজমির খাজনা এবং মিউটেশন ফি মকুব করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‌এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ১ কোটি ছাত্রছাত্রীকে বিনামূল্যে সাইকেল দেওয়া হয়েছে।’‌ ‘‌খাদ্যসাথী’‌ প্রকল্পে ২ টাকা কিলো দরে চাল দেওয়ার কথাও জানান তিনি। ‘‌স্বাস্থ্যসাথী’‌ প্রকল্পে উপভোক্তারা ৫ লক্ষ টাকার চিকিৎসা পরিষেবা বিনামূল্যে পেতে পারেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‌এ রাজ্যে চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে শয্যার জন্য ভাড়া লাগে না।

এক্স–রে, অপারেশন সব পরিষেবাই পাওয়া যায় বিনামূল্যে। ৩ মাসে সর্বোচ্চ ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল ফ্রি বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী।’‌
এদিকে, এদিন পরিষেবা প্রদান মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন রায়গঞ্জ–বারসই সড়কপথ নির্মাণে সাড়ে ১১ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা। জানান কালিয়াগঞ্জ স্টেট জেনারেল হাসপাতালকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার কথাও। কালিয়াগঞ্জে কমিউনিটি হল হবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী।

এদিনের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, শ্রম দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী গোলাম রব্বানি, কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক তপন দেবসিংহ, সভাধিপতি কবিতা বর্মন, কালিয়াগঞ্জে পুরপ্রধান কার্তিক পাল, রায়গঞ্জের পুরপ্রধান সন্দীপ বিশ্বাস, জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনা–সহ জেলা ও রাজ্য স্তরের বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকেরা।

এদিন রায়গঞ্জে প্রশাসনিক বৈঠক সেরে মালদা চলে যান মুখ্যমন্ত্রী। আজ বুধবার দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরে ও পুরাতন মালদার ছোট সূর্যাপুরে কর্মিসভা রয়েছে ৷

Previous articleYour Shot 🔘 women Power
Next articleহোয়াটসঅ্যাপের ‘ডার্ক মোড’, কী ভাবে পাবেন এই নতুন থিম জানুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here