দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বুধবার সন্ধ্যায় উত্তর-পূর্ব দিল্লির ভজনপুরায় অগ্নি সংযোগের খবর মিলেছে। পুলিশ অবশ্য দাবি করেছিল বুধবার বেলা বাড়ার পর থেকে আর কোনও বড় অশান্তির ঘটনা হয়নি। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এদিন বলেছেন, খুব শীঘ্রই শান্তি ফিরবে। পুলিশ দাবি করেছে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। সূত্রের খবর দিল্লিতে হিংসায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৭।
নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের প্রতিবাদী ও সমর্থনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে এখন উত্তপ্ত দেশের রাজধানী। চার দিন ধরে চলা হিংসায় ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত ১০৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এপর্যন্ত মোট ১৮টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইতিমধ্যেই শান্তি রক্ষায় আবেদন করেছেন। দিল্লিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থ হওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করেছে কংগ্রেস। দিল্লির হিংসাকে শিবসেনা ১৯৮৪ সালের দাঙ্গার সঙ্গে তুলনা করেছে।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল দাবি করেছেন, বিক্ষিপ্ত ভাবে গোটা দিল্লিতে হিংসার আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল সারা রাত তিনি ফোন পেয়েছেন। তিনি মনে করেন পুলিশ পুরোপুরি ব্যর্থ, এই অবস্থায় পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে এনে শান্তি ফেরানোর একমাত্র পথ হল সেনা মোতায়েন করা। যদিও দিল্লিতে সেনা মোতায়েন করতে চাইছে না কেন্দ্রীয় সরকার।
উস্কানিমূলক মন্তব্যের জন্য ইতিমধ্যেই বিজেপির তিন নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। ভরা এজলাসে বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রর উস্কানিমূলক মূলক মন্তব্যের অডিও ক্লিপিং বাজানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি, আদালত তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল ওই বক্তব্য নিয়ে।
বুধবার বিকেলে ওই মামলার শুনানির শেষ পর্বে দিল্লি হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, দিল্লিতে যারা যারা হিংসায় উস্কানি দিয়ে বক্তৃতা দিয়েছে, ঘৃণা ছড়িয়েছে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে হবে।
দিল্লির হিংসা নিয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন প্রাক্তন আমলা হর্ষ মান্দার।
সেই মামলার শুনানির সময় বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের বক্তব্যের রেকর্ড বাজিয়ে শোনাতে বলে হাইকোর্ট। অশান্তি শুরু হওয়ার ঠিক আগে কপিল মিশ্র উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে যে বক্তৃতা করেছিলেন, আদালতে তা বুধবার শোনানো হয়।
হিংসার ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছিলেন হর্ষ মান্দার। বিচারপতি এস মুরলীধর ও বিচারপতি তালওয়ান্ত সিংকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চে সেই আবেদনের শুনানি হয়। আবেদনে ক্ষতিপূরণ ও সেনা নামানোর কথাও বলা হয়েছিল। দিল্লি পুলিশের হয়ে হাইকোর্টে সওয়াল করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটা। তাঁকে বিচারপতিরা বলেন, তিনি যেন দিল্লির পুলিশ কমিশনারকে পরামর্শ দেন যে, উস্কানিমূলক কথা বলার জন্য তিন বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর করা হোক।
ইতিমধ্যেই পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, উস্কানি ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের জন্য তিন বিজেপির নেতার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার বেলা তিনটের মধ্যে এফআইআর দায়ের করতে হবে।
হিংসার জন্য দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল দায় চাপিয়েছেন বহিরাগতদের উপরে। বুধবার তিনি বলেন, “এই ঘটনার জন্য স্থানীয় লোকজন দায়ী নন।” বিধানসভায় তিনি বলেন, “দিল্লির মানুষ হিংসা চান না, ‘আম আদমি’ এই ঘটনা ঘটায়নি। এই ঘটনা ঘটিয়েছে সমাজবিরোধী, রাজনৈতিক ও উগ্রপন্থীরা।” দিল্লির হিন্দু ও মুসলমানরা কখনও লড়াই চান না বলেও বিধানসভায় বলেন মু্খ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
দিল্লির হিংসায় নিহত রতন লালের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে সরকার, পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যেই রাজধানী দিল্লির বেশ কয়েকটি জায়গায় দেখা মাত্রই গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, জারি করা হয়েছে কার্ফু।
পুলিশের পাশাপাশি নামানো হয়েছে আধাসেনা। পরিস্থিতি সরেজমিন খতিয়ে দেখেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল।