দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ অবশেষে চন্দ্রযান ২-এর ধংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছে নাসা। ছবি প্রকাশ করে সেকথা জানিয়েছে আমেরিকার এই মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়েছে চেন্নাইয়ের এক ইঞ্জিনিয়ারের দৌলতে। তিনিই প্রথম এই ধংসাবশেষ চিহ্নিত করেছিলেন। পরে নাসা সেটাকেই মান্যতা দিয়েছে। কে এই চেন্নাইয়ের ইঞ্জিনিয়ার? কী ভাবেই বা তিনি খুঁজে পেলেন চন্দ্রযানের ধংসাবশেষ?
চেন্নাইয়ের ৩৩ বছর বয়সী ইঞ্জিনিয়ার সন্মুগ সুব্রহ্মণ্যন বাড়িতে বসেই চিহ্নিত করেছেন চন্দ্রযানের ধংসাবশেষ। শুধুমাত্র কিছু ছবি ও বোধশক্তি দিয়ে। নাসার তরফে তাঁর নাম প্রকাশ করা ও তাঁকে কৃতিত্ব দেওয়ার জন্য স্বভাবতই বেশ খুশি সন্মুগ। সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি জানান, কী ভাবে এই অসাধ্যসাধন তিনি করলেন। যেখানে ইসরো, নাসার মতো মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ল্যান্ডার বিক্রমের ধংসাবশেষ খুঁজে পায়নি, সেখানে স্রেফ বাড়িতে বসেই তিনি কী ভাবে সবটা খুঁজে পেলেন।
@NASA has credited me for finding Vikram Lander on Moon's surface#VikramLander #Chandrayaan2@timesofindia @TimesNow @NDTV pic.twitter.com/2LLWq5UFq9
— Shan (@Ramanean) December 2, 2019
The #Chandrayaan2 Vikram lander has been found by our @NASAMoon mission, the Lunar Reconnaissance Orbiter. See the first mosaic of the impact site https://t.co/GA3JspCNuh pic.twitter.com/jaW5a63sAf
— NASA (@NASA) December 2, 2019
সন্মুগ জানিয়েছেন, নাসা ও ইসরো চন্দ্রযানের ধংসাবশেষ খুঁজে না পাওয়াতেই তাঁর এই বিষয়ে আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। তিন বলেন, “আমি অবাক হচ্ছিলাম কেন ইসরো বা নাসা ল্যান্ডার বিক্রমের ধংসাবশেষ খুঁজে পাচ্ছে না। নাসা চাঁদের যে অংশে বিক্রম নেমেছিল সেখানকার অনেক ছবি প্রকাশ করে। আমি দুটো ছবি দুটো ল্যাপটপে পাশাপাশি নিয়ে ভাল করে দেখি। একটা ছবি আগেকার। অন্য ছবিটি চন্দ্রযানের পরের। দুটো ছবি ভাল করে দেখে আমি বুঝতে পারি তাতে কিছুটা ফারাক রয়েছে। যদিও খালি চোখে একবারে সেই ফারাক চোখে পড়ে না। অনেক সময় লেগেছিল আমার। শেষ পর্যন্ত আমি বুঝতে পারি চন্দ্রযানের পরের ছবিতে এমন কিছু জায়গা আছে যেটা আগের ছবিতে নেই। সেই পিক্সেলগুলোকে আমি চিহ্নিত করি।”
তারপরেই ইসরো ও নাসার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন সন্মুগ। ৩ অক্টোবর একটি টুইট করেন সন্মুগ। সেই টুইটে তিনি জায়গা চিহ্নিত করে লেখেন, “এটা কি ল্যান্ডার বিক্রম ? ( নামার জায়গা থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে ) মনে হয়ে ল্যান্ডার চাঁদের ধুলোর মধ্যে ঢাকা পড়ে গিয়েছে।” ইসরো ও নাসাকে ট্যাগ করে এই টুইট করেন তিনি। তারপর ১৭ নভেম্বর আরও কয়েকটি ছবি দিয়ে টুইট করেন সন্মুগ।
সন্মুগের করা টুইট নজরে আসে নাসার। তারা সেই ছবি নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেন। তারপর প্রায় দু’মাস পরে নাসা জানায়, সন্মুগের কথা ঠিক। ওগুলোই আসলে ল্যান্ডার রোভারের ধংসাবশেষ। অবশেষে তা পাওয়া গিয়েছে।
কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার হয়ে হঠাৎ মহাকাশ গবেষণায় এই আগ্রহ কী ভাবে হল সন্মুগের? সে উত্তরও অবশ্য নিজেই দিয়েছেন তিনি। সন্মুগ জানিয়েছেন, “আমার ছোট থেকেই মহাকাশ গবেষণা নিয়ে আগ্রহ। যেদিন থেকে বুঝতে শিখেছি প্রত্যেকটা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ দেখেছি। আমি যে এই কাজে ইসরো ও নাসাকে সাহায্য করতে পারলাম তাতে আমি খুব খুশি।”
মঙ্গলবার সকালে নাসার লুনার রেকনিসেন্স অরবিটার তথা এলআরও-এর তোলা ছবি সোশাল মিডিয়াতেও প্রকাশ করা হয়। ল্যান্ডের ফলে কী ধরনের অভিঘাত হয়েছিল এবং কী ভাবে ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে রয়েছে সেটাই দেখা যাচ্ছে ছবিতে। একটি বিবৃতিতে নাসা জানায়, ‘চেন্নাইয়ের ইঞ্জিনিয়ার সন্মুগ সুব্রহ্মণ্যন প্রথমে ধ্বংসাবশেষ চিহ্নিত করেন।
বিক্রম ল্যান্ডার যেখানে ক্র্যাশ ল্যান্ড করেছিল তার উত্তর পশ্চিম দিকে একটা বড় উজ্জ্বল পিকসেল প্রথমে চিহ্নিত করেন তিনি। এর পরই সন্মুগ লুনার রেকনিসেন্স অরবিটার প্রজেক্টের দায়িত্বে থাকা গবেষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর কথা শোনার পরই ওই প্রজেক্ট টিম চন্দ্রযান নামার আগের ও পরের ছবির তুলনা করে বুঝতে পারে ওটা ল্যান্ডারই ধ্বংসাবশেষ।’
প্রথম ছবিতে অবশ্য সবকিছু পরিষ্কার ভাবে ধরা পড়েনি। কারণ, যেখানে বিক্রম ক্র্যাশ ল্যান্ড করেছিল সেখানে বিশেষ আলো ছিল না তখন। তাই পরবর্তীকালে অক্টোবরের ১৪ ও ১৫ তারিখ এবং নভেম্বরের ১১ তারিখ আরও কয়েকটি ছবি তোলা হয় নাসার কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে। তার পরই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হন নাসার মহাকাশ গবেষকরা।