দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রাজ্যের এক জন মানুষও যাতে সরকারি পরিষেবায় বঞ্চিত না-হন, তা নিয়ে বার বারই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবু যাঁরা এখনও বঞ্চিত, তাঁরা যাতে আর বাদ না-থাকেন, সে জন্য আজ, মঙ্গলবার থেকে সাধারণের ‘দুয়ারে’ পোঁছবে খোদ সরকারই। এই কর্মসূচি সফল করতে রাজ্যজুড়ে ২০ হাজার শিবির হচ্ছে। যে কোনও নাগরিক কোনও সরকারি পরিষেবা না-পেয়ে থাকলে ক্যাম্পেই আবেদন করতে পারবেন। তার আগে সোমবার ভার্চুয়াল বৈঠকে মুখ্যসচিব থেকে জেলা স্তরের পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকদের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, সাধারণ মানুষের যাতে কোনও অসুবিধা না-হয়, সে জন্য কোন পরিষেবা পেতে কী কী নথি বা তথ্য পেশ করতে হয়, তা ভালো করে বুঝিয়ে বলতে হবে।

এর আগে দলীয় স্তরেও সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছতে পাড়ায় পাড়ায় সক্রিয় হয়েছেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা। সেখানে মূলত সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কার্ড বিলি করছেন দলীয় নেতৃত্ব। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বা শেষে বিধানসভা ভোটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হবে। তার আগে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি–এই দু’মাসের মধ্যেই সরকারি পরিষেবা প্রতিটি মানুষের বাড়ি-বাড়ি পৌঁছতে চাইছে সরকার ও শাসকদল। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস রবিবার তাঁর নির্বাচনী এলাকা টালিগঞ্জে তফসিলি সার্টিফিকেট প্রদানের শিবির করেছেন। সোমবার সার্টিফিকেট বিলি করেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরও জারি থাকছে। ৭ তারিখ মেদিনীপুর এবং ৯ তারিখ বনগাঁয় সভা করবেন তিনি। ১৪, ১৫ এবং ১৬ ডিসেম্বর যথাক্রমে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ি সফরের কথা তাঁর।

কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ি সফরের কথা তাঁর।

৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত চার দফায় চলবে মমতা সরকারের এই ‘দুয়ারে সরকার’কর্মসূচি। লক্ষ্য থাকবে যাতে সরকারের ১১টি সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা থেকে রাজ্যের একটি পরিবারও বঞ্চিত না হয়। কেউ তালিকাভুক্ত না হয়ে থাকলেও বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা বা প্রতিবন্ধী ভাতার আবেদনও নেওয়া হবে এই সব শিবিরে। যে কোনও অভিযোগ ও আবেদনের দ্রুত নিষ্পত্তিতে সরকারি কর্মীরা ফর্ম, কম্পিউটার-সহ সমস্ত সরকারি পরিকাঠামো নিয়ে হাজির থাকবেন। ১০০ দিনের কর্মসংস্থান প্রকল্পেও কেউ কাজের জন্য শিবিরে এসে আবেদন জানালে ১৫ দিনের মধ্যে কাজের ব্যবস্থা করা হবে। শিবিরের কাজের গতিপ্রকৃতি পোর্টালের মাধ্যমে নজরদারি করা হবে খাস নবান্ন থেকে। সোমবার নবান্ন থেকে কর্মসূচির প্রস্তুতি নিয়ে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, পুলিশ কমিশনার, মহকুমাশাসক ও বিডিওদের সঙ্গে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। বাড়ি থেকেই মুখ্যমন্ত্রী যোগ দেন বৈঠকে। নবান্ন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, শিবিরে কেউ এলে তাঁকে বুঝিয়ে বলতে হবে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে ঠিক কী তথ্য পেশ করতে হবে। নির্দিষ্ট কাগজ আনলে শিবির থেকেই ফর্ম পূরণ করে পরিবষেবার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

প্রতিটি জেলাতেই সচিব বা প্রধান সচিব পর্যায়ের এক আধিকারিককে নোডাল অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে পরিকল্পনা ও পরিসংখ্যান দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্সও গড়া হয়েছে। ১৬টি দপ্তরের আধিকারিক এর সদস্য। শিবিরের দৈনন্দিন কাজকর্ম দেখভাল করবে টাস্ক ফোর্স। এর উপরে থাকছে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে কমিটি। মুখ্যসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই শিবিরে মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পও পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা হবে। ইতিমধ্যেই সাড়ে সাত কোটি মানুষ এই প্রকল্পের আওতায় এসেছেন। রাজ্যের আরও আড়াই কোটি মানুষের কাছে পৌঁছনোই লক্ষ্য।’ পঞ্চায়েতসচিব এমভি রাও বলেন, ‘এই মুহূর্তে ১ কোটি ৩০ লক্ষ জব কার্ড রয়েছে। অনেকের জব কার্ড নেই। এ ছাড়াও কারও কাজের প্রয়োজন হলে শিবিরে আবেদন জানানোর পর কাজ দেওয়া হবে ১৫ দিনের মধ্যে। অনেকে জমির পরচায় নাম পরিবর্তন না হওয়ায় কৃষকবন্ধু প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন না। তাঁদের আবেদনেরও নিষ্পত্তি করা হবে শিবিরে। নথিভুক্ত করা যাবে বর্গাও।’

খাদ্যসাথী, কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, ঐক্যশ্রী, রূপশ্রী, জয় জোহারের মতো প্রকল্পেও আবেদন করা যাবে। মুখ্যসচিব জানান, প্রতিদিন কত লোক শিবিরে আসছেন, কত আবেদন জমা পড়েছে, কতগুলি আবেদনের নিষ্পত্তি হল–পোর্টালের মাধ্যমে নবান্নে বসেই নজরদারি চালানো হবে। বিডিওরা গ্রাম পঞ্চায়েত-স্তরে এবং পুরসভাস্তরে মহকুমাশাসকরা শিবিরের দায়িত্বে থাকবেন। জেলাশাসকদেরও শিবিরগুলি সরেজমিনে দেখতে বলা হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েত ও পুরসভার ওয়ার্ড ধরে ধরে শিবির চলবে। প্রথম পর্যায়ে শিবির চলবে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ওই সময় মানুষের কাছে গিয়ে রাজ্যের প্রকল্পগুলি তুলে ধরা, পরিষেবা পেতে কী কী নথি দাখিল করতে হবে, তা বিস্তারিত ভাবে জানানো হবে। যা ‘এগিয়ে বাংলা’ ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে শিবিরে সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় নথি দাখিল করলে সরকারি কর্মীরা শিবিরে বসেই ফর্ম পূরণ করে প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নেবেন। তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ের শিবির থেকে প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র মিলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here