দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ জিনের বদলে এখন আরও ভয়ঙ্কর নোভেল করোনাভাইরাস। করোনাভিরিডি (Coronaviridae) গোত্রের এই ভাইরাস পরিবারের অনেক ভয়ঙ্কর সদস্যেরা আছে, যাদের প্রভাব প্রাণঘাতী। চিনে যে করোনাভাইরাস হামলা চালাচ্ছে সেটির নাম নোভেল করোনাভাইরাস (Novel Coronavirus2019-nCoV)।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলছে, এই ভাইরাসের সংক্রমণে সার্স বা সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটারি সিন্ড্রোমের মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন রোগীরা। এই রোগের নাম সিওভিডি-১৯ (COVD 19)। শুধু পশুপাখি নয়, এই ভাইরাস দ্রুত ছড়াতে পারে মানুষ থেকে মানুষে। চিনের উহানে যে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছিল, তা এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সঙ্কটে পরিণত হয়েছে।
আক্রান্ত রোগীদের ছোঁয়াচে সংক্রামিতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে লক্ষাধিক। কীভাবে ছড়াচ্ছে এই ভাইরাসের সংক্রমণ? কীভাবেই বা সতর্ক থাকতে হবে?
আক্রান্ত রোগীর বেশি কাছে যাওয়া ঠিক নয়—করোনার সংক্রমণ রয়েছে এমন রোগীর পাশ দিয়ে হাঁটলেও কি ভাইরাস ছড়াবে? এমন প্রশ্ন এখন সকলেরই মনে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর কতটা কাছে যাওয়া হচ্ছে তার উপর নির্ভর করবে ভাইরাস ছড়াবে কিনা। করোনার সংক্রমণ পজিটিভ এমন রোগীর মুখের খুব কাছে গেলে, বা তার চোখ-মুখ স্পর্শ করলেরোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থেকে যায়। কোনওভাবে যদি রোগীর থুতু বা লালা শরীরে প্রবেশ করে তাহলে এর প্রভাব হতে পারে মারাত্মক।
ভাইরাল ড্রপলেট’, হাঁচি-কাশি, লালা থেকে সাবধান— কর্নেল ইউনিভার্সিটি কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক গ্যারি হুইট্টেকার বলেছেন, এই ভাইরাসের আকার মানুষের চুলের ৯০০ ভাগের একভাগ মাত্র। কোনও কোষ প্রাচীর নেই। এই ভাইরাস নিজে থেকে চলাফেরাও করতে পারে না। মানুষের শরীরে বাসা বাঁধতে হলে এর একমাত্র পথ কোনও কিছুর মাধ্যমে বাহিত হয়েযাওয়া। সেটা শ্বাস-প্রশ্বাস হতে পারে, অথবা থুতু-লালার মধ্যে করে এটি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে, একেই বলা হচ্ছে ‘ভাইরাল ড্রপলেট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারও সঙ্গে হাত মেলালেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। হয়ত সেই রোগী মুখে, নাকে হাত দিয়েছেন, তারপরে সেই হাত মিলিয়েছেন অন্য কারও সঙ্গে। তাহলেও ভাইরাল ড্রপলেট ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগীর ধারেকাছে গেলে খুব ভাল করে হাত-মুখ ধুয়ে নেওয়া উচিত।
আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে একসঙ্গে বসে খাওয়াও মারাত্মক। ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব লেইসেস্টারের ভাইরোলজিস্ট জুলিয়ান ট্যাঙ বলেছেন, আক্রান্ত রোগীর ফেলে যাওয়া খাবারের গন্ধ শুঁকলেও ভাইরাস ছড়াতে পারে। কারণ শ্বাসের মাধ্যমে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে শরীরে।
কতটা দূরে থাকতে হবে আক্রান্ত রোগীর থেকে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু)মুখপাত্র ক্রিস্টিয়ান লিন্ডমেয়ার বলেছেন, অন্তত তিন ফুট দূরত্ব রাখা উচিত করোনা আক্রান্ত রোগীর থেকে। অন্যদিকে, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসের সংক্রমণ যদি পজিটিভ হয়, তাহলে সেই রোগীর ছ’ফুটের মধ্যে থাকলে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা তীব্র।
এখন, কীভাবে বোঝা যাবে সেই ব্যক্তি ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা। হু জানাচ্ছে, করোনার সংক্রমণ প্রাথমিক পর্যায়ে হলে মামুলি সর্দি-জ্বর হয়। সেক্ষেত্রে চট করে বোঝা যায়না।তবে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে, তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তখন সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এর অন্তিম পরিণতি শরীরের এক বা একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু।
যৌন মিলনেও কি ছড়ায় করোনাভাইরাস? বিশেষজ্ঞরা বলছেন চুমু থেকে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা প্রবল। কারণ সেক্ষেত্রে আক্রান্তের লালা থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে। তবে যৌন মিলনে ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা কম।
পোষ্যরা কতটা নিরাপদ-পোষ্যদের থেকে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে এমন গুজব আগেও রটেছিল উহানে। উঁচু বাড়ি থেকে পোষ্যদের রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে হত্যা করার অভিযোগও উঠেছিল। অধ্যাপক হুইট্টেকার বলছেন, মানুষের থেকেই সবচেয়ে বেশি ছড়াচ্ছে সিওভিডি-১৯। উল্টে মানুষের থেকে পোষ্যদের শরীরে ভাইরাস ছড়িয়েছে এমনটা শোনা যায়নি।