দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ ভারত-বিরোধী’ কাজের জন্য দেশ ছাড়ার নোটিস দেওয়া হল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া বাংলাদেশি ছাত্রী আফসারা অনীকা মীমকে। অভিযোগ, নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিনি ভিসার নিয়ম ভেঙেছেন।
নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরোধিতা করে ডিসেম্বর মাসে বেশ কয়েক বার আন্দোলন হয়েছে বিশ্বভারতীতে। আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীরা তো বটেই, অধ্যাপকরাও যোগ দিয়েছিলেন। সেই আন্দোলনের ছবি নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন আফসারা। বাংলাদেশের কুষ্ঠিয়ার আফসারা ২০১৮ সালে বিশ্বভারতীতে যোগ দেন। তিনি কলাভবনে ডিজাইন নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি কোর্সের ছাত্রী। তাঁর বন্ধুরা জানিয়েছেন আফসারা নিজে কোনও আন্দোলনে যোগ দেননি তবে ফেসবুকে বন্ধুদের ছবি পোস্ট করেছিলেন।
১৪ ফেব্রুয়ারি আফসারাকে একটি ইমেল করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তাঁকে ১৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে দেখা করতে বলা হয়। তিনি দেখা না করায় ২০ ফেব্রুয়ারি ফের একটি ইমেল করে ২৪ ফেব্রুয়ারি তাঁকে একই জায়গায় দেখা করতে বলা হয়। একবারও তিনি দেখা না করায় দেশ ছাড়ার চিঠি পান। আফসারার বক্তব্য, তিনি নিয়মিত ইমেল দেখেন না বলে এই নোটিসও দেখেননি। এখন তাঁকে চিঠি দিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে।
এই অবস্থায় সমস্যায় পড়েছেন ছাত্রীটি। আচমকা দেশ ছাড়ার নির্দেশে তিনি কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। তাঁর শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। কলকাতায় ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে দেখা করে তিনি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাবেন ও নিজের কথা জানাবেন বলে স্থির করেছেন।
এব্যাপারে এখন ছাত্রীকে কোনও সাহায্য করতে পারছে না বাংলাদেশের দূতাবাসও। তারা বিষয়টি ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে।
ছাত্রীকে দেশ ছাড়তে বলার ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করছে না কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীন বিশ্বভারতী। দুই দেশের ব্যাপার হওয়ায় প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাইছেন না ছাত্রীর কোনও বন্ধুও। তাঁরা শুধু বলছেন যে আফসারা কোনও আন্দোলনে যোগ দেননি। ইতিমধ্যেই নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দিয়েছেন আফসারা।
আফসারা যখন ওই ছবি নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন তখনই তাঁর বিরুদ্ধে ভারত-বিরোধিতার অভিযোগ করে তাঁর ফেসবুকে আড়াইশোর উপরে কমেন্ট করা হয়। অনেকে মনে করছেন সেগুলিই নিয়ে কেউ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে অভিযোগ জানিয়ে দিয়েছিল। তার জেরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এই পদক্ষেপ করেছে।
যে ভিসা নিয়ে তিনি ভারতে পড়াশোনা করছেন সেই ভিসার অন্যতম শর্ত হল, বিদেশি নাগরিক হওয়ায় ভারতের কোনও আন্দোলনে তিনি যোগ দিতে পারবেন না।
আফসারা বুঝতে পারছেন না কী দোষে তাঁর এই শাস্তি হল। তিনি আর পাঁচ জনের মতোই বন্ধুদের ছবি পোস্ট করেছিলেন ফেসবুকে। তার জন্য এমন শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে সেকথা তিনি বিন্দুমাত্র আন্দাজ করতে পারেননি। নিজেকে তিনি নির্দোষ বলে দাবি করছেন।