আমপানে অন্তত মৃত ৭২,আড়াই লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস, পরিস্থিতি দেখতে মোদীকে আহ্বান মুখ্যমন্ত্রীর

0
2180

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রাজ্যে মোট ৭২ জন মারা গেছেন সুপার সাইক্লোন উমফানের দাপটে! বৃহস্পতিবার দুপুরে নবান্নের বৈঠকে এ কথাই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, কলকাতাতেই মারা গেছেন অন্তত ১৫ জন, হাওড়ায় ৭ জন, উত্তর ২৪ পরগনায় ১৭ জন। আরও নানা জেলা থেকে এসেছে মৃত্যুর খবর। যাঁরা মারা গেছেন, প্রত্যেকের পরিবারকে আড়াই লক্ষ টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন মুখ্যমন্ত্রী। উমফান মোকাবিলায় ১০০০ কোটি টাকার ফান্ড তৈরি করার কথা ঘোষণা করেন তিনি।

তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে বলব একবার ভিজিট করে যান, দেখে যান কী ভয়াবহতা গেছে।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁকে ফোন করেছিলেন। ক্ষতিপূরণের তালিকা তিনি জানাবেন কেন্দ্রকে, তার পরে দেখা যাক কত কী দেয় কেন্দ্র। তিনি আরও বলেন, “সামনে আবার বন্যা মানে ওই বর্ষাকাল আসছে। সে ক্ষেত্রেও সাবধান থাকতে হবে।”

নবান্নের সভাঘরে চলা ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, যে ভাবে তাণ্ডব চলেছে এই ঝড়ের, আগামীদিন এটা নিয়ে গবেষণা করা উচিত। নবান্ন কাল প্রায় দুলছিল। যেন মনে হচ্ছিল, ভূমিকম্প হচ্ছে। তাঁর কথায়, “কী ভয়ঙ্কর সময় গেছে, আমি তো আমার ঘরেই ঢুকতে পারছিলাম না।”

সাত দিনের মধ্যে সার্ভে করে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছেন পুকুরগুলো পরিষ্কার করাতে হবে। ১০০ দিনের লোক দিয়ে কাজ করানোর কথা বলেন তিনি। বিভিন্ন জায়গায় গাছ কাটা থেকে গাছ সরানোর কাজেও এই ১০০ দিনের শ্রমিকদের কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন। পরামর্শ দেন ক্লাবগুলোকে দিয়ে কাজ করানোর।

কোন এলাকায় কী সমস্যা, তা জানতে ছোট ছোট হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করার পরামর্শ দেন তিনি। পাশাপাশি আলাদা করে নির্দেশ দেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পানীয় জল সরবরাহের। দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা ও নদিয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান মমতা।

গোটা রাজ্যের প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। বনমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন প্রচুর সংখ্যায় নতুন গাছ লাগানোর। পাশাপাশি উল্লেখ করেন মৎস্যজীবীদের কথা। তাঁদের সাহায্য করার কথা। ক্ষতিগ্রস্ত সকলে যাতে ত্রিপল পান, সেটাও নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।

বিদ্যুৎ দফতর যাতে যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব সরবরাহ চালু করতে পারে রাজ্য জুড়ে, সে বিষয়টিকেও এ দিনের বৈঠকে গুরুত্ব দিতে বলেন মমতা। পাশাপাশি বলেন, সর্বত্র নিয়ম মেনে ব্লিচিং পাউডার ছড়াতে। কোনও স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হল কিনা দেখতে বলেন তিনি।

এদিনের বৈঠকে পারভেজ সিদ্দিকীর ভূয়সী প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি বলেন, “আপনি ভাল কাজ করছেন, অনেকের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিয়েছেন। দেখে নিন যাতে রেশন পেতে সমস্যা না হয় কারও। রেশন দোকানের সামনে রাস্তাঘাট ভেঙে গেলে সেগুলো ঠিক করতে বলবেন।”

বন দফতরের কর্মী ও কর্তাদের দিয়ে আরও বেশি করে কাজ করানোর নির্দেশ দিয়েছেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কতা, “এই সময়ে আবার হাতি বেরিয়ে যেন আবার ক্ষতি না করে সেটা দেখে নিতে হবে রাজীব।” মাচা করে নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।

ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রকে স্টোররুম হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে বলে নির্দেশ দেন মমতা। জানান, তিনি নিজে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখবেন পরিস্থিতি। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আগে যাবেন, পরিস্থিতি একটু ঠিক হলে। বেবিফুড থেকে শুরু করে কোনও খাবারের জোগান যেন কম না পড়ে, তা নজরে রাখতে হবে। প্রয়োজনে ড্রোন উড়িয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর।

পাশাপাশিই যোগাযোগ ব্যবস্থা ফেরানোর দিকে নজর দিতে বলেন তিনি। বেসরকারি বাসও চালু করতে বলেন তিনি। স্যানিটাইজ করে,  নিয়ম মেনে বাস চালু করতে বলেন তিনি। সমস্ত বিডিও, আইসি, কনস্টেবল-সহ সমস্ত ডিপার্টমেন্টকে অনেক ধন্যবাদ দেন তিনি। সাধারণ মানুষকেও ধন্যবাদ দেন সহযোগিতা করার জন্য।

এদিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দলের বিভিন্ন মন্ত্রীকে আলাদা আলাদা করে জেলা ভাগ করে দেন ক্ষয়ক্ষতির হিসেব বোঝার জন্য ও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। নদিয়া, মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর ঘুরে দেখতে বলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান ও আসানসোলের দায়িত্ব দেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। ববি হাকিমকে বলেন পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, ঘুরে দেখতে। ঝাড়গ্রাম যাবেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বসিরহাট-সহ উত্তর ২৪ পরগনা খতিয়ে দেখবেন সুজিত বসু। অরূপ বিশ্বাস দেখবেন উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণ ২৪ পরগনার দায়িত্বে মন্টুরাম পাখিরা।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিনের বৈঠকে বলেন, “এ সময়ে কেন্দ্রের উচিত সম্পূর্ণ ভাবে আমাদের সাহায্য করার। দেখা যাক কী হয়। আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব রাজ্যে এসে নিজে পরিস্থিতি দেখতে।”

Previous articleআমপানের তাণ্ডবে রাজ্যে মৃত অন্তত ১২, দুই চব্বিশ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল গাছে-তারে এখনও অবরুদ্ধ
Next articleশুক্রবারই বাংলা পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী, সারা দেশ আছে বাংলার পাশে, সবরকম সাহায্য করা হবে, জানালেন মোদী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here