দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ রাজ্যের উপনির্বাচনেও দুই-তৃতীয়ংশ আসন গিয়েছে এনডিএর ঝুলিতে। যা করোনাকালে কেন্দ্রকে যেমন স্বস্তি দিচ্ছে তেমনি বঙ্গ জয় করতে নতুন উদ্যোমে লড়াই করার উৎসাহ যোগাচ্ছে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ জুটিকে। তার যেন ইজ্ঞিত এদিন নয়া দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে আয়োজিত বিজয় উৎসবে দিয়ে রাখলেন প্রধানমন্ত্রী। নাম না করেই বার্তা দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পরিবারতন্ত্র নিয়ে বিঁধলেন বিরোধী দলগুলিকে।
বিহার নির্বাচনে এবার ৭৪টি টি আসন পেয়েছে বিজেপি। ভোটের ময়দানে শরিক জেডিইউ-এর থেকে সংখ্যার হিসাবে যা ২৯টি বেশি। তাই বিহার জয়ের পর উৎসবেরও বহরও এবার বেশি বিজেপি শিবিরের। এক রাজ্যের জয়ের উদযাপন করতে তাই দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে এলাহি আয়োজন করা হয়েছিল।
#WATCH Delhi: BJP workers take part in the celebrations at BJP headquarters, following the victory of NDA in #BiharElections2020
— ANI (@ANI) November 11, 2020
Prime Minister Narendra Modi will address the party workers shortly. pic.twitter.com/vSkWTr3k7X
সকাল থেকে নেতা-কর্মীদের ভিড় উপচে পড়ছিল ১১ অশোক রোডে। আর বিকেল হতেই একে একে হাজির হলেন হাইপ্রফাইল নেতা-মন্ত্রীরা। কে নেই সেই দলে। সবার আগে এলেন বিজেপির সর্বভারচী সভাপতি জেপি নাড্ডা। এরপরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সবাই। আর সবশেষে হাজির হলেন প্রধানমন্ত্রী।
ঠিক সন্ধে সাতটায় মঞ্চে উঠলেন প্রধানমন্ত্রী। করোনাকালে তখন সামাজিক দূরত্ব বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নেতা-কর্মীদের চিৎকারে ফেঁটে পড়ছে বিজেপির সদর দফতর। এবার বিহারে এনডিএর জয়ের জন্য মোদীকেই কৃতীত্ব দিচ্ছে বিজেপি শিবির। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেই বাহবা দিলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাকে। এখন বিহারে জেডিইউ-এর থেকেও বড় দল বিজেপি। তবে দলের আসন বাড়লেও নীতীশই যে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসবেন তা মঞ্চ থেকে স্পষ্ট করে দিলেন মোদী। বিহার জয় যেন মোদী-শাহ জুটির কাছে দীপাবলির উপহার। তবে এখানেই থেমে থাকবে না তাঁদের বিজয় রথ। সারা ভারতে জুড়েই ফুটবে পদ্ম। আর সেই স্বপ্ন সফল করতে যে বাংলা জয়ের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে তাও এদিন স্পষ্ট করে দিলেন মোদী।
বিহার জয়ের পর আগামী ভোট বাংলায়। আর বঙ্গ জয় যে এবার তাদের প্রধান লক্ষ্য তা বারবার বলে এসেছে মোদী-শাহ জুটি। লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্যে বিজেপির বাড়বাড়ন্তের ফলে সেই আশা আরও পোক্ত হয়েছে গেরুয়া শিবিরের। রাজ্যে বেড়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের আনাগোনা। কংগ্রেস ও বামেদের পেছেন ফেলে এখন বাংলায় প্রধান বিরোধী দল হিসাবে উঠে এসেছে বিজেপি।
এরাজ্যে ২০১৪ সাল থেকে তাদের শতাধিক কর্মী খুন হয়েছেন বলে আগেই অভিযোগ করেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সাম্প্রতিক কালে বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লা সহ একাধিক দলীয় কর্মীর খুনকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়েছে বাংলা। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও স্বয়ং অমিত শাহের কাছে নালিশ জানিয়েছেন। আর এই আবহেই বিহার জয়ের মঞ্চ থেকে মোদী বললেন, ‘দেশের কিছু অংশে আমাদের নেতা-কর্মীদের খুন করা হচ্ছে। মৃত্যুর এই খেলা গণতন্ত্র নয়। এই সব করে জনমত অর্জন করা যায় না।’ নাম না করলেও প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল নেত্রীকেই নিশানা করতে চেয়েছেন, এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
মোদীর নিশানায় এদিন এসেছে পরিবার তন্ত্রও। বিহারে এনডিএ শিবিরকে এবার কড়া টক্কর দিয়েছে আরজেডির নেতৃত্বে মহাজোট। একক দল হিসাবে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছি আরজেডি। লালুপুত্র তেজস্বীর নেতৃত্বেই লড়াই করেছে মহাজোট। বিহার নির্বাচনে প্রচারে গিয়ে এর আগে একাধিকবার লালুর শাসনকে জঙ্গলরাজের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন মোদী।
আর লালুপুত্র তেজস্বীকে বলেছিলেন জঙ্গলরাজের যুবরাজ। সেই জঙ্গলরাজ ফের বিহারবাসী ফেরাতে চায় কিনা তা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছিলেন মোদী। বিঁধেছিলেন পরিবারতন্ত্রকে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধেও এর আগে একাধিকবার পরিবারতন্ত্রের কটাক্ষ হেনেছেন মোদী। বাংলাতেও বিজেপি নেতারা সেই পরিবারতন্ত্রকেই নিশানা করছেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংসদ ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও উঠেছে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অভিযোগ। আর এসবের মধ্যেই এদিন ফের রাজনৈতিক দলগুলির পরিবারতন্ত্র নিয়ে সরব হয়েছেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশকে অনেক বছর ধরে শাসন করা দল পরিবারতন্ত্রের শিকার। কিন্তু আমরা তা করিনি, বিজেপির দলীয় গণতন্ত্র মজবুত। তাই তো প্রধানমন্ত্রী বলতে পারেন, নাড্ডাজি এগিয়ে চলুন, আমরা আছি। দেশের আশীর্বাদ আমাদের সঙ্গে, আমাদের দায়িত্ব তা পালন করা।’