অভিষেককে দিল্লিতে কেন, ক্ষমতা থাকলে কলকাতায় ডাকুন: আমরা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার: মমতা

0
579

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মাত্র দু’দিনের ব্যবধান। কয়লা কাণ্ডে ৯ ঘন্টা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। কিন্তু সেখানেই শেষ হয়নি জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব। তাই আবার তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট । আগের সেই জিজ্ঞাসাবাদের ৪৮ ঘণ্টা না পেরতেই ফের তলব করা হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

কয়লা মামলায় গত সোমবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ন’ঘণ্টা জেরা করেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি এনফর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। বুধবার সকালেই জানা গিয়েছে, আইকোর মামলায় রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নোটিস পাঠিয়েছে সিবিআই। যা নিয়ে বিকেলে ভবানীপুর উপনির্বাচনের কর্মীসভায় গর্জে উঠলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এজেন্সির উদ্দেশে তৃণমূলনেত্রীর হুঙ্কার, “এখানকার মামলায় দিল্লিতে নিয়ে যাচ্ছেন কেন? কার গালে চুমু খেতে? ক্ষমতা থাকলে কলকাতায় ডাকুন। কলকাতায় তো আপনাদের অফিস রয়েছে।”

কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে এজেন্সিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার অভিযোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন নয়। এদিন আরও একবার সেই অভিযোগ তুলে মোদী-শাহকে নিশানা করলেন মমতা। তাঁর কথায়, “শুধুমাত্র আমাকে জব্দ করার জন্য অভিষেককে ডেকে ন’ঘণ্টা হেনস্থা করেছে। আজকে ডেকে বলছে কালকেও আসতে হবে। চোরের মায়ের বড় গলা। নরেন্দ্র মোদী আর অমিত শাহ এই দুজনে মিলে যা ইচ্ছা তাই করে যাচ্ছে। নির্বাচন ঘোষণা হল ওমনি এজেন্সি কে নামানো হল। অভিষেককে ডাকা হল, পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ডাকা হল।” মমতা এদিন বোঝাতে চান, রাজনীতিতে পেরে উঠছে না বলেই কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে এই ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।

মমতা এদিন আরও বলেন, তাঁকে আঘাত করার জন্যই অভিষেককে ডেকে পাঠানো হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ নেই। শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই এই ঘটনা ঘটাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। নারদ তদন্ত নিয়েও এদিন তোপ দাগেন মমতা। তাঁর কথায়, “নারদ কেসে সুব্রতদা, ববির নাম আছে। আর যে আসল টাকা নিয়েছে তার নাম নেই।”

শুধু তাই নয়। কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলকেও এজেন্সি দেখিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মমতা। তাঁর কথায়, “এজেন্সি দেখিয়ে কংগ্রেসকে জব্দ করেছে, মুলায়ম সিং যাদবকে জব্দ করেছে, শারদ পাওয়ারকে জব্দ করেছে। কিন্তু কাউকে কাউকে ওরা জব্দ করতে পারেনি। পারবেও না।”

ভবানীপুর উপনির্বাচনের প্রচারের শুরুতেই এদিন গর্জে ওঠেন তিনি। চেতলার কর্মীসভা থেকে তিনি বলেন, ‘যেই নির্বাচন ঘোষণা হয়েছে, এজেন্সি নাচতে শুরু করেছে৷ নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ মিলে যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছে৷ নির্বাচন ঘোষণা হল, অভিষেককে ডেকে পাঠালো, পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ডাক পেল৷’এখানেই শেষ নয়, রীতিমতো বিস্ফোরক ঢঙেই মমতার সংযোজন, ‘রাজনৈতিক ভাবে এরা মোকাবিলা করতে পারেনা৷ কংগ্রেস, মুলায়ম সিং, শরদ পাওয়ারকে জব্দ করেছে এজেন্সি দেখিয়ে৷ আমাকে আঘাত করার জন্য অভিষেকের বিরুদ্ধে কেস করছে৷ ন ঘণ্টা জেরা করার পর বলছে আবার এসো৷ কলকাতার মামলা দিল্লিতে ডেকে জেরা করছে

এদিন বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ শানিয়ে উপনির্বাচনের দামামা বাজিয়ে দেন তৃণমূল নেত্রী। বলেন, ‘সকাল থেকে রাত কোভিডের টিকা নেই, বিজেপি-র দেখা নেই৷ গ্যাসের দাম বাড়ছে, পেট্রোল ডিজেলের দাম বাড়ছে, বিজেপি-র দেখা নেই৷ কৃষকরা দশমাস ধরে আন্দোলন করছে বিজেপি-র দেখা নেই৷ শুধু এজেন্সিকে ডেকে ডেকে বলছে একে গ্রেফতার করো, ওকে গ্রেফতার করো৷’

ইডি সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, কয়লা কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত অনেক প্রশ্নেরই উত্তর পাননি তদন্তকারী আধিকারিকেরা। অভিষেককে ৯ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও অনেক উত্তর এখনও অধরা। যদিও ইডি’‌র জিজ্ঞাসাবাদের পর অভিষেক সংবাদমাধ্যমের সামনে দাবি করেছিলেন, সব প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছেন তিনি।

কিন্তু অভিষেকের সেইসব উত্তরে সন্তুষ্ট না হয়েই ফের তাঁকে তলব করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রে জানানো হচ্ছে।

এদিন অবশ্য বিজেপির প্রতিহিংসা নিয়ে বলতে গিয়ে ফের ত্রিপুরার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে তৃণমূল নেত্রীর গলায়। তিনি বলেন, ‘ত্রিপুরায় আমাদের মিটিং করতে দেওয়া হচ্ছে না, ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, প্রতিদিন আমাদের কর্মীদের রক্তাক্ত করা হচ্ছে৷ আমি যদি এখানে ঢুকতে না দিই? আমি তো সেটা করিনা, তাহলে ওদের সঙ্গে আমার কী পার্থক্য থাকল?’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন জানান, আগামী ১০ সেপ্টেম্বর, গণেশ পুজোর দিন মনোনয়ন জমা দেবেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

পাশাপাশি, নন্দীগ্রামে ভোট নিয়ে মমতার অভিযোগ নিয়ে কর্মিসভায় মমতা বলেন, ‘শুধু আমরাই জানি, কী ভাবে আমরা ভোটে লড়েছি। একদিকে সমস্ত এজেন্সি, সব শক্তির বিরুদ্ধে লড়েছি। আমার পায়ে আঘাত লেগেছিল। তাও জব্দ করতে পারেনি। চক্রান্ত করেই আমার উপরে হামলা করা হয়েছিল। হামলা চালানোর পর প্লাস্টার নিয়েই তিন দিনেই বেরিয়ে পড়েছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘কথায় কথায় হুমকি, বাইরে থেকে গুণ্ডা নিয়ে এসে ভোট করেছিল। এমনভাবে তৃণমূলকে ধ্বংস করার চেষ্টা হয়েছিল, ভাবলে শিউরে উঠবেন। আমি একটা জায়গায় হেরেছি। আদালতে গিয়েছি। ইলেকশন মেশিন নিয়ে প্ল্যানিংটা আমিও কিছু কিছু জেনেছি।’ মমতার হুঁশিয়ারি, ‘ভয় দেখাও, তবে আমরা নেংটি ইদুর নই, রয়েল বেঙ্গল টাইগার।’

পাশাপাশি শুভেন্দুকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘ভগবানের জেষ্ঠ্যপুত্র! দুর্যোধন-দুঃশাসনের থেকেও খারাপ। হাইকোর্টের নির্দেশ, কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না। যখন যেমন সময় হবে তখন জেরা করা হবে। তাহলে বাকিদের বেলায় এই নিয়ম আলাদা কেন?’ বুধবার চেতলায় কর্মিসভায় অংশগ্রহণ করেন মমতা। সেখান থেকেই কার্যত আনুষ্ঠানিকভাবে ভবানীপুর উপ নির্বাচনের প্রচার শুরু করলেন তিনি। প্রায় ৪৪-৪৫ মিনিটের কর্মিসভায় নাম না করে একাধিকবার শুভেন্দুকে নিশানা করতে ছাড়েননি তিনি।

Previous articleআজই ভবানীপুরে প্রচার শুরু মমতার
Next articleDaily Horoscope: চাকরি থেকে ব্যবসা, স্বাস্থ্য থেকে পরিবার, কেমন যাবে আপনার আজকের দিন? আজকের রাশিফল জানুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here