দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দিল্লি হিংসার বলি আইবি অফিসার অঙ্কিত শর্মার দেহ আঁকড়ে আর্তনাদ করছে পরিবার। ‘‘কে মেরেছে আমার ছেলেকে’’, শোক ছাপিয়েও গর্জে উঠেছে রাগ। বুকে যন্ত্রণা, দু’চোখে যেন আগুন ঝলসে উঠেছে সন্তানহারা মায়ের। এমন নৃশংস হত্যার বিচার কোথায়? শাস্তি পাবে কারা? অসহায় পরিবারের প্রশ্নের মুখে প্রশাসন।
নর্দমার মধ্যে পড়ে ছিল থেঁতলানো, রক্তাক্ত শরীরটা। রক্ত জমাট বেঁধে কালো হয়ে গিয়েছিল। তার মধ্যেও শরীরে বিঁধেছিল গুলি। দিল্লি হিংসার বলি আইবি অফিসার অঙ্কিত শর্মা। গোয়েন্দা দফতরের সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্ট অঙ্কিতের বাবা রবীন্দ্রও রয়েছেন গোয়েন্দা বিভাগে। তাঁর অভিযোগের আঙুল আম আদমি পার্টির দিকে। বলেছেন, ‘‘আম আদমি পার্টির সমর্থকরাই মেরেছে আমার ছেলেকে। প্রথমে মেরে হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তারপরে পাথর দিয়ে শরীর থেঁতলে, গলা চিড়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরেও মৃত্যু নিশ্চিত করতে গুলি চালানো হয়েছে। এমন নৃশংস খুনিদের শাস্তি চাই।’’
মঙ্গলবার বিকেলে বাড়ি ফেরার পথেই উন্মত্ত বিক্ষোভকারীদের মাঝে পড়ে যান আইবি অফিসার অঙ্কিত। চাঁদবাগ ব্রিজের উপরে ওঠার পরেই তাঁকে ঘিরে ধরে একটি গোষ্ঠী। বেদম মারতে মারতেই গলা কেটে দেওয়া হয়। খুব কাছ থেকে চালানো হয় গুলি। রক্তাক্ত দেহটা নর্দমায় ফেলে চলে যায় দুষ্কৃতীরা। আবার অন্য সূত্র বলছে, বাড়ি থেকেই নাকি টেনে বার করে খুন করা হয়েছে গোয়েন্দা অফিসারকে। তিনি গোয়েন্দা বিভাগে রয়েছেন, একথা নাকি জানত একটি গোষ্ঠী। তারাই এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী।
আগুন জ্বলছে রাজধানীতে। গত তিনদিনে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২১। দিল্লি পুলিশের হেড কনস্টেবল রতন লালের হত্যার পরে ফের এক গোয়েন্দা অফিসার দিল্লি হিংসার বলি। মৌজপুরের বিক্ষোভ থামাতে গিয়ে রোষের মুখে পড়েছিলেন রতন লাল। পাথর ছুঁড়ে তাঁকে আঘাত করে গুলি করে খুন করেছিল বিক্ষোভকারীরা। বাঁ কাঁধ ফুঁড়ে সেই গুলি বেরিয়ে গিয়েছিল ডান কাধ দিয়ে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই ভয়ঙ্কর মৃত্যু। সেই একইভাবে মর্মান্তিক মৃত্যু হল আইবি অফিসার অঙ্কিত শর্মার।
মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত দিল্লিতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৩। বুধবার সকালে আসফাক-সহ আরও চারজনকে গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। এ দিন ভোর সাড়ে ৪টে থেকে নাগাদ নতুন করে পাথর ছোড়াছুড়ি শুরু হয় উত্তর-পূর্বের ব্রহ্মপুরী-মুস্তাফাবাদ এলাকায়। গোকুলপুরীতে একটি পুরনো জিনিসপত্রের দোকানেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারদাম পুরীর কাছে পিটিয়ে মেরা ফেলে হয়েছে মহম্মদ আসফাক নামে ২৮ বছরের এক যুবককে।
সীলমপুর, জাফফরাবাদ, মৌজপুর, ভজনপুরা, চাঁদবাগ, করওয়াল নগর, গোকুলপুরী ও আরও অসংখ্য এলাকায় দোকানপাট জ্বালিয়ে দিয়েছে তাণ্ডবকারীরা। বাদ যায়নি পেট্রল পাম্প এবং রাস্তার পাশে থাকা গাড়িও। গুলি চালানোর পাশাপাশি এলোপাথাড়ি পাথর এবং ইটবৃষ্টিও করেছে তাণ্ডবকারীরা। বন্ধ দোকানপাট। রাস্তায় নেমেছে র্যাফ। সরকারি স্কুল-কলেজ বন্ধের পাশাপাশি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে সিবিএসই বোর্ডের পরীক্ষাও। উত্তর-পূর্ব দিল্লির চার জায়গায় জারি রয়েছে কার্ফু।
উত্তর-পূর্ব দিল্লির ভজনপুরা, চাঁদবাগ, করওয়াল নগর এলাকায় দোকানপাট পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মৃতের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তর-পূর্ব দিল্লির কিছু এলাকায় জারি করা হয়েছে দেখামাত্র গুলি করার বা ‘শুট অ্যাট সাইট’-এর নির্দেশ।