দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৪৪ টি পিটিশন দাখিল হয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালতে। পরে আরও কয়েকটি আবেদন জমা পড়ে। সব মিলিয়ে এখন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে ১৬০ টি পিটিশন জমা পড়েছে। আজ, বুধবার সেই পিটিশনগুলির ওপরে শুনানি হয় দেশের প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবদের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে।
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আইনজীবী কপিল সিব্বল আর্জি জানান, যতদিন না সুপ্রিম কোর্টে শুনানি শেষ না হয়, ততদিন যেন সিএএ কার্যকর না করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, সরকার পক্ষের বক্তব্য না শুনে স্থগিতাদেশ দেওয়া সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় সরকারকে বক্তব্য জানানোর জন্য সময় দেওয়া হয়েছে চার সপ্তাহ। তার পরে শুনানি শুরু হবে।
- সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে এখনই অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল না সুপ্রিম কোর্ট।
- কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিশ পাঠিয়ে এ ব্যাপারে চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব তলব করেছে শীর্ষ আদালত।
- বুধবার প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ ১৪৪টি মামলার শুনানি করে।
গত ১৮ ডিসেম্বর শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বোবদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছিল, এই আইনে স্থগিতাদেশ দেওয়া হচ্ছে না। তবে এই আইন কতটা বৈধ, তা খতিয়ে দেখবে আদালত। শুনানির দিন ঠিক হয়েছিল ২২ জানুয়ারি।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বলছে, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে যত অ-মুসলিম ব্যক্তি ধর্মীয় কারণে নিপীড়িত হয়ে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে এসেছেন, তাঁরা সকলেই শরণার্থী হিসেবে এ দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই আইনের বিরুদ্ধে যে সব মামলা দায়ের হয়েছে, সে সবের মোদ্দা বক্তব্য হল, নাগরিকত্ব পাওয়ার মাপকাঠি কখনওই ধর্ম হতে পারে না। এটা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের একেবারে পরিপন্থী।
মামলাকারীদের দাবি, সংবিধান অনুযায়ী ভারত এটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। যে কোনও ধর্মীয় বিশ্বাসের মানুষের সঙ্গে সমান আচরণ করতে বাধ্য এ দেশের সরকার। নতুন আইন সেই সংবিধানকে আঘাত করছে। এই আইন নাগরিকদের জীবন ও মৌলিক অধিকার তথা সাম্যের অধিকারও লঙ্ঘন করছে।
সারা দেশ উত্তাল সিএএ বিরোধী আন্দোলনে। কিন্তু মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে সভা করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্পষ্ট বলেন, “এই আইন প্রত্যাহারের কোনও প্রশ্নই নেই। যে যত ইচ্ছে আন্দোলন করুক নাগরিকত্ব আইন থাকবে।”
এ দিন অ্যাটর্নি জেনারেল বেণুগোপাল পিটিশনের জবাব দেওয়ার জন্য ৬ সপ্তাহ সময় দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছিলেন। পিটিশনারদের পক্ষে শীর্ষ আইনজীবী কপিল সিবাল আদালতের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন, আপাতত সিএএ-এর বাস্তবায়ন এবং এন পি আর নিয়ে গতিবিধি স্থগিত রাখা হোক। তবে সেই দাবি খারিজ করে দিয়ে শীর্ষ আদালত বলে, কেন্দ্রের জবাব না-শুনে নাগরিকত্ব আইনে স্থগিতাদেশ দেওয়া হবে না। তবে সিবালরা এই বিষয়কে সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠানোর যে আর্জি জানিয়েছিলেন, তা মেনে নেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে আদালত। জানানো হয়েছে, চার সপ্তাহে কেন্দ্রের জবাব পাওয়ার পর পঞ্চম সপ্তাহে এই মামলার শিডিউল তৈরির জন্য বৈঠকে বসবে তিন বিচারপতির বেঞ্চ।
সিএএ ও এন পি আর-এ স্থগিতাদেশ দেওয়া হবে কি না, তা বিচারের জন্য ৫ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। এ ব্যাপারে কোনও হাইকোর্টও যাতে নতুন কোনও মামলা গ্রহণ না-করে, সেই নির্দেশও দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।