দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ২০০৪ সালে গুজরাটে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় ‘অনিল’। বঙ্গোপসাগর বা আরব সাগরের কোনও ঘূর্ণিঝড়ের সেই প্রথম নামকরণ। ১৬ বছর পর নামের প্রথম তালিকা শেষ হল আমপানের হাত ধরে।
এর মধ্যেই ঘূর্ণিঝড়ের নতুন নামাবলিও তৈরি। আগে নাম রাখার দায়িত্বে ছিল ৮টি দেশ, রাখা হয়েছিল ৬৪টি নাম। এ বার তালিকা লম্বা। ১৩টি দেশ মিলে নাম রেখেছে ১৬৯টি। সাগরের জঠরে জন্ম হলেই সেই নামে দুনিয়া চিনবে ঘূর্ণিঝড়কে।
একে তো করোনাভাইরাসের থাবা। তার মধ্যে আবার সব লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেল ঘূর্ণিঝড় আমফান। বহু মানুষের ক্ষতি হয়েছে। রাজ্যের একাধিক জেলা ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আমপানের দাপটে।
বঙ্গোপসাগরে উপকূলীয় অঞ্চলের ৬৪তম ঘূর্ণিঝড় ছিল আমপান। জানিয়েছিল বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)। আসন্ন আরেক মহাপ্রলয়ের নাম নিসর্গ।
নিসর্গ নামটি বাংলাদেশের প্রস্তাবিত। ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, ওমান, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ডের সঙ্গে ২০১৮ সালে তালিকায় আরও পাঁচটি দেশকে যুক্ত করা হয়েছে। ইরান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী আর ইয়েমেন। এই ১৩টি দেশ এপ্রিলে আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের ১৬৯টি নাম প্রস্তাব করেছে।
বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর লাগোয়া যে দেশগুলিতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়ে, তেমন ১৩টি দেশ নাম রাখার দায়িত্বে। ব্যবহারের মূল দায়িত্বে ভারত। স্পষ্ট করে বললে নয়াদিল্লির রিজিওনাল স্পেশ্যালাইজড মেটেরোলজিক্যাল সেন্টার ফর ট্রপিক্যাল সাইক্লোনস ওভার নর্থ ইন্ডিয়ান ওশনস। এতদিন ছিল আটটি দেশ বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড। নতুন তালিকায় যোগ হয়েছে ইরান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও ইয়েমেন।
নামাবলি’ দেখতে রসায়নের পর্যায় সারণির মতো। আদ্যাক্ষর অনুযায়ী পর পর দেশের নাম। ডান দিকে সেই দেশের দেওয়া নাম। একটি করে ঘূর্ণিঝড় আসে, একটি করে নাম দেওয়া হয়। যেমন, এর পরই কোনও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে নাম হবে, নিসর্গ। নামটি বাংলাদেশের দেওয়া। পরের দু’টি ভারতের গতি, ইরানের নিভার।
কেন নাম দেওয়া হয় ঘূর্ণিঝড়ের? মৌসম ভবনের ডিরেক্টর জেনারেল মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র বলেন, ‘প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়কে আলাদা করার জন্যই নামকরণ করা হয়। নাম থাকলে দ্রুত মানুষের কাছে তা পরিচিত হয়ে ওঠে। দ্রুত লোকজনকে সতর্ক করা যায়। মানুষের মনে চিরদিনের জন্য দাগও কেটে যায় বহু ঝড়।’ যেমন, আয়লা, বুলবুল বা আমপান।
নামকরণের এই চল উত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এসেছে অনেক পরে। প্রবণতা প্রথম দেখা যায় প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিকের ক্ষেত্রে। ১৯৫৩ সালে শুরু হয় হারিকেনের নাম দেওয়া। শুরুতে বেশিরভাগ ঘূর্ণিঝড়ের হত মেয়েদের নামে। পরে আবার ছেলেদের নামের চল দেখা যায়। গোটা বিশ্বেই যে দেশগুলিতে ঝড়ের প্রভাব পড়ে, নামকরণ তারাই করে। যেমন, দক্ষিণ চিন সাগরে সৃষ্ট টাইফুনের নাম ঠিক করে ওই অঞ্চলের দেশগুলি। আমেরিকা ও তার পড়শি দেশ মিলে ঠিক করে আটলান্টিকের হারিকেনের নাম। টাইফুন বা হারিকেনের আনাগোনা সাইক্লোনের চেয়ে বেশি। তাই একই নাম ঘুরে-ফিরে আসার চল রয়েছে। সাইক্লোনের ক্ষেত্রে অবশ্য এক নাম দু’বার ব্যবহারের চল নেই।
তাই প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল নতুন তালিকার। ৬৪টি নাম শেষ হতে সময় লাগল ১৬ বছর। যার ১৫টিই কাজে লেগেছে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে। নতুন তালিকা তৈরি করতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ওমানে বৈঠকে বসে ১৩টি দেশ। দফায় দফায় চলে ঝাড়াই-বাছাই। শেষে তা পাঠানো হয় রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থায়। চূড়ান্ত তালিকা সম্প্রতি ছাড়পত্র পেয়েছে। মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘দেশের প্রতিটি আবহাওয়া কেন্দ্রকেই নাম পাঠাতে বলা হয়েছিল। আলিপুর থেকেও নাম পাঠানো হয়।’
আমপানের পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়গুলির নাম হবে নিসর্গ (বাংলাদেশের প্রস্তাবিত), গতি (ভারতের প্রস্তাবিত), নিভার (ইরানের প্রস্তাবিত), বুরেভি (মালদ্বীপের প্রস্তাবিত), তৌকতাই (মায়ানমারের প্রস্তাবিত নাম), ইয়াস (ওমানের প্রস্তাবিত)।
এর আগে হুদহুদ, তিতলির মতো নাম নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। নামে পাখি বা প্রজাপতি কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ঝড়ের নাম কেন নিসর্গ, নতুন তালিকার প্রথম নামও নিয়ে প্রশ্ন উঠল বলে!