দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে ওদের ক্যাব করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে এবার রীতিমতো তীব্র চ্যালেঞ্জের সুর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। রেড রোড থেকে জোড়াসাঁকো মিছিল শেষে মমতা এদিন বলেন, কোনও ভাবেই রাজ্যে নাগরিকত্ব আইন চালু হতে দেব না। কেন্দ্র চাইলে রাজ্যের সরকার ফেলে দিক। কিন্তু কোনও কিছুতেই তিনি ‘সারেন্ডার’ করবেন না।
সোমবার দুপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের ডাকে মিছিল হয় রেড রোডে বাবাসাহেব আম্বেদকরের মূর্তির পাদদেশ থেকে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত। গান্ধীমূর্তি হয়ে যাওয়া এই মিছিলের সামনে আগাগোড়া ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মিছিলের শেষে জনসভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেখান থেকেই মমতা বুঝিয়ে দিলেন, এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইন ইস্যুতে আরও তীব্র, আরও দীর্ঘ আন্দোলনের পথে হাঁটতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই আন্দোলনের গোড়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের নতুন স্লোগান তুলে দিলেন দলনেত্রী– কালা কানুন বাতিল কর, ক্যাব-এনআরসি চলবে না।
তবে তৃণমূল কংগ্রেসের আন্দোলন যাতে কোনও ভাবেই হিংসাত্মক না হয় সে ব্যাপারে বারবার বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, সব কিছুই করতে হবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে। কোথাও ট্রেনে আগুন, পোস্ট অফিসে আগুন বা পথ অবরোধ যাতে না করা হয় তার জন্য বারবার আবেদন জানান মমতা। বলেন, রাষ্ট্রপতিকে লাখ লাখ চিঠি লেখা থেকে এক লক্ষ হাত মাপের কালো কাপড় তৈরি করে বিরোধিতা করতে হবে। কোনও আন্দোলনে যেন ধর্মের ভিত্তিতে না হয় সে বিষয়েও নজর রাখতে নির্দেশ দেন মমতা।
সোমবারের পরে মঙ্গল ও বুধবারেও কলকাতায় মিছিল করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরেও যে আন্দোলন কমবে না সেটাও এদিন স্পষ্ট করে মমতা বলেছেন, ব্লকে ব্লকে এই আন্দোলনকে নিয়ে যেতে হবে।
নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে যখন কলকাতা থেকে দিল্লি-বিক্ষোভের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে, তখন দেশের সব নাগরিককে এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সোমবার দুপুরে একটি টুইট বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশের সব মানুষকে আশ্বস্ত করে দ্ব্যর্থহীনভাবে জানাতে চাই যে, নাগরিকত্ব আইনের জন্য কোনও নাগরিকের কোনও ক্ষতি হবে না। তা তিনি যে ধর্মেরই হোন না কেন। এই আইন নিয়ে দেশের কোনও নাগরিকের কোনও উদ্বেগের কারণ নেই। দেশের বাইরে বছরের পর বছর ধরে যে মানুষগুলো নিগৃহীত হয়েছেন, যাঁদের ভারত ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, তাঁদের জন্যই এই আইন”।
প্রধানমন্ত্রীর এই টুইট করার কারণ স্পষ্ট। নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে গোড়ায় শুধু অসম ও ত্রিপুরায় বিরোধিতা হচ্ছিল। কারণ, সেখানকার ভূমিপুত্ররা আশঙ্কা করছেন, এই আইন বাস্তবায়নের ফলে শরণার্থী বাঙালিরা নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। তাতে নিজভূমে তাঁরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন। কিন্তু তার পর সেই আগুন ছড়ায় বাংলা, দিল্লিতে।
পশ্চিমবঙ্গে যেমন সংখ্যালঘু সংগঠনগুলি তীব্র আন্দোলনে নেমে পড়েছে, তেমনই দিল্লিতে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা রবিবার বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। সেই প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশ লাঠি চালানোয় দেশ জুড়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
I want to unequivocally assure my fellow Indians that CAA does not affect any citizen of India of any religion. No Indian has anything to worry regarding this Act. This Act is only for those who have faced years of persecution outside and have no other place to go except India.
— Narendra Modi (@narendramodi) December 16, 2019
এই পরিস্থিতিতে গতকালই প্রধানমন্ত্রী কিছুটা তীর্যক মন্তব্য করে বলেছিলেন, কারা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তা তাঁদের পোশাক দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
The need of the hour is for all of us to work together for the development of India and the empowerment of every Indian, especially the poor, downtrodden and marginalised.
We cannot allow vested interest groups to divide us and create disturbance.
— Narendra Modi (@narendramodi) December 16, 2019
এদিন টুইট বার্তায় সে কথার পুনরাবৃত্তি না করলেও প্রধানমন্ত্রী বলেন, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করবে তা আমরা চলতে দিতে পারিনা। যে হিংসাত্মক তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আলোচনা ও বিতর্কের মধ্যে দিয়ে সমাধানের পথ খোঁজাই আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্য। সরকারের সম্পত্তি নষ্ট করে মানুষকে বিপদে ফেলা সঠিক পথ নয়”। তাঁর কথায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে জরুরি হল সবাই মিলে দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করা এবং প্রকৃতপক্ষে দেশের মানুষের ক্ষমতায়ণের চেষ্টা করা। বিশেষ করে গরিব, পিছিয়ে পড়া ও প্রান্তিক মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে।
This is the time to maintain peace, unity and brotherhood. It is my appeal to everyone to stay away from any sort of rumour mongering and falsehoods.
— Narendra Modi (@narendramodi) December 16, 2019