দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ স্থলভাগে আছড়ে পড়ল অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। মৌসম ভবন বুধবার সকাল ৯টা ১৫ মিনিটের বুলেটিনে জানিয়েছে, ওড়িশার বালেশ্বরের দক্ষিণে ইয়াস-এর স্থলভাগে আছড়ে পড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার, সর্বোচ্চ ১৫৫ কিলোমিটার।। আগামী ৩ ঘণ্টা ধরে এই প্রক্রিয়া চলবে বলেই জানিয়েছে মৌসম ভবন।
এই মুহূর্তে ধামরা থেকে ৪৫ কিলোমিটার পূর্ব উত্তর-পূর্ব, দিঘা থেকে ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিম ও বালেশ্বর থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছে ইয়াস-এর চোখ।
পশ্চিমবঙ্গের উপকূল এলাকায় ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে তাণ্ডব চালাবে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, নদিয়ায় ঝড়ের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৭৫ থেকে ১১০ কিলোমিটার। জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপকূল এলাকার বাসিন্দাদের প্রতি তাঁর সতর্কবার্তা, যত ক্ষণ না প্রশাসন অনুমতি দিচ্ছে, ত্রাণ কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করবেন না।
বুধবার সকালেই ইয়াস নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। নবান্নের কন্ট্রোল রুম থেকে তিনি বলেন, ‘‘বহু এলাকা ভেসে গিয়েছে। ১৫ লক্ষ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি আমরা। তাঁদের ত্রাণ কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভরা কোটালের কারণে উপকূল এলাকাগুলিতে প্লাবন বেশি হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষকে আমার অনুরোধ যাঁরা ত্রাণ কেন্দ্রে রয়েছেন, তাঁরা এখন বাড়ি ফেরার চেষ্টা করবেন না। প্রশাসন অনুমতি দিলে তবেই বাইরে বার হবেন।’’
বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যে বিভিন্ন জেলার পরিস্থিতি সম্পর্কেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘গোসাবায় প্লাবিত হয়েছে বহু গ্রাম। শঙ্করপুর, দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর ভাসছে।’’ পূর্ব মেদিনীপুরে ৫১ টি নদীবাঁধ ভেঙে গিয়েছে বলেও জানান মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াস তো এসেছেই। তার উপর বুধবার ভরা কোটালও চলছে সমুদ্রে। সে জন্যই প্লাবন বেশি হচ্ছে।’’
মৌসম ভবন জানিয়েছে, গত ৬ ঘণ্টা ধরে ঘণ্টায় ১৭ কিলোমিটার গতিবেগে এগোচ্ছে ইয়াস। বুধবার দুপুরের মধ্যে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রূপে ইয়াস ওড়িশার পারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপের মধ্যে ওড়িশার বালেশ্বরের দক্ষিণ ও ধামরার উত্তর দিক দিয়ে অতিক্রম করে যাবে বলেই পূর্বাভাস। তার পর ঘূর্ণিঝড় চলে যাবে ঝাড়খণ্ডের দিকে।
ইয়াস সাইক্লোন নিয়ে আতঙ্কের মাঝেই সামান্য স্বস্তির খবর পেয়েছিল কলকাতা। কান ঘেঁষে বেরিয়ে যেতে পারে এর অভিঘাত। আমফানের মতো অত ক্ষয়ক্ষতি হয়তো হবে না। শুধু তাই নয়, বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, যতটা মনে করা হচ্ছিল, ততটা শক্তিশালী রূপে থাকবে না ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। শক্তিক্ষয় হয়ে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
কিন্তু সে যাই হোক না কেন, প্রকৃতির বিপর্যয়ের সামনে আশঙ্কা থেকেই যায়। বিশেষ করে গতবছর আমফানের যে দাপট কলকাতা দেখেছিল, যেভাবে একটানা কয়েক দিন ধরে ফল ভুগতে হয়েছিল বিপর্যয়ের, তাতে উদ্বেগের পারা যেন নামছেই না। তিথি অনুযায়ী আজ ভরা কোটাল আর চন্দ্রগ্রহণ। সেই সঙ্গে দোসর সাইক্লোন। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি খুব স্বস্তিদায়ক নয়। কলকাতা মহানগরের উপর দিয়েও মুষলধারে প্রবল বৃষ্টির পাশাপাশি ৬০-৭০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
বস্তুত, রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে শহর কলকাতায়। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ার দাপট। বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর না মিললেও, ইতিউতি গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে, উপড়েছে খুঁটি। এরই মধ্যে আগাম প্রস্তুতি স্বরূপ কলকাতার আটটি উড়ালপুল বন্ধ করে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। বিবেকানন্দ উড়ালপুলের নীচে বসবাসকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ল্যান্ডফলের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে ওড়িশায়। ধামড়া বন্দরে ভয়ানক উঁচু ঢেউ উঠছে, সেই সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত ওড়িশার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এই অবস্থায় বিপদ এড়াতে জাতীয় সড়কেও লরি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। ইয়াসের দাপট কমলে ফের স্বাভাবিক হবে গাড়ি চলাচল। এছাড়া যেসব রাস্তায় গাড়ি ও পণ্যবাহী লরি বেশি যাতায়াত করে সেসব রাস্তাতেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি, আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সন্ধে ৭টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত কলকাতা বিমানবন্দরে বিমান চলাচলও বন্ধ। মঙ্গলবারই এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
তবে বিপদ যে একেবারেই নেই তা নয়। তিথি অনুযায়ী আজ ভরা কোটাল আর চন্দ্রগ্রহণ। ফলে ঘূর্ণিঝড়ের জেরে গঙ্গায় ভারী বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কায় কলকাতা ফের জলমগ্ন হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। কলকাতা পুরসভার নিকাশি বিভাগের তরফে জানানো হয়েছে, গঙ্গায় জলের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে যাতে শহরে প্রবেশ না করতে পারে সেই জন্য লকগেটগুলি বন্ধ রাখা হয়েছে সকাল সাড়ে দশটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত।